ক্রীড়া ডেস্ক
লিওনেল মেসিকে নেওয়ার জন্য বড় বড় ক্লাব লাইন দিয়ে আছে। আকাশছোঁয়া ‘বাইআউট ক্লজ’ এই ক্লাবগুলোর কাছে বিষয় নয়, তাদের সংশয় মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চান কি না। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, গত শুক্রবার চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে চূর্ণ হওয়ার পর মেসি সব মোহ আর সংশয় ঝেড়ে ফেলেছেন। বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, চুক্তির আর একটি মৌসুম বাকি থাকলেও এই গ্রীষ্মেই ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে চান ছয়বারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী।
ব্রাজিলের এস্পোর্তে ইনতারেতিভোর দাবি, ক্লাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব দেখে মেসি হতাশ এবং তাদের আগামী ক্রীড়া পরিকল্পনার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন, তাই তাৎক্ষণিকভাবেই ক্লাব ছাড়তে চাইছেন।
এস্পোর্তে ইনতারেতিভোর প্রতিবেদেন অনুযায়ী ২০১৫ সালে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর এবারই প্রথম আবার জয়ের আশায় উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন মেসি। কিন্তু শুক্রবার তার সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন, আগে কখনোই এমনটা তিনি থাকেননি। ব্রাজিলের এই পত্রিকার প্রতিবেদনকে অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন এ কারণেই যে, এই পত্রিকাই ২০১৭ সালে নেইমারের প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ে যাওয়ার খবর দিয়েছিল প্রথম।
গত মাসে ২০১৭ সালের পর বার্সেলোনার হাত থেকে লা লিগা শিরোপা প্রথম রিয়াল মাদ্রিদের হাতে যাওয়ার পরও এমন মুষড়ে পড়েছিলেন মেসি। ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মুখর হয়েছিলেন ক্লাবের সমালোচনায়। বলেছিলেন ক্লাবের খোলনলচে বদলানোর সময় হয়েছে। সহখেলোয়াড়দের উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন এই বলে যে চ্যাম্পিয়নস লিগে ভালো কিছু করতে চাইলে লিসবনে অনেক ভালো খেলতে হবে। কিন্তু মেসি-উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে নাপোলি-বাধা পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েই কঙ্কালসার চেহারাটা বেরিয়ে পড়লো বার্সেলোনার। বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়নদের কাছে হারলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে। এটা মেসির জন্য বড় হতাশার। আর গত ১২ মাস ধরে ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ও তার অনুসারী বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে লড়াই করতে করতে অনেকটা ক্লান্তও হয়ে পড়েছেন। ক্লাবটি যে সঠিক লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে না, এটি তিনি বলে আসছেন সেই কবে থেকে।
ম্যানচেস্টার সিটিই মেসিকে সাইন করানোর দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে-এমন খবর বেরোনোর পর পরই ব্রাজিলিয়ান পত্রিকার এই সংবাদটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
আগের দিন দ্য মিরর দাবি করে, মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চাইলেই যত টাকা লাগুক ম্যানচেস্টার সিটি তাকে তার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলার কাছে এনে তুলবেন।
তবে মেসিকে নিতে চাইলে ইতালির ইন্টার মিলানের সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতা হবে ইংলিশ রানার্সআপ ক্লাবটির। কারণ ইন্টারের সাবেক পরিচালক মাসিমিলানো মিরাবেলি মনে করেন মেসিকে সাইন করানোটা তার ক্লাবের চোখে ‘স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু’।
এদিকে স্কাই স্পোর্টসের ফুটবল বিশেষজ্ঞ গ্রায়েম সাউনেসের বিশ্বাস, নাটকীয়ভাবে মেসি সাইন করতে পারেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ’৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টিনিয়ানের জন্য প্রস্তাব দেওয়ার জন্য এই সপ্তাহটি হবে আদর্শ। আমি তো তাকে সহজেই ম্যানচেস্টারে খেলতে দেখতে পারছি- হয় ইউনাইটেডে অথবা সিটিতে।’
পুরো পেশাদার ক্যারিয়ারটাই বার্সেলোনায় কাটিয়ে দিলেও যেহেতু আর একবছর বাকি আছে চুক্তি, তাই বার্সেলোনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথটা হয়তো দেখছেন তিনি নিজেই। চুক্তির ধারা অনুযায়ী প্রতিটি মৌসুমের শেষেই ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়ার সুযোগ মেসির আছে। আর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে মে মাসের শেষেই।
মেসির ৬৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ‘বাই-আউট ক্লজ’টা অনেক ক্লাবের জন্যই মাথাব্যথার। তবে কে বলতে পারে, বার্সেলোনা গ্রীষ্মকালীন দলবদলে নতুন কিছু খেলোয়াড় কেনার জন্য তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদকে উৎসর্গ করবে না!
স্প্যানিশ দৈনিক মুন্দো দেপোর্তিভোর দাবি, বার্সেলোনা মেসি ও আর চারজন খেলোয়াড়কে ছাড়তে চায় না। কিন্তু মেসি যদি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হন, কে তাকে আটকাতে পারে?
Discussion about this post