শোকের মাস আগস্টের ১৫ তারিখে দুনিয়ার নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু জাতির জনককে আমরা হারিয়েছি, যার জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না এবং আজও আমরা পাকিস্তানের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ থাকতাম। তাঁর মতো দৃঢ়তায় কে আর শুনিয়েছে স্বাধীনতার কথা! মুক্তির যুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে কে আর এমন ইতিহাসে? তাঁর থেকে কে আর বেসেছে ভালো বাংলাদেশকে! বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র বিপ্লব ঘটিয়েছেন, সমাজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তিনি পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে বিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি পশ্চাৎপদ পাকিস্তানি চিন্তার সমাজে বিপ্লব ঘটিয়ে আধুনিক বাঙালি জাতির সমাজ সৃষ্টি করেছিলেন। আর এসব বিপ্লবের প্রতি পদক্ষেপে তিনি তাঁর নিজের জীবনে ঘটিয়েছেন বিপ্লব। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব হয়ে উঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে। এই আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অত্যাচার, নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। বার বার তাকে হতে হয়েছে মৃত্যুর মুখোমুখি। যখন বলতেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না’, মানুষ তাই বিশ্বাস করতো। ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। প্রিয় মাতৃভূমিকে শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করে, বাঙালিরা যাতে বাংলাদেশের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে সেজন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেই তিনি রাজনীতি করেছেন।
সারা জীবন জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। জীবনের-যৌবনের ১২টি বছর কারান্তরালে কাটিয়েছেন। কোনোদিন মাথানত করেননি। স্বাধীনতার পর বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘And when you see them digging a grave and you think of everything you will have to leave behind you, do you think of your country or, for instance, of your wife and children first?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘I Feel for my country and my people and then my family. I love my people more. I suffered for my people and you have seen how my people love me’. সাগর-মহাসাগরের গভীরতা পরিমাপ করা যায়, কিন্তু দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা অপরিমেয়। আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।’ বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ বিশ্বে বিরল। যেখানেই গিয়েছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর ৫৫ বছরের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত খেয়াল করলে দেখা যাবে, তিনি প্রতি মুহূর্তে কাজের মাধ্যমে, চিন্তার মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছেন, উচ্চতা থেকে আরও উচ্চতায় নিচ্ছেন নিজেকে। তাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সব থেকে বড় উপায় হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে নিজের জীবনে ধারণ করা। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সহস্র দিক আছে, যা বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কাজের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোকে উপলব্ধি করে নিজ জীবনে ধারণ করাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানানোর পথ।
Discussion about this post