নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রথম নিয়োগ চক্রে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে নিয়মিত পাঠদান করেও এমপিওভুক্ত হতে পারছিলেন না অনেক শিক্ষক। প্রথম নিয়োগ চক্রে এনটিআরসিএর সুপারিশকৃত শিক্ষকরা বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসায় যোগদান করলেও এ জটিলতায় পরেছিলেন। তাদের এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে রোববার (২৬ জুলাই) এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে, অন্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ৬ মাসের ডিপ্লোমায় এনটিআরসিএর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। শুধু মাত্র ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি ও ৩৮ মে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো প্রযোজ্য হবে না। তারা বকেয়া পাবেন না। তবে, তাদের এমপিওর আবেদনের তারিখ থেকে এমপিও কার্যকর হবে।
জানা গেছে, গত ৯ জুন শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওর জটিলতার সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের সাথে সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সভায় আদালতের নির্দেশনায় ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে এনটিআরসিএর প্রথম চক্রে নিয়োগপ্রাপ্ত আইসিটি শিক্ষকদের জটিলতা নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে আজ ২৬ জুলাই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন রোববার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় জানান, আদালতের নির্দেশে তারা নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছিলেন। কর্মকর্তারা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে শিক্ষামন্ত্রী সামনে উপস্থাপন করেছেন। আদালতের নির্দেশে সুপারিশ পাওয়ায় তাদের বিশেষ পদ্ধতিতে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে আদেশটি মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে এনটিআরসিএ প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবেদন করেছিলেন অনেক প্রার্থী। কিন্তু আইনি জটিলতায় আটকে যায় তাদের নিয়োগ সুপারিশ। জটিলতা নিরসন হলে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে ১ হাজার ৯৫ জনকে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৭ জনকে সুপারিশপত্র দেয়া হয়। তবে তাদের মধ্য থেকে ৩৪৪ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন বলে জানা গেছে। তারা ৬ মাসের ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে ৬ মাসের ডিপ্লোমায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে যোগদানের সুযোগ ছিল। কিন্তু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জারি করা হয় নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো। নতুন সেই এমপিও নীতিমালায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি অথবা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার সায়েন্স বা সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছিল জটিলতা। ৬ মাসের ডিপ্লোমায় যোগদান করায় এসব শিক্ষকের এমপিও আবেদন আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ইএমআইএস সেলে অগ্রায়ন করছিলেন না।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও মামলার কারণে নিয়োগ সুপারিশ কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করা হয়নি। মামলা সম্পন্ন হয়ে গেলে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রায়ের আলোকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো নির্দেশিকা মোতাবেক ফল চূড়ান্ত করা হয়। মামলার রায় অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি বা সমমান এবং সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার বিষয়ে ন্যূনতম ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণযোগ্য হয়। সে প্রেক্ষিতে কম্পিউটার বিষয়ে ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণধারীরাও নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ মামলার রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা কেবলমাত্র ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রার্থীদের বেলায় প্রযোজ্য হবে, তার পরবর্তীদের বেলায় নয়।
Discussion about this post