আহমেদ উল্লাহ্
পঞ্চবটি এসে বাস থেকে নেমে পথের পাশে দাঁড়াল আশিক, আশপাশে তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে থাকল ও…
কিছুক্ষণ খুঁজে রিকশা না পেয়ে, হেঁটেই বাড়িতে যাবে বলে স্থান ত্যাগ করে। দুএক পা এগিয়ে যাবার পর হঠাৎ ওর দৃষ্টি কেড়ে নিলÑ পঞ্চবটিতে অগণিত মানুষের ভিড় আর মানুষের হইচই কোলাহল! বাড়ির পথ ছেড়ে সমাগত ওই লোকদের দিকে পা বাড়াল আশিক…
চারদিক লোকারণ্য। নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী কোনো ভেদাভেদ নেই। এমন শেষবিকেলে এখানে বহুলোকের সমাগম দেখে আশিক হতবাক! একজনকে এর কারণ জিজ্ঞেস করে জানা গেলÑ এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার এভাবে লোকের জামায়েত হয়। মজনু ফকির সোলেমান শাহ্’র মাজারকে কেন্দ্র করে মনের কামনা-বাসনার পুরণের মানত নিয়ে লোক এসে এভাবে ভিড় করে থাকে।
মানুষের ভিড় ঠেলে সামনে এগোতে থাকে আশিক। উপচেপড়া মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মানুষের উৎফুল্ল গতায়ানে!
প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই বিচিত্র মানুষের পদচারণায় মেতে ওঠে পঞ্চবটি। হইচই কোলাহল থাকে মধ্যরজনী পর্যন্ত। কাঁঠালিয়া নদীর বাঁক থেকে একটি শাখা নদী আরেকটি বাঁক নিয়ে তিতাস নাম ধরে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। পঞ্চবটির পাশ ঘেঁষে নদীটি বহুবাঁকে চলে গেছে জয়পুরের দিকে।
পঞ্চবটি কোনো গ্রাম নয়, পাড়াও নয়; কেবল সামান্য একখÐ ভূমির নাম। মাথাভাঙ্গার দক্ষিণপ্রান্তে তিতাসতীরে কয়েক বিঘা জমির জায়গাটি পঞ্চবটি নাম ধারণ করে ধূপ-ধুনোয় ধন্য হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে! অনেকে পঞ্চবটিকে তুলসী ঘাট বলেও সম্বোধন করে। একসময় এখানে তুলসী গাছের ঝোঁপঝাড় ছিল, এখন অবশ্য চোখে পড়ে না।
এখানে নেই তেমন লোকবসতি, নেই ব্যক্তি জীবনের পারস্পরিক দ্বন্ধ সংঘাত।
আছে কয়েকটি বটবৃক্ষের একচ্ছত্র শীতল ছায়া আর ওই ছায়াতলে নিত্য বেজে
ওঠে ত্যাগী মানুষের বিদগ্ধ চিত্তের আত্ম-উল্লাস!
দুজন মুক্ত-ত্যাগী পুরুষের সমাধীকে বুকে আগলে ধরে পঞ্চবটি নিত্য মেতে আছে হাসি-কান্নায়। এখানে শায়িত আছেন পরমাত্মার সান্নিধ্য লাভের যুদ্ধে বিজয়ী সাধক ফকির সোলেমান শাহ্ এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে জীবন বিলিয়ে দেয়া শহীদ মনির।
গর্বিত আত্মতৃপ্তির গৌরবাহ্নিত মুকুট মাথায় পরে মনির ঘুমিয়ে আছে শীতল ছায়াতলে! বটপত্র নিত্য ব্যজন করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে! আর তিতাসের জলেভেজা ¯িœগ্ধ সমীরণ প্রবাহিত হয় যুদ্ধক্লান্ত বীরের ঘুমপ্লুত দেহে!
