নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে খিচুড়ি রান্না শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বিষয়টি বাতিল করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখে কোনো প্রকল্পেই বিদেশ ভ্রমণ খাত রাখা হচ্ছে না।
খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ভারত সফরে পাঠানোর প্রস্তাব করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)।
সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় খিচুড়ি বিষয়ক প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়।
দুটি খাত বাতিলের বিষয় নিয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, কেউ আমাদের কাছে একটি আবদার করলেই হবে না। আমরা একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুশাসনের বাইরে যেতে পারবো না। বর্তমানে করোনা সংকট চলছে। কোনো প্রকল্পেই বিদেশ ভ্রমণের খাত রাখা হচ্ছে না। তাহলে এ প্রকল্পে সেটা কেন থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রশিক্ষণ খাতও বাতিল করা হয়েছে। জনগণের এক টাকাও অপচয় করতে দেওয়া হবে না। তাই ১৫ কোটি টাকার প্রস্তাব বাতিল করতে বলা হয়েছে। তবে দেশে প্রশিক্ষণের জন্য হয়তো ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা রাখা হবে। প্রকল্পের অন্যান্য খাতও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অনেক খাত বাতিল করাসহ ব্যয় কমাতে বলেছি। আবার কিছু খাত বাড়াতেও বলেছি। প্রকল্পটি ৫০৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। আমরা যদি দেখি একটি বা দুটি উপজেলা বাড়াতে হবে, তবে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
বর্তমানে ৩৩ লাখের মতো শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে। বিভিন্ন কারণে তারা স্কুলে যাচ্ছে না। খাবার বিতরণের ফলে শিশুরা স্কুলে যাবে এবং তাদের পুষ্টিগত সমস্যা নিরসন হবে বলে দাবি ডিপিইর। ১৯ হাজার ২৮২ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ের এই কর্মসূচির মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় সপ্তাহে তিনদিন শিক্ষার্থীদের দুপুরে খিচুড়ি-ডিম ও সবজি দেওয়া হবে। বাকি তিন দিন দেওয়া হবে পুষ্টিকর বিস্কুট।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) শিশুদের খাবার বিতরণ খরচ ১ হাজার ৭১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ফরটিফাইড বিস্কুট এবং পুষ্টিকর রান্না করা খাবার- এই দুই ধরনের খাবারের মডালিটিজ কার্যকর করা হবে। জাতীয় ও মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রোগ্রাম পর্যালোচনা কর্মশালা, ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ এবং ইস্যুভিত্তিক প্রযুক্তিগত সেমিনার, প্রকল্পভুক্ত প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় খাদ্য এবং বিস্কুট সংরক্ষণ, বিতরণ ও মনিটরিংয়ের জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) নিয়োগ করা হবে।
যেসব স্কুল রান্না ঘর তৈরি করবে এবং রান্নার সরঞ্জামাদি সামাজিকভাবে জোগাড় করবে সেখানেই কেবল রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কতগুলো স্কুল তা করতে পারবে সে ধরনের কোনো তথ্যও এখানে উল্লেখ নেই প্রকল্পে।
প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু কিছু আইটেম বাবদ ৭ কোটি ৫০ লাখ, আসবাব পত্র বাবদ ২ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি জিপ ও ছয়টি মাইক্রোবাস কিনতে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ৮০ লাখ টাকা, যানবাহন ও যাতায়াত বাবদ ২০ লাখ টাকা, বিশেষভাবে যানবাহন মেরামত বাবদ দেড় কোটি চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন ব্যয়ের প্রস্তাব যৌক্তিক করার নির্দেশ দিয়েছে।
খাদ্য কেনা বাবদ ১৭ হাজার ১৮৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, খাদ্য বিতরণ ফি বাবদ ১ হাজার ৭১৮ কোটি ৫৮ লাখ, প্রাইজ কন্টিনজেন্সি খাতে ১৯০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্লেট কেনা বাবদ ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে কতটি প্লেট কেনা হবে তার সংখ্যা উল্লেখ করেনি ডিপিই। ডিপিপিতে কি তথ্যের ভিত্তিতে এ সকল খাতের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে তা বোধগম্য হচ্ছে না পরিকল্পনা কমিশনের। এই বিষয়টির যৌক্তিকতাসহ বিস্তারিত বিবরণ জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
Discussion about this post