নিউজ ডেস্ক
এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আওয়ামী লীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানের মালিকানাধীন ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’ বিএসএমএমইউতে নকল মাস্ক সরবরাহ করে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় প্রতারণার মামলা করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোজাফফর আহমেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) শাহবাগ এলাকা থেকে শারমিন জাহানকে গ্রেফতার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির মিডিয়া শাখার উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, রাতেই তাকে গ্রেফতার করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, শারমিন জাহান তার গ্রেফতার এড়াতে প্রশাসনের শীর্ষ মহলে যোগাযোগ করেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকারও দেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
জানা গেছে, নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করে বিল তুলে নিতে চেয়েছিলেন শারমিন জাহান। ১১ হাজার এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহ করার কথা ছিল। প্রতিটি ৭৩০ টাকা হিসাবে এর আর্থিক মূল্য ৮০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তিনি প্রথম লট দেন ৩০ জুন, দ্বিতীয় লট দেন ২ জুলাই, তৃতীয় ও চতুর্থ লট দেন ১৩ জুলাই। মোট ৩৪৪০ পিস মাস্ক সরবরাহ করেন তিনি। প্রথম লট দেওয়ার পরই পুরো বিলের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। তৃতীয় ও চতুর্থ লটে গিয়ে নিম্নমানের মাস্কের প্রমাণ পায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। ঐ মাস্কের ফিতা ছিঁড়ে গেছে, মাস্কে ছাপানো ত্রুটিপূর্ণ ইংরেজি লেখা পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মাস্কের মান নিম্নমানের প্রমাণিত হয়। এজন্য ১৮ জুলাই তাকে শোকজ করা হয়। ২০ জুলাই শোকজের জবাবে শারমিন ক্ষমা চান ও দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে তৃতীয় ও চতুর্থ লট ফেরত নেন শারমিন জাহান। বাকি ২৪৭১টি মাস্ক ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা ব্যবহার করেন। পরে বিএসএমএমইউয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য প্রতারণার মামলা করা হয়। উল্লেখ্য, ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’ গত ২৭ জুন বিএসএমএমইউয়ে মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, কারণ দর্শানো নোটিশে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। করোনা মহামারিতে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস চলবে না। এই ঘৃণ্য কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। মামলা দায়ের ছাড়াও ইতিমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন জাহান ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান। গত ২৩ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে এসে চাকরিতে যোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে যোগদান করতে দেয়নি। কারণ তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হয়নি। এর আগে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
Discussion about this post