নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম আজ শুরু হলো। ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে ভালো মানের কলেজে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার আসন থাকলেও এবার এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ জন্য ভালো ফল পেয়েও সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনেকে একাধিকবার আবেদন করেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারে না। আর এদের অধিকাংশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
তবে এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড বলছে, এবার পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আসন আছে ২৫ লাখের বেশি। আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী এবার পাস করেছে সে তুলনায় প্রায় দেড়গুণের বেশি আসন রয়েছে। তাই ভর্তিতে খুব একটা সমস্যা হবে না।
এবার সাধারণ নয় বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও এক লাখ ২৩ হাজার ৪৯৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৫১৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৮৮৫ জন। মাদরাসা এবং কারিগরির বোর্ডের বড় একটি অংশ উচ্চ মাধ্যমিকে সাধারণ বোর্ডের অধীনে ভর্তি হয়। ফলে কলেজগুলোতে ৯টি সাধারণ বোর্ডের বাইরেও প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি আবেদন পড়তে পারে। এর ফলে প্রথম সারির কলেজগুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েও ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এতে ভর্তির সুযোগ পাবে না।
গত কয়েক বছরে অনলাইনে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন বেশি পড়েছে সে হিসাবে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৭৫টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ৩২টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, রাজশাহী বিভাগে সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯টি, খুলনা বিভাগে ১৩টি এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। এসব কলেজে স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের বাইরের অন্য দুই শিক্ষা বোর্ড থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করবে।
রাজধানী ঢাকায় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য আসন রয়েছে প্রায় ৫০ হাজারের মতো। এর মধ্যে ভালো মানের ২০-২২টি কলেজে আসন রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন। আবার জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৫ জন।
সে হিসাবে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ফলে ভালো ফলাফলের পর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজধানীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি থাকবে। একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে মাদরাসা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্যও। সব শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন থাকলেও প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না সবাই।
এর মধ্যে শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুললে নতুন করে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিও রয়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারবে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আবার প্রথম সারির কলেজগুলোতে ভর্তি করাতে না পারলে সেটিও সন্তানদের উপর প্রভাব ফেলবে। এ নিয়ে উভয়সংকটের মধ্যে রয়েছে শহরের অভিভাবকরা।
আবার করোনার কারণে পরিবারের আয়ও কমে গেছে। তাই গ্রাম থেকে এসে শহরে বাসা নিয়ে থেকে পড়াশোনা করা সম্ভব হবে না অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শহরের বাসা-মেস ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। বন্ধের মধ্যে মেস ভাড়া দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীর সনদপত্রসহ জিনিসপত্র ফেলে দিছেন বাড়ির মালিকরা। এমন অবস্থায় শহরের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তির জন্য বেছে নেয়ার আগে ভাবতে হচ্ছে।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আরো জানান, ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। ভর্তি-সংক্রান্ত কোনো জটিলতায় পড়লে জীবন ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের ধরনা ধরতে হয়। পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে ব্যর্থ হলে অনেকের পড়ালেখায় মন ভেঙেছে। ভালো কলেজের সংখ্যা ও আসন সংখ্যা কম হওয়ায় পছন্দের কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, সবাই যে নিজের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না এটা ঠিক আছে। তবে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করেছে তাদের চেয়ে আসন অনেক বেশি আছে। এর মধ্যে কিছু ড্রপআউট হবে। কিছু বিদেশ চলে যাবে। সব মিলিয়ে দেড় দুই লাখ থাকবে না।
তিনি বলেন, শুধু শহরমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো সেরা হবে এমনটা না। গ্রামেও ভালো করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের তদারকি ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ খুবই জরুরি। আমরা সেটি নিশ্চিয়তায় কাজ করছি।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবেদনে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি দেখা দিলে অনলাইনের মাধ্যমে কীভাবে তা শিক্ষার্থীরা সমাধান করতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে জেলা ও জেলার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক একরামুল কবিরের মতে, কয়েক ধাপে আবেদন করেও অনেকে শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায় না। এক্ষেত্রে ভালো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সুবিধামতো বদলির সুযোগ রাখা প্রয়োজন, এতে সেসব প্রতিষ্ঠান মান বাড়বে, শিক্ষার্থীরা সেখানে যেতে আগ্রহী হবে।
Discussion about this post