শহীদ মনির একাত্তরের যুদ্ধে শহীদ হন। দশম শ্রেণির ছাত্র মনির বীরবেশে যুদ্ধ করতে গিয়ে জীবন বলি দেয় মাতৃভূমি রক্ষার লড়াইয়ে।
মনিরের পিতা সাহেব আলীর সংসার তখন নিত্য লড়াই করে যেত অভাব-অনটনের বিরুদ্ধে…
ডাকপিয়ন সাহেব আলীর জীবন বেশ কষ্টেই অতিবাহিত হয়েছিল। সহায় সম্পত্তি বলতে ভিটেবাড়িটি ছাড়া কিছুই ছিল না। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পোষ্ট অফিসে পিয়নের চাকরিটি। ডাক পিয়নের চাকরি করে কয় টাকাই-বা মায়না পায়! ঘরে স্ত্রীসহ চার পুত্র এবং এক কন্যা। দৈনিক পেটের চাহিদা মেটাতেই সাহেব আলী ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তবুও যা রোজগার হতো, তা-ই দিয়ে কোনোমতে বেঁচেবর্তে দিন কাটাতেন। সন্তানদের লালন পালন করতে গিয়ে একসময় ভিটেবাড়িটিও বিক্রি করে দিতে হয়েছিল তাকে।
নিজ গ্রাম যাত্রাপুরের মাটির সঙ্গে নাড়ীর সর্ম্পক চিরতরে ছিন্ন হওয়ার পর স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে হোমনার গোয়াল পাড়ায় এসে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে মাথা গুজানোর ব্যবস্থা করে। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে কায়ক্লেশে দিনযাপন করতে থাকেন তিনি …
সাহেব আলী বড়ই আশায় বুক বেঁধে ছিলেনÑ লেখাপড়া শেষ করে ছেলেরা অর্থোপার্জন করবে, সংসারের অভাব দূর হবে!
দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতে তিন পুত্রের লেখাপড়ার দৌঁড় মাধ্যমিক পর্যায়েই যবনিকার পর্দা পড়ে। তারা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে কাজে নিয়োজিত হয়।
কনিষ্ট পুত্র মনির। তাকে অন্তত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করাবেন বলেই সাহেব আলীর মনের আশা। মনির তখন হোমনা সরকারি হাই স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র। অবশ্য স্কুলটি তখন জাতীয়করন হয়নি। ছাত্র হিসাবে খুব মেরিটোরিয়াস না হলেও, লেখাপড়ায় তার মনোযোগ খুবই ভালো।
লেখাপড়া শেষ করে একদিন অনেক বড় হবে। এমন আশা বুকে নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে থাকল মনির। এরই মধ্যে দেশজুড়ে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। পরাধীন জাতির শৃঙ্খল ভাঙার যুদ্ধ, রক্তচোষা জানোয়ারের গ্রাস থেকে মুক্তির যুদ্ধ! শত্রæর গুলিতে নির্বিচারে মরছে মানুষ! রাতের আঁধারে শত্রæদল ঘরে এসে পুরুষদের হত্যা করে, নারীদের ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে!
রক্তচোষা পাকদের রাহুগ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য বাঙালি মরিয়া হয়ে ওঠে। কোথাকার বিনদেশী পাকিস্তানিরা এসে এদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিবে? নির্বিচারে এদেশের মানুষ হত্যা করবে, এতবড় স্পর্ধা! মনিরের গায়ের রক্ত গরম হয়ে
ওঠে!
একদিন রাতে খাবার খেতে বসে হঠাৎ গোলাগুলির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে মনির!
প্লেটের অর্ধেক ভাত খেয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে মনির বলে, মা, শুনছো, কী ভয়ঙ্কর গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে!
হ, হুনতাছি। তাড়াতাড়ি খাইয়্যা গিয়া ঘুমাইয়্যা পড়। মা বললেন।
মায়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মনির, বলল, এভাবে শত্রæরা এসে মানুষ হত্যা করলে, চোখে কি ঘুম আসে মা? বরং রক্ত গরম হয়ে ওঠে!
কে মরল, কার কী হইল এইসব দেইখ্যা আমাগো মাথা ঘামাইবার দরকার নাই, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। তাড়াতাড়ি খাইয়্যা ওঠ, আমি বাতি নিভাইয়্যা দ্যমু। ঘরে আলো দেখলে কোনসময় আবার মেলিটেরি আইস্যা ঘরে ঢুইক্যা যায়, কওন যাইব না।
হাত ধোয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে মায়ের হাত চেপে ধরল মনির, বলল, আম্মা, আম্মা গো…
বিস্ময়াভূত চাহনিতে তাকিয়ে থাকল মা, বলল, ক, কী কইত্যে চাস?
