নিজস্ব প্রতিবেদক
উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ চার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদায় নিয়েছেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। ফলে এ প্রতিষ্ঠানে কার্যত `বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন` বলতেই কিছু নেই। গত ১৪ আগস্ট এ তিনজন বিদায় নেওয়ার পর ১৮ দিন পেরোলেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কাউকে। ভিসি ও ট্রেজারার না থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
এদিকে, গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন তার দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করেছেন গত ২৮ আগস্ট। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ও বর্তমানে উপাচার্যশূন্য। এখানেও আগস্ট মাসের বেতন-বিল পাস করা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য ও ট্রেজারার মেয়াদ শেষে বিদায় নেওয়ায় এ দুটি পদও শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য নেই এক বছর ধরে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দিয়ে চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
দ্রুত সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
শেকৃবি :গত ১৪ আগস্ট শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন আহম্মদের চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমও গত মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শেকৃবিতে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার পদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তবে প্রস্তাবিত নামগুলোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন কেন্দ্রীয় নেতার ভিন্নমত রয়েছে। এই নেতা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে সিন্ডিকেট সদস্য। শীর্ষ তিন পদে নিয়োগের ব্যাপারে তার মতামতই গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ তিন পদে এ সপ্তাহেই নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ (দ্বিতীয় মেয়াদে), সদ্য সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকান্দার আলী, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া এবং সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. অলক কুমার পাল। তাদের মধ্যে যিনি উপাচার্য পদে নিয়োগ পাবেন, তার বাইরে থাকা তিনজনের মধ্যে দু`জনকে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
ডুয়েট :ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের মেয়াদ গত ২৭ আগস্ট শেষ হয়। ২৮ আগস্ট থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যাদের নাম নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে তারা হলেন- ডুয়েটের সাবেক ছাত্রকল্যাণ পরিচালক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. গণেশ চন্দ্র সাহা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীন হাসান চৌধুরী। তাদের মধ্যে ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি উত্তরাঞ্চল থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য ও হুইপের নিকটাত্মীয়।
ইবি :টানা ১০ দিন ভিসি ছাড়াই চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় প্রশাসনিক ও অর্থ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবি করেছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
গত ২০ আগস্ট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশীদ আসকারী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ত্বোহার মেয়াদ শেষ হয়। তারা দু`জনই ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট এ পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। অধ্যাপক আসকারীই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, যিনি তার চার বছরের মেয়াদ পুরোপুরি শেষ করতে পেরেছেন। তার আগের উপাচার্যদের সবাইকেই আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
অধ্যাপক ড. হারুন উর রশীদ আসকারী এ পদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেতে চান। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। এ পদের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- ইবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ও সদ্য সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ত্বোহা, বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমান ও সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামও ইবিতে উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বশেমুরবিপ্রবি :শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। এর দেড় মাস পর ওই বছরের ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু গত এক বছরেও কাউকে পূর্ণকালীন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইং থেকে জানা গেছে, শিগগিরই বশেমুরবিপ্রবিতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যাদের নাম বিভিন্ন সূত্র থেকে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান। এ পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান ও ডুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ আবু নাঈমকে নিয়েও সরকারের নীতিনির্ধারকরা ভাবছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
Discussion about this post