অনলাইন ডেস্ক
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের সওম এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সলাত হচ্ছে রাতের সালাত।’ (মুসলিম : ২৬৪৫)
আরবি বারো মাসের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের রয়েছে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য। মুসলিম জীবনে রয়েছে কিছু করণীয়। বারো মাসের মধ্যে চারটি মাসকে পবিত্র কোরআনে হুরুম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম সেই মাসগুলোর অন্যতম। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এই সম্মানিত মাসের পাঁচটি করণীয়
সর্বোত্তম নফল রোজা আদায়
এ মাসে অধিক নফল সিয়াম আদায় করা উচিত। কেননা আল্লাহর নবী মহররম মাসের সিয়ামকে রমজানের ফরজ সিয়ামের পর সর্বোত্তম নফল সিয়াম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছেÑ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের সওম এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সলাত হচ্ছে রাতের সালাত।’ (মুসলিম : ২৬৪৫)।
আশুরার সিয়াম
মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। এই দিনে সিয়াম পালন ফজিলতপূর্ণ সুন্নাহ। এই মর্মে আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘আর আশুরার এক দিনের সিয়ামের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এই প্রত্যাশা করি যে, তিনি এ সিয়ামের উসিলায় আগের এক বছরের সগিরা গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম : ১১৬২)।
আশুরা ঈমানদারদের বিজয় দিবস
আমাদের সমাজে আশুরা মানেই মর্সিয়া ক্রন্দনের এক শোকগাথা ইতিহাসের নাম। কারণ আশুরার দিন কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.) নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও হাদিস আমাদের সামনে তুলে ধরছে, দিবসটি আসলে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়ের দিন। রাসুলে করিমের রেখে যাওয়া সুন্নাহর পরতে পরতে সেই সত্যবাণী উচ্চকিত হয়েছে। নিম্নোক্ত হাদিসটি তার চমৎকার দৃষ্টান্ত।
ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইহুদিদের আশুরার দিন সওম পালনরত দেখতে পেলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন দিনের সওম পালন করছ? তারা বলল, মহান দিনে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সওম পালন করেছেন। তাই আমরাও এ দিনে সওম পালন করছি। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা তো তোমাদের থেকে মুসা (আ.) এর অধিক নিকটবর্তী এবং হাকদার। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সওম পালন করলেন এবং সওম পালন করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম : ২৫৪৮)।
অমুসলিমদের সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে বেঁচে থাকা
এই মর্মে নিচের হাদিসটি খেয়াল করুন : ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইহুদি এবং নাসারারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বললেন, এখনও আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকাল হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৫৫৬)। এ থেকে বোঝা গেল, নবী (সা.) বিজাতির সাদৃশ্য থেকে বাঁচতে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
নিজের ওপর জুলুম তথা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা
পাপকর্ম ব্যক্তিকে সাময়িক আনন্দ দিলেও এর মন্দ পরিণতি তাকেই ভোগ করতে হবে। তাই আল্লাহ তায়ালা গোনাহের কাজকে নিজের ওপর জুলম বলে আখ্যায়িত করেছেন। সম্মানিত এই মাসে একজন মুসলিমের জন্য ওহির নির্দেশনা হলো, বান্দা শয়তানের প্ররোচনায় নিজের ওপর জুলম করে পরকালীন জীবনে অপমানিত হওয়া থেকে বেঁচে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলম করো না।’ (সূরা তওবা : ৩৬)। লেখক : সালাহ উদ্দীন আহমাদ, সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ।
Discussion about this post