নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে নভেম্বরে জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষা তিন ঘণ্টার পরিবর্তে মাত্র এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে সব মিলিয়ে তিনমাস ক্লাস নিতে পারলে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করতে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে সেভাবে প্রশ্ন করার গাইড লাইন তৈরি করে দেবে মন্ত্রণালয়।
করোনাকালীন শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে এরকম প্রস্তাব দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু)। একই ধরনের প্রস্তাব তৈরি করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
করোনা পরবর্তীতে পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে বেডুর চারটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো— সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হলে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত ক্লাস চালিয়ে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে পরের শিক্ষাবর্ষের সরকারি ছুটি কমিয়ে সমন্বয় করা হবে। ছয় মাস ক্লাস নেওয়া সম্ভব হলে পাঠ্য বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক সব না পড়িয়ে বিষয়ভিত্তিক সাম্যক পাঠদান করা হবে। যাতে পুরো শিক্ষাবর্ষের পাঠের সাম্যক ধারণা পেতে পারে শিক্ষার্থীরা।
এক্ষেত্রে এনসিটিবি একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেবে। যাতে লার্নিং আউটকামগুলো অর্জন করা সম্ভব হয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাঠদান শেষে পরীক্ষা নেওয়া।
বর্তমানে করোনা মহামারির পাশাপাশি সারাদেশে বন্যাও চলছে। এ অবস্থায় প্রথম প্রস্তাবের শর্ত পূরণ না হলে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছে এরকম— শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার পাবলিক পরীক্ষা (জেএসসি-জেডিসি) না নিয়ে শুধু এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া। এতে সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করতে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে সেভাবে প্রশ্ন করার গাইড লাইন তৈরি করে দিবে বেডু। অন্তত তিন মাস ক্লাস নেওয়া সম্ভব হলে সেক্ষেত্রে এ রকম প্রস্তাব করা হয়েছে।
জেএসসি-জেডিসি ও সমমানের পরীক্ষাকে সামনে রেখে প্রস্তাবগুলো তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে বেডুর বিশেষজ্ঞ ওবাদুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের যাচাই পদ্ধতিটা এমন হওয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের শিখনগুলো নিশ্চিত হয়, সেজন্য আমরা চার ধরনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের কাজ করতে বলেছেন।’
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এখন সারাদেশে বন্যা হচ্ছে। তাই প্রস্তাব দেয়ার সময় এ বিষয়টিও সামনে ছিল বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সামাজিক, স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভেবে আমরা প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। জেএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে আমরা এ প্রস্তাব করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে জেএসসিকে ফোকাস করে প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে।’
আর তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তিন মাস ক্লাস করা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে স্কুলগুলো বার্ষিক পরীক্ষার মতো একটি পরীক্ষা নেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেবে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই রাখতে হয় সেক্ষেত্রে আর পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না।
সবশেষে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, শেষ পর্যন্ত উপরের একটি প্রস্তাবও যদি বাস্তবায়ন না করা যায় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে অটো-প্রমোশন দেওয়া। আগের ক্লাসের যেসব শিখন ঘাটতি থেকে যাবে সেগুলোকে চিহ্নিত করে নতুন শিক্ষাবর্ষের কারিকুলামের মধ্যেই শিখিয়ে দিতে হবে শিক্ষকদের।
তবে এসব প্রস্তাব এখনো হাতে পাননি বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। হাতে ফেলে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘বেডুর প্রস্তাব এখনো আমি পাইনি। পাওয়ার পর সেগুলো পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পর গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এ সময়ের শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে অনলাইনে ও সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী পাঠের বাইরে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবছে না সরকার।
Discussion about this post