নিউজ ডেস্ক
চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের তৈরি কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) প্রতিরোধের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের (পরীক্ষা) অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে চায়নার সঙ্গে আলোচনা করেছি। এর আগে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। চায়নার সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাদের সিনোভ্যাক কোম্পানি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবে। বাংলাদেশে তারা কিছু পরীক্ষাও করতে চায়, ট্রায়াল করতে চায়। সে বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। ভ্যাকসিনের সব বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।’
চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘তিনি চিন্তা-ভাবনা করে আমাদের একটা নির্দেশনা দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে—আমরা যেহেতু চাই দেশে ভ্যাকসিন আসুক, তাহলে তার তো ট্রায়াল লাগবেই। সেই ট্রায়ালটা কাদের ওপর করব? প্রপোজাল হলো ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর ওপর আগে (ট্রায়াল) করা হবে।’
‘আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ট্রায়াল করতে দেব। যারা স্বেচ্ছায় আসবে তাদের ওপরই শুধু ট্রায়াল হবে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত এবং সিনোভ্যাক কোম্পানিকেও আমরা এই কথা জানিয়ে দিয়েছি’—বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনাদের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে কাজ করা তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের যে নাগরিকরা রয়েছেন, দূতাবাসের লোকরা আছেন- তাদের উপরেও এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা হবে। আজকে এই বিষয়ে ডিটেইলড আলোচনা হয়েছে। আমরা এখন তাদের অফিসিয়ালি জানিয়ে দিচ্ছি যে, আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করুন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও আইসিডিডিআর,বির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা সংস্থা, বাংলাদেশ) সহযোগিতায় এই ট্রায়াল কার্যক্রম হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আজকে চীনের রাষ্ট্রদূতের (লি জিমিং) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে আমরা এই সিদ্ধান্তগুলো জানিয়েছি। রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তার সরকার ও কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজ যত দ্রুত শুরু করা যায় সেটা তারা করবেন।’
‘তারা আগে বলেছিলেন যে, তারা এক লাখ ইউনিট ভ্যাকসিন ফ্রি দেবেন। ট্রায়াল কার্যক্রমে যে ব্যয় হবে সেটাও তারা বহন করবেন। আমরা বলেছি, আমাদের দেশে ট্রায়াল করার সুযোগ দেব। তবে যখন বিক্রি করবেন তখন যেন প্রথম দিকে বাংলাদেশের নামটা থাকে। বাংলাদেশ যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটা পায়, এই কথাটির ওপর আমরা জোর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সেই কথার উপর জোর দিয়েছেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় থাকব। পাশাপাশি চেষ্টা করব যাতে আমাদের সংক্রমণের হারটা কমে আসে। ভ্যাকসিন আসতে একটু সময় লাগবে। আমরা যেসব দেশের সঙ্গে আলোচনা করলাম, ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে কোনো ভ্যাকসিন আসবে না।’
সবাই মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা হচ্ছেন ৫০ শতাংশ, আর ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত বয়সীরা ২৮ শতাংশ।’
‘আমরা এই মৃত্যু রোধ করতে চাচ্ছি। কোভিডকে প্রতিহত করতে চাচ্ছি, পৃথিবী চাচ্ছে বিভিন্নভাবে। এরমধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ভ্যাকসিন। আমরা জানি পৃথিবীর প্রায় ১৪০টি দেশ ও কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে এবং অনেকগুলো কোম্পানি আছে যারা অনেক অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। ৫-৬টি কোস্পানি একেবারে থার্ড স্টেজে আছে।’
ভ্যাকসিন পেতে জুলাই মাস থেকেই বাংলাদেশ উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
Discussion about this post