নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছে সরকার। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে এই টাকা দেওয়া শুরু হয় ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়)’ আওতায়। কিন্তু উপবৃত্তি নিয়ে শুরু হয়েছে জটিলতা। অনেক শিশুর মা টাকা তুলছেন না। ফলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা জমে গেছে। ওই টাকা এখন তুলে নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অর্থ ফেরত দিতে বলে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ও একই নির্দেশ দিয়েছে। অথচ মায়েরা কেন টাকা তুলছেন না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য, ১০ বছরের আগে এ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রাথমিকের উপবৃত্তি প্রকল্পের পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পড়ে আছে টাকাটা। তুলছে না কেউ। হয়তো এই নম্বরগুলো অনেক মা ব্যবহার করছেন না। আবার অনেকে টাকা তুলতে আগ্রহী নন।’ তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মায়েরা কেন টাকা তুলছেন না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।’
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে এই উপবৃত্তি দেওয়া হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে প্রকল্পটি শুরু হয়। এর আওতায় প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাসে ১০০ টাকা ও প্রাক-প্রাথমিকে ৫০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তিন মাসে এক কিস্তি ধরে বছরে চার কিস্তিতে টাকা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে অভিভাবকের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক অভিভাবক টাকা তুলছেন না।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেসব অভিভাবক দীর্ঘদিন উপবৃত্তির টাকা তুলছেন না, তাঁদের মেসেজ দিয়েছি। তারপরও টাকা তোলেননি। এ কারণে আমরা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চাচ্ছি।’ এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সচ্ছল পরিবারের মায়েরা এ টাকা তোলেননি।’
সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ আলী গত ১৬ জুন দেশের সব থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরকে চিঠি দেন। তাতে বলেছেন, কিছু অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির অর্থ অলসভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, তোলা হচ্ছে না। সেগুলো প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নয় বলে মনে হয়। ২৫ জুনের মধ্যে টাকা উত্তোলনের নির্দেশ প্রদানের অনুরোধ করা হলো। এরপর অনুত্তোলিত অর্থ কোষাগারে জমা করা হবে, কোনো দাবিনামা গ্রহণ করা হবে না।’
এদিকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দু’দফা চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু জবাব না পাওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে গত ১৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ও তিন কার্যদিবসের মধ্যে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেয়। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অর্থ ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি চায়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, এ টাকা কোষাগারে জমা দিতে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ টাকা অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। ১০ বছরের মধ্যে অভিভাবক মায়েরা টাকা না তুললে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ কোনো কারণে অভিভাবকরা মেসেজ নাও পেতে পারেন। অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়েও ত্রুটি থাকতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বলেন, ‘টাকাটা ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে গেছে। সুতরাং তা সরকারের টাকা নয়। এমনও হতে পারে, মায়েরা টাকা ওই নম্বরে সঞ্চয় করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’
Discussion about this post