মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
ইবাদতের প্রথম পুরস্কার হলো আত্মার প্রশান্তি। আমলের মাধ্যমে ইবাদতকারীর মন উত্ফুল্ল হয়। ইবাদতের স্বাদ বলে একটি কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বহু মুসলমান এমন আছে, যারা বছরের পর বছর ইবাদত করে, আমলময় জীবন যাপন করে, কিন্তু কোনো শান্তি, কোনো তৃপ্তি অনুভূত হয় না। এখানে ইবাদতে তৃপ্তি আসার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো—
ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করা : ভালো কাজে প্রতিযোগিতা ইবাদতে প্রশান্তি আনে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রতিযোগিতা করো তোমাদের রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মতো। (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২১)
তাই কোনো সৎকর্মের সুযোগ এলে দ্রুত তা সম্পাদন করা সত্যিকার মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
ইবাদতে কষ্ট স্বীকার করা : কষ্টের সঙ্গে পূর্ণভাবে অজু করা, এশা ও ফজরের জামাতে যোগদান করা, শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া, কষ্টের সময় ও সচ্ছলতার সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে হাদিসে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘অতঃপর নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। অতএব যখন অবসর পাও একান্তে ইবাদত করো এবং তোমার রবের দিকে মনোনিবেশ করো। (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৮)
বেশি বেশি নফল ইবাদত করা : নফল ইবাদত তৃপ্তিদায়ক আমলের ক্ষেত্রে সহায়ক। আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)
কোরআন অনুধাবন করা : যেকোনো অবস্থায় কোরআন হলো মুমিনের জন্য শিফা বা আরোগ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তারা কোরআন অনুধাবন করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলো তালাবদ্ধ?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২৪)
পাপের কাছেও না যাওয়া : বারবার পাপ কাজ করার দ্বারা অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘…প্রকাশ্য বা গোপন কোনো অশ্লীলতার নিকটবর্তী হবে না। ন্যায্য কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করবে না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। এসব বিষয় তিনি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করো।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫১)
অনর্থক কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা : সফল মুমিনদের গুণাবলি ব্যাখ্যায় আল্লাহ বলেন, ‘যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ থেকে নির্লিপ্ত।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ব্যক্তির ইসলামী সৌন্দর্য হলো, অনর্থক কর্মকাণ্ড পরিহার করা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৬৭)
ইবাদতে অহংকার না করা : আগে-পিছে সব গুনাহ মাফ থাকা সত্ত্বে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন। এতে তাঁর দুই পা ফুলে যেত। এ প্রসঙ্গে স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৯৭)
সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা : আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘…জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)
এ জন্য বিভিন্ন সময়ে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। যেমন—খানাপিনা, ওঠা-বসা, নিদ্রাকালে ও জাগরণে দৈনন্দিন পঠিতব্য দোয়াগুলো বুঝেশুনে পাঠ করা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
Discussion about this post