সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা ১৯৯৪ সাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিভাগীয় পদোন্নতি হতে বঞ্চিত। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি ও আন্দোলন সংগ্রামও হয়েছে। এই পদোন্নতির বিষয় নিয়ে যখনই আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করতে গিয়েছি।
তখনই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বলতেন শিক্ষকেদের আবার পদোন্নতি কিসের? এটা মহান পেশা আপনারা ওখানেই থাকেন আপনাদের পদোন্নতির কোন প্রযোজন নেই। অথচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবার ক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে। কিন্তু আমাদের বেলায় বিধিবাম। দুঃখের বিষয় আমরা আজও সে জট থেকে এখনোও বের হয়ে আসতে পারি নাই।
যখন আমাদের সিনিয়র সচিব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়ে এলেন তখন থেকে আমরা প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে শুরু করেছি। তিনি আমাদেরকে বারবার বলেছেন, আমি প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নতুন যুগোপযোগী মানসম্মত একটা নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরি করার জন্য হাত দিয়েছি। এই নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরি হয়ে গেলে আপনাদের পদোন্নতির জট দূর হয়ে যাবে। আমরা এতোদিন সেই আশাতেই ছিলাম।
সিনিয়র সচিব যখন খসড়া নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের জন্য প্রস্তাবনা চাইলেন তখন আমরা প্রধান শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল ও বয়সের সীমা তুলে দেয়ার প্রস্তাবনা পাঠায়। আমরা প্রধান শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ বিধিমালার অপেক্ষায় ছিলাম। নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরি হয়ে গেলে আর আমাদের পদোন্নতির কোন সমস্যা থাকবে না।
অথচ গতকাল ১১ আগষ্টে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় দেখলাম নতুন নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রী পরিষদে পাঠানো হয়েছে, সেখানে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এটাই যদি হয় তাহলে প্রধান শিক্ষকের আদৌও পদোন্নতির কোন সুযোগ থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
কেননা এখন থেকে সরাসরি আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে না। এ কারণে সহকারী শিক্ষকদের সহপ্রধান হয়ে প্রধান শিক্ষক হতে তার বয়স পঞ্চাশের উর্ধ্বে চলে যাবে। তাদের আর পদোনতির কোন সুযোগ থাকবে না। আমরা যারা সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেছি আমাদের সবার বয়স ৪৫ বছরের উপরে চলে গেছে।
প্রধান শিক্ষকদের সরাসরি সর্বশেষ নিয়োগ হয় ২০১৩ সালে। তাদেরও ১/২ বছরের মধ্যে বয়স ৪৫ বছর পার হয়ে যাবে। তাহলে আমাদের পদোন্নতির সুযোগ কোথায়?
সব ডিপার্টমেন্টে যদি চাকরির শেষদিন পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ থাকে তাহলে আমাদের বেলায় নেই কেন? বিভাগীয় পদোন্নতিতে আবার পরীক্ষা কিসের? আমরা তো পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছি। তাহলে পদোন্নতিতে দ্বিতীয়বার আবার পরীক্ষা কিসের?
AUEO, UEO, ADPEO, DPEO এর পদোন্নতিতে তো কোন প্রকার পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। তাহলে প্রধান শিক্ষকদের বেলায় কেন এই কালো আইন ও বিমাতাসুলভ আচরণ? আমরা এই কালো আইন বাতিলের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি এবং চাকরির শেষদিন পর্যন্ত বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ যেন রাখা হয়। এ বিষয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে প্রধান শিক্ষকদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সবাইকে একসাথে বসার জন্যও অনুরোধ করা হলো।
এই কালো আইন বাতিল না করা পর্যন্ত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির মাধ্যমে প্রচার ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আপনারা প্রস্তুত থাকুন। এখানে সহকারী শিক্ষকদের স্বার্থও জড়িত আছে। কেননা প্রধান শিক্ষক পদ শুন্য না হলে আপনারা যাবেন কোথায়? তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের সাথে কাজ করতে হবে।
নতুবা আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে থেকে পঁচতে হবে।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি
Discussion about this post