বিশেষ প্রতিবেদক
রাজনীতি করেন অনেকেই, কিন্তু রাজনীতিবিদ হওয়া সহজ কথা নয়।কতজন কতভাবে নেতা বনে যান, স্বার্থ হাসিল করতে নিজকে নিজেই নেতা ঘোষণা করেন! কিন্তু না পান জনগণের বিশ্বাস না পান আমজনতার ভালবাসা। সে বিবেচনায় একেবারেই ব্যাতিক্রম আমাদের তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। সাম্প্রতিক করোনার নিদানকালে তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ছাত্রনেতা থেকে কিভাবে জননেতায় পরিণত হন ড. হাছান মাহমুদ তার উদাহরণ। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে অদ্যাবধি কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ়তায় প্রতিটি সেক্টরে সফলতার ছাপ রেখে চলেছেন চট্টগ্রামের এ সন্তান।
দল ও সরকারে সমানতালে কাজ করছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি। করোনা সংকটে জীবন ঝুঁকি নিয়েই নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
যার ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন নেতা হিসেবে তিনি স্বীকৃত। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও স্নেহভাজন নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
এক-এগারো সরকারের সময় শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ওই সময়ে শেখ হাসিনার সুনজরে আসেন তিনি। এরপর দল ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
যার কারণে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হন ড. হাছান মাহমুদ। দুটি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় দেন তিনি। যার কারণে তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং দলীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন করে পুরস্কৃত করেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে দুটি পদেই সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
করোনা সংকটে নানা অজুহাতে অনেকেই যখন ঘরে বসে আছেন। কিন্তু হাছান মাহমুদ একদিনও ঘরে বসে থাকেননি। প্রতিনিয়ত মন্ত্রণালয়ের কাজে সক্রিয় ছিলেন। করোনাকালীন অন্য পেশার মতো গণমাধ্যমকর্মীরাও অসহায় হয়ে পড়েন।
অনেকেই বেতন-ভাতা এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। ঠিক সে সময়ে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল প্রদানের উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সাংবাদিকদের নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেন।
মন্ত্রী হলেও দলীয় কাজে এতটুকুও অমনোযোগী নন ড. হাছান মাহমুদ। করোনা পরিস্থিতিতে দলের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছিলেন অগ্রভাগে। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখছেন নিয়মিত। ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে দলের সভায় অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই পূর্বপ্রস্ততি মোতাবেক কার্যক্রম করেছে মন্ত্রণালয়টি। তথ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিশেষ করে জনগণকে ভাইরাসটির প্রকোপ হতে বাঁচতে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
জাতীয় পর্যায়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ নির্বাচনি এলাকা ভুলে যাননি ড. হাছান মাহমুদ। নিজ নির্বাচনি এলাকায় সমানতালে কাজ করছেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের এ সংসদ সদস্য। নির্বাচনি এলাকার মানুষকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন।
সরকারি ত্রাণ সহায়তা সুষম বণ্টনে নিয়েছেন কার্যকর পদক্ষেপ। ব্যক্তিগতভাবে করোনা হতে রক্ষা পেতে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন। অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে প্রতিটি ইউনিয়নে। চিকিৎসক ও নার্স সুরক্ষায়ও নিয়েছেন পদক্ষেপ।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ১৯৬৩ সালের ৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর পূর্বে তিনি বন ও পরিবেশমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম-৬ আসন এবং দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
ড. হাছান মাহমুদ স্কুলজীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার মৌলবাদী অপশক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এমনকি কয়েকবার তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো রক্তচক্ষু হাছান মাহমুদকে তার সংগ্রামের পথ থেকে পিছু হটাতে পারেনি। ড. হাছান মাহমুদের মধ্যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধার অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। তার সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয়পর্যায়ে এবং বিদেশেও তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সময়ে তিনি বয় স্কাউটের দলনেতা ছিলেন।
জুনিয়র রেডক্রস টিমেরও সদস্য ছিলেন। আন্তঃবিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগতায়ও তিনি স্কুলের বিতর্ক দলের দলনেতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক দলের দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হন।
তিনি ১৯৭৮ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সরকারি হাজি মহসিন কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। যখন দুটি কলেজ (সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ এবং সরকারি ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট) যুদ্ধ করে হাজি মহসিন কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হন।
পরে তিনি ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তার সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে, নব্বই-এর দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যে বিপুল বিজয় লাভ করে।
সেই নির্বাচনের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নিবার্চনে প্রার্থী হতে না পারলেও তিনিই ছিলেন সেই নির্বাচনে সমস্ত প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান।
১৯৯২ সালের শুরুর দিকে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার কার্যকরী সংসদের সবচেয়ে নবীনতম সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯২ সালে তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে যান। সেখানে তিনি ১৯৯৩ সালে ব্রাসেলসের বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ইউরোপের একটি শীর্ষ র্যাংকিং ইউনিভার্সিটিতে ব্রাসেলসের ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৯৪ সালে তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ইউনিভার্সিটি’র সভাপতি নির্বাচিত হন, যা ৬০টি দেশের ১৫০০ শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করে। বেলজিয়ামে ড. মাহমুদ ১৯৯৩ সালে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে এবং ১৯৯৫ সাল থেকে মার্চ ২০০০ পর্যন্ত বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. হাছান মাহমুদ ২০০১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি একযোগে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবেশ ও বনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন।
তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ২০০৭ সালে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সামরিক সমর্থিত সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ড. হাছান মাহমুদ দলীয় সভাপতির মুখপাত্র হিসেবে অকুতোভয়ে কাজ করেন, যা দলের সকল কর্মী ও সমর্থকদের দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়।
২০০৮ সালে তিনি তখনকার দেশের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯-২০১৩ সময়কালে তিনি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগের পূর্বে ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালযয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. হাছান মাহমুদ ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে বয়োকনিষ্ট সদস্য হিসেবে পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মনোনিত হন। তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন খ্যাতিমান পরিবেশবিদ হিসেবে সুপরিচিত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পরবর্তীতে সরকারের পরিবেশমন্ত্রী এবং বর্তমানে জাতীয় সংসদের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু জনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অত্যন্ত সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসনীয় হয়েছে এবং হচ্ছে।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর, ‘গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল’ তাদের সাধারণ অধিবেশনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তার শক্ত ও জোরালো ভূমিকার জন্য তাকে ‘সার্টিফিকেট অব অনারেবল মেনশনে’ ভূষিত করে। (এটি গ্রিন স্টার পুরস্কারেরই একটি অংশ)।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক কর্মবীর হাছান মাহমুদ ছাত্রজীবন থেকে মেধার পরিচয় বহন করে আসছেন। মাঠের রাজনীতিতে তিনি কর্মীবান্ধব নেতা। তিনি যেখানেই যান, সেখানে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন। কর্ম আর মেধায় তিনি ছাত্রনেতা থেকে জননেতায় পরিণত হয়েছেন।
Discussion about this post