কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরে স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই মনে হচ্ছে। তবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ বা মাঝামাঝি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা শতভাগই বলা যায়। সেক্ষেত্রে সিলেবাসও কমানো হবে। যদিও সিলেবাসের ২০/৩০ শতাংশ কমানোর কথা আলোচনা হচ্ছে। আমি মনে করি দীর্ঘদিন স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে অলসতা ভর করেছে। পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলনা অনেকে।
টিভি আর অনলাইন মাধ্যমে প্রচারিত ক্লাসেও সক্রিয় ছিলনা তারা। আমার মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ডিসেম্বরের আগে যে সময়টুকু ক্লাস করার জন্য হাতে থাকবে তার ভিত্তিতেই পরীক্ষা নিতে হবে। ফলে সিলেবাসের পুরোটা শেষ করা কোনভাবেই সম্ভব হবেনা। ২০/৩০ শতাংশের চেয়ে টোটাল ৫০ ভাগ সিলেবাস কমানো হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ এবং কিছুটা হলেও পাঠ বোধগম্য হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। অন্যথায় তাড়াহুড়ো করে সিলেবাস শেষ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়তে পারে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষাবিশেষজ্ঞগণ সিলেবাস কমানোর বিষয়ে পর্যালোচনা করছেন। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিচ্ছেন। এটা ভালো দিক। আমাদের দেশ নয় শুধু সারাবিশ্বেই করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটেছে। স্কুল, কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা বহুদিন ধরে বিচ্ছিন্ন। সে হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকেই প্রায়োরিটি দিতে হবে। তারা যাতে কোনরকম সমস্যার সম্মূখীন না হয় সেজন্য আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
সারাবছরের কর্মঘণ্টার উপর ভিত্তি করে পাঠ পরিকল্পনা নেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু জানুয়ারি /ফেব্রুয়ারিতে ক্লাস হলেও মহামারী করোনার কারণে এর পরের মাস থেকে তা ভেস্তে গেছে। বাতিল করতে হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। স্থগিত করতে হয়েছে সব ধরণের পাবলিক পরীক্ষাও।
সবদিক বিবেচনা করে কীভাবে অন্ততপক্ষে বার্ষিক পরীক্ষাটা নেয়া যায় তার জন্য নানা কৌশল সাজানো হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সিলেবাস কমানো। সিলেবাস কমানোর সিদ্ধান্ত এক প্রকার চূড়ান্ত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সিলেবাসের ৫০ শতাংশ কমানোর পক্ষে আমি। তবে কোনভাবেই যেন পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়। প্রয়োজনে শিক্ষাবর্ষ দু’এক মাস বাড়ানো হোক। তাতে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য তেমন বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে এ ব্যাপারে আমার সাথে অনেকে একমত নাও হতে পারেন। তারপরও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নেওয়া যেকোন পরিকল্পলনা ও পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবো। সব পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের ঘিরে আবর্তিত হোক- এমন প্রত্যাশা সবসময় থাকবে।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
khalednizamt@gmail.com
Discussion about this post