বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
করোনার কারণে দেশের কওমি মাদ্রাসা ছাড়া সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। পাশাপাশি চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নেয়া হচ্ছে না। আর স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে হবে, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সাধারণ শ্রেণীতে অটোপ্রমোশন পরিহার করে কোনোভাবে যদি একটি মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেওয়া যায় সেটি সব থেকে ভালো হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে— মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছর ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও-লেভেল আর এ-লেভেলে পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়ন করে প্রমোশন দিয়েছে। জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। এ বছর প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে। এটি যথার্থ সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ক্লাসে ওঠার ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেবে বলে জানান সাবেক ঢাবি উপাচার্য।
তিনি আরও বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া, অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। পূর্ববর্তী ক্লাসের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে গড় একটি ফলাফল দিয়েও পরবর্তী শ্রেণিতে প্রমোশন দেওয়া যেতে পারে। করোনা পরবর্তী সময় আগের মতো শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আনা কতটা সম্ভব হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
সাবেক ঢাবি উপাচার্য বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমাদের এমন অবস্থানে নিয়ে এসেছে যেখানে জীবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখতে হবে। এ মহাসংকটকালে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, সর্বত্র ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে থেমে গেছে। করোনা পূর্ববর্তী যে সময়টি ছিল আমাদের সেটি ফিরে আসবে কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও শঙ্কা প্রকাশ করছেন। করোনা পরবর্তী জীবনটি অন্যভাবে পরিচালনা করতে হবে। কোনোভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করানো, পরীক্ষা নেওয়ার কোনো অর্থ নেই। সেদিক থেকে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে স্কুল খোলা যাবে সেটি অনিশ্চিত। তাই বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নোয়াখালীতে বিদ্যুতের উপকারভোগী এক ছাত্রীর বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যা কিছু করছি সব তোমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এখন করোনাকাল চলছে। তোমরা স্কুল করতে পারছে না। তারপরও বই আছে। তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করো। পরীক্ষা তো হবে না, হয়তো প্রমোশন দিতে হবে। আমরা দেখছি কী করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনার কারণে ছেলেমেয়েরা আজ স্কুলে যেতে পারছে না। এর ফলে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। (এখন) অনলাইনে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে টেলিভিশনে। তোমারা সেখানে মনোযোগ দেবে। করোনাকালে প্রচুর সময় পাচ্ছ। তোমাদের পড়ার সুযোগ হয়েছে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বেই এ অবস্থা।’
Discussion about this post