আমি যুদ্ধে যামু।
আৎকে ওঠে মা বলেন, না, না বাজান! আমাগো যুদ্ধে যাওনের দরকার নাই। গরিবের আবার যুদ্ধ কিসের! আমরা তো পেটের লগে যুদ্ধ কইর্যাই মইর্যা যাইত্যাছি…
মায়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মনির বলল, আমাকে বাধা দিয়ো না মা। আমাকে ছাড়াও তোমার আরও তিনপুত্র ঘরে আছে। দেশের জন্য একপুত্রকে না হয় কোরবানি দিয়া দিলা!
এমন কুলক্ষèী কতা কইস না বাজান! তাড়াতাড়ি খাইয়্যা ঘুমাইয়্যা পড়। দেশে এত মানুষ থাকতে, তুই ক্যান জীবন দিতে যাবি!
দেশ না বাঁচলে, আমরা বাঁচমু কেমন করে! শত্রæর পায়ের তলে মাথা নত করে বেঁচে থাকার চাইতে, যুদ্ধ করে জীবন দেয়া অনেক মহত্বের।
বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে পুত্রের মাথায় হাত বুলিয়ে মা বললেন, তুই এমন পাগলামি করিস না বাজান! তরে যুদ্ধের ময়দানে পাঠাইয়্যা আমি ঘরে থাকমু ক্যামনে? মা হইয়্যা তরে আমি মৃত্যুর সামনে ক্যামন কইর্যা ঠেইল্যা দ্যমু, ক দ্যহি?
মায়ের হাতটি মাথা থেকে নামিয়ে মনির বলল, এমনি পরাধীনতার শেকল পায়ে লেগে আছে যুগ-যুগ ধরে! সেই শেকল ভাঙতে আজ হাজারো বীর বাঙালি মায়ের কোল ছেড়ে যুদ্ধে নেমেছে। শত্রæর বুলেটে মারা যাচ্ছে বীরমাতার সন্তানেরা! ওদের জন্য তোমার বুক কি এতটুকুও কেঁদে ওঠে না মা? ওরা তো তোমার মতো এমন মায়েরই সন্তান!
মায়ের সজল চোখদুটি নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে পুত্রের দিকে! মাকে নির্বাক তাকিয়ে থাকতে দেখে মনির বলল, চির বন্দীর শেকল ভাঙতে যাওয়া বীরকে মায়ার শেকলে বেঁধে রাখতে চেয়ো না, আমার সহ্য হয় না মা। অসভ্য বর্বর শত্রæদের বাহাদুরি দেখে মাথাটা গরম হয়ে ওঠে! অস্পষ্ট স্বরে একথা বলতে বলতে দগ্ধ অভিমানে মায়ের কাছ থেকে অন্যঘরে চলে গেল মনির ।
রাত গভীর! সাড়া-শব্দ নাই। মাঝেমধ্যে কোন সুদূর থেকে ভেসে-আসা মর্টার, এলএমজির গুলির শব্দে নিঃশব্দ রজনী কেঁপে ওঠে! ঘুমন্ত মানুষ আতঙ্কে জেগে ওঠে গুলির গগনবিদারী আওয়াজে! মনিরের চোখে ঘুম নেই! এক অদেখা অপরাধবোধ তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে!
শত্রæরা ঘরে এসে মানুষ মারবে, আর আমি বসে বসে তা শুনবো? তা হবে না। দেহে প্রাণ থাকতে তা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। আমি যুদ্ধে যাব-ই…
শুয়ে শুয়ে মানির ভাবছে কখন রাত পোহাবে! ভোর হলেই মুক্তিবাহিনীতে গিয়ে যোগ দিবে মনির! প্রকৃতির বুকে ঊষার আহ্বান জেগে ওঠার আগেই শোয়া থেকে উঠে বসে মনির। জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখে ভোরের আলো ফোটে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে! আর বিলম্ব না করে, কাউকে কিছু না বলে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরুল মনির।
মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে নিজের নাম লিখিয়ে, প্রশিক্ষণের জন্য সেদিনই কসবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে গেল ভারতে।
প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হায়েনার বিরুদ্ধে বীর বাঙালির মুক্তির যুদ্ধ, বেঁচে থাকার যুদ্ধ…! একটি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার যুদ্ধ; পশুর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ!
