নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টিম একজন শিক্ষাবিদ, একজন বিজ্ঞানী, একজন মানবতাবাদী। বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তারে ও আর্ত মানবতার সেবায় ছয় দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করেগেছেন তিনি।গেল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সাউথ বেন্ডের হলি ক্রস হাউজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফাদার টিম। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।
ঢাকার নটর ডেম কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদাতাদের একজন ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের খ্যাতনামা এই কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সূচনা হয়েছিল।
নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত রোজারিও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
ফাদার টিম বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন বলে মিরপুরের এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুলের পরিচালক ও কারিতাস বাংলাদেশের ট্রাস্ট পরিচালক অখিলা ডি রেজারিও জানিয়েছেন।
ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টিম (জন্মঃ ২ মার্চ,১৯২৩ , যুক্তরাষ্ট্র)
সিএসসি নটর ডেম কলেজেরপ্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম এবং এই কলেজের ষষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে (১৯৭০-১৯৭১) দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেও মাতা ও পিতা উভয় দিক থেকেই তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন জার্মানি। চার ভাই বোনের মধ্যে ভাই বব ছিলেন সবার বড় যিনি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একটি সাবমেরিনে মৃত্যুবরণ করেন, এরপর ফাদার টিম, ছোট দুই বোন মেরী জো স্কিয়েল এবং জেনেভিভ গান্টার।
প্রকৃতির প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এদেশের মানুষের পাশে দাড়াতে ১৯৫২ সালে ফাদার টিম সুদূর আমেরিকা থেকে এখানে চলে আসেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় সেন্ট গ্রেগরী’জ কলেজে তিনি বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং নটর ডেম কলেজে (সেন্ট গ্রেগরী’জ কলেজের নতুন নাম) তাঁর শিক্ষকতা জীববিজ্ঞানীদের একটি বাংলাদেশী প্রজন্ম তৈরি করে। দ্য টেক্সটবুক অফ কলেজ বায়োলজি হচ্ছে ফাদার টিম রচিত একটি বই যা
পূর্ব পাকিস্তান – বাংলাদেশে অনেক বছর পাঠ্যবইয়ের ভূমিকা পালন করেছে।
একজন জীববিদ হিসেবে ফাদার টিম নেমাটোডের উপর ব্যাপক গবেষণা করেছেন ২৫০ এর অধিক নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন।
তাঁর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ব্যাপ্তি ছিল এন্টার্কটিকার পেঙ্গুইন থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ম্যানগ্রোভ পর্যন্ত। অধিকাংশ পর্যবেক্ষণ সুন্দরবন ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও তিনি আফ্রিকা, ইউরোপ, এন্টার্কটিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চালিয়েছিলেন।
ফাদার টিমকে বাংলাদেশের এনজিও ( উন্নয়নের স্বার্থে পরিচালিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) এর জনক বলা হয়। তাঁর কার্যক্রম অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ (এডিএবি), দ্য কোঅর্ডিনেটর কাউন্সিল ফর হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ (সিসিএইচআরবি) এবং সাউথ এশিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস (এসএএফএইচআর) কে প্রাথমিক গতি দেয়। বর্তমানে তিনি কারিতাস বাংলাদেশের একজন পরামর্শক এবং বেশকিছু কারিতাস প্রকল্প বোর্ডের সদস্য পাশাপাশি অন্যান্য এনজিও এর প্রকল্প বোর্ডেরও সদস্য।
ফাদার টিম তাঁর লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মতামত দেন এবং সংঘটিত গণহত্যার বিরোধিতা করেন। তিনি নাগরিকদের দুর্দশা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘনের বিষয় জোরালোভাবে প্রচার করেন। ড. রোডের কাছে তাঁর প্রেরিত চিঠি বাংলাদেশের বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। এছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি দরিদ্রদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
Discussion about this post