অনলাইন ডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে ভেষজ ওষুধ বা ঘরোয়া দাওয়াইতে ভরসা রেখেছেন অনেকেই। করোনার চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ না থাকায় গাছ-গাছড়া থেকে পাওয়া ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। এবার সেই ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করার উদ্যোগ নিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কার্যকর প্রমাণ হলে অদূর ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার হতে পারে।
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রেজোলিনা কয়েক মাস আগে করোনার চিকিৎসায় আর্টেমিসিয়া গাছ থেকে তৈরি এক বিশেষ পানীয় বা হারবাল চায়ের ব্যাপক গুণকীর্তন করেছিলেন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। আর্টেমিসিয়া গাছ ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় সফল হিসেবে প্রমাণিত হলেও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এর কার্যকারিতার প্রমাণ মেলেনি।
ডব্লিউএইচও, আফ্রিকান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশন ফর সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষকেরা গতকাল শনিবার কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ভেষজ ওষুধের ‘ফেজ-থ্রি’ বা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের প্রটোকল তৈরি করেন। প্রটোকলে ভেষজ ওষুধ ব্যবহারে নিরাপত্তার বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর আফ্রিকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ অ্যান্ড লাইফ কোর্সের পরিচালক ড. প্রসপার তুমুসিম জানান, করোনার চিকিৎসায় প্রথাগত ওষুধ যদি নিরাপদ, কার্যকর ও মানসম্পন্ন প্রমাণ হয়, তাহলে দ্রুত ও বড় পরিসরে স্থানীয় পর্যায়ে সেসব ওষুধ উৎপাদনের পরামর্শ দেবে ডব্লিউএইচও।
বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোতলালেপুলা গিলবার্ট মাতসাবিসা বলেন, ‘কারিগরি তথ্যসংবলিত নথিগুলো আমলে নেওয়ায় যে বিষয়টি নিশ্চিত হবে তা হলো, কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় রোগীর নিরাপত্তার দিকটিতে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতার বিশ্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য ক্লিনিক্যাল প্রমাণ রয়েছে।’
অধ্যাপক মোতলালেপুলা গিলবার্ট মাতসাবিসা আশা করছেন, আফ্রিকা অঞ্চলের বিজ্ঞানীরা সত্বর কোভিড-১৯ চিকিৎসার গবেষণায় ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন, যাতে করে ওই অঞ্চলে চলমান করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রথাগত ওষুধ ব্যবহার করে মানুষ উপকৃত হতে পারে।
ঘরোয়া বা প্রথাগত ওষুধভিত্তিক থেরাপির আরো উন্নয়ন করতে প্রয়োজনীয় গবেষণাকাজে সহায়তা দেওয়ার জন্য ২৫ সদস্যের একটি আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় অনুমোদন সংস্থাগুলো, প্রথাগত ওষুধ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গণস্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফার্মাসিস্ট এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা।
উপদেষ্টা কমিটি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ভেষজ ওষুধ কতটা কার্যকর, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন তার বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত পন্থা অনুসরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
Discussion about this post