সেই বিষণœ রাতের তখনো ভোর হয় নি! ঊষার আহŸানে রাতের ঘন আঁধার ধীরে ধীরে লুকাতে শুরু করছে প্রভাত কিরণে। ¤øান হতে শুরু করল নক্ষত্রের কিরণমালা। আঁখ খেতের আড়াল থেকে শৃগালের দল অশুভ স্বরে চিৎকার করে ওঠে! ভোরের আলো মৃদুমন্দ ফোটে ওঠার আগেই দেখা গেল, একটি লঞ্চ কাঁঠালিয়া নদী থেকে বের হয়ে তিতাসের ঢেউহীন জলের ওপর দিয়ে শব্দহীন বেগে ছুটে আসছে পূর্বদিকে।
পঞ্চবটির দিকে আসার পথে, কিছুটা দূরে থাকতেই মুক্তিযোদ্ধারা সর্তক অবস্থান নেয়। পঞ্চবটি এবং নদীতীরে ব্যাঙ্কারে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা লঞ্চের দিকে অস্ত্র তাক করে বসে থাকল..
লঞ্চটি পঞ্চবটির নিকটে আসার আগেই ব্যাংকার থেকে বুলেট বিস্ফোরণ শুরু হলো। নদীর দুই তীরে মুক্তিবাহিনী থাকার আশঙ্কায় শত্রæদল গুলি ছোড়তে ছোড়তে এগিয়ে আসতে থাকে…
এদিকে পঞ্চবটি এবং নদীর দুই তীরস্থ ব্যাংকার থেকে মুক্তিবাহিনীর এলএমজির বুলেট বৃষ্টির মতো নিক্ষেপ হতে লাগল পাকবাহিনীর লঞ্চের দিকে…
দু পক্ষের মধ্যে প্রচÐ গোলাগুলি। রাইফেল, এলএমজির গর্জে ওঠা গুলির বজ্র-নিনাদে ভোরের পৃথিবী কেঁপে ওঠল! ঘুমন্ত মানুষ আচমকা ঘুম থেকে আৎকে ওঠে যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে থাকল…
ব্যাঙ্কারে লুকিয়ে যুদ্ধ করার সময়, মনির একসময় অতিশয় উত্তেজিত হয়ে পড়ে!
এলএমজি হাতে নিয়ে ব্যাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসে। নদীতীরে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে গুলি চালায় শত্রæদের লক্ষ্য করে…
দু পক্ষের তীব্র গোলাগুলির মাঝে হঠাৎ মনির গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাতের অস্ত্র ছিটকে পড়ে নদীর তীরে! পানি থেকে পুনরায় ওঠে এলএমজি হাতে তুলে নিতে চাইল মনির।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের দুষ্টচক্রে বোয়াল মাছের বড়শিতে ওর পা আটকে গেল! পানিতে পড়ে দাপাদাপি শুরু করে মনির! শত্রæর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিবেদিত বীরকে এসে জড়িয়ে ধরেছে আরেক শত্রæ! বড়শি থেকে মুক্ত হবার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে মনির, অথচ কিছুতেই বড়শি থকে মুক্ত হতে পারে নি…
এমন সময় শত্রæর বজ্রসম একাধিক ব্রাশ ফায়ারে মনিরের দেহ ঝাঁঝরা হয়ে গেল! বীরের তাজা রক্তে তিতাসের জলরাশি লাল হয়ে উঠল! আর বাংলার ভোরের প্রকৃতি বীর সন্তান হারানোর শূন্যতায় গোপনে নীরবে কেঁদে উঠল!
পঞ্চবটিতে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণ পাকবাহিনীর গতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। কয়েক ঘণ্টা অবিরত যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর বাধা অতিক্রম করে, লঞ্চটি তিতাসের বুক বেয়ে দ্রæত জয়পুরের দিকে চলে যায়। লঞ্চটি পঞ্চবটি ত্যাগ করার পর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসে। মনিরের রক্তভেজা প্রাণহীন দেহ পানিতে ভেসে থাকতে দেখে, সবাই তীরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকল…!
যুদ্ধে শহীদ হওয়া বীরের শূন্যতা গর্বচিত্তে বুকে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধারা, মনিরের লাশ তুলে আনে তীরে। দগ্ধ চিত্তের হা-হাকারে সিক্ত পুস্পমাল্য পরিয়ে, রক্তভেজা মনিরের লাশ দাফন করা হয় পঞ্চবটির ছায়াতলে!
তিতাসের জলে ঝরে-পড়া শহীদ-রক্তের বাষ্প-কুয়াশা, আর মুক্ত বাঙালির হাতে স্বাধীন পতাকা দেখে, আজও মনির আত্ম-উল্লাসে হেসে ওঠে গোপন গোরের জগতে!
Discussion about this post