অনলাইন ডেস্ক
ভিন্ন পেশার অনভিজ্ঞ মানুষদের মৌসুমি ব্যবসায়ী হিসাবে আবির্ভাবের সুযোগে কারসাজিতে মেতে ওঠে আড়ৎদারদের সিন্ডিকেট। আর এতেই দেশের চামড়া শিল্পে বারবার ধস নামছে। এবারও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে অন্তত সাড়ে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চট্টগ্রামের চামড়ার বাজার থেকে।
হাটহাজারী কাটিরহাট এলাকার রিকশাচালক বিপ্লব মিয়া চামড়া ব্যবসায় নেমে সর্বস্ব হারিয়ে এখন কাঁদছেন। না বুঝেই গ্রাম থেকে চড়া দামে চামড়া কিনে শহরে এসেছিলেন বিক্রি করতে। প্রতি পিস ২০ টাকা দরেও বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিতে হয়েছে সেই চামড়া।
রিক্সাচালক বিপ্লব মিয়া বলেন, ‘গাড়িতে থাকতে ১০০ টাকা বলছে। গাড়ি থেকে নামানোর পর আর কোনো দাম বলে না কেউই।’
তার মতো শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েন চামড়া ব্যবসা করতে এসে। মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনভিজ্ঞতার সুযোগে চামড়ার দর নিয়ে কারসাজিতে মেতে উঠেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম মদিনা ট্যানারি পরিচালক মোহাম্মদ শিপন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় চামড়াগুলো বিক্রি করে না। নিজেদের মধ্যে রেখে দেয়।’
চলতি বছর ঈদের দিন গ্রাম কিংবা পাড়া মহল্লা থেকে ৪শ টাকা দরে চামড়া কেনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আবার সেই চামড়া খুচরা বাজারের মধ্যসত্ত্বভোগীরা নামিয়ে আনে মাত্র দু’শ থেকে আড়াইশ টাকায়। কিন্তু আড়ৎদাররা সেই মধ্যসত্ত্বভোগীদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছে অন্তত ৫শ টাকা দরে। সংগৃহীত আড়াই লাখ পিস চামড়া আড়তে এসেছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের মাধ্যমে।
অভিযোগ রয়েছে, নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী, ষোলশহর দু’নম্বর গেইট এবং মুরাদপুরের খুচরা বাজারের মধ্যসত্ত্বভোগীরা আড়ৎদারদের এজেন্ট হয়ে কাজ করে। আগে থেকে টাকা দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত করা হয় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে কম দামে চামড়া কিনতে।
তবে দাম নিয়ে এ কারসাজির জন্য ঢাকার ট্যানারি মালিকদের দোষারোপ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়ৎদার সমিতি আহবায়ক মাহবুব আলম বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা যদি দামটা আমাদের ভালো করে দিত তাইলে আমরা ভালো দামে কিনতে পারতাম।’
চট্টগ্রামে আড়ৎদার সমিতিভুক্ত মাত্র ১১২ জন চামড়া ব্যবসায়ী থাকলেও তাদের সহযোগী হিসাবে রয়েছেন আরো অন্তত দেড়শোজন। তারাই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের আড়ালে রেখে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন।
Discussion about this post