নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে শিক্ষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
গত ২২ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আকস্মিক পরিদর্শনের নির্দেশনা দেওয়া হলে অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
এই বিষয়টি তুলে ধরা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনও নির্দেশনা জারি করিনি।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা জারি করেছি স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান। যখন স্কুল আবারও খোলা হবে তখন কোন কোন বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে স্কুল খুলবে, সেটার একটা গাইডলাইন তৈরি করেছি। ডব্লিউএইচও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো যেসব গাইডলাইন তৈরি করেছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এটা তৈরি করেছি। সেটা সব স্কুলে দিয়েছি। আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেই রি-ওপেনিং প্ল্যান বিবেচনা করে স্কুল রি-ওপেনিংয়ের একটা প্ল্যান তৈরি করবে। সেজন্য বলেছি, স্কুল খোলার ১৫ দিন আগে কাজগুলো করতে হবে। এর বাইরে স্কুলে আসতে হবে, এমন কোনও সিদ্ধান্ত আমরা দেইনি।’
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ‘আমরা কিন্তু সরকারি কর্মচারী। আমাদের সব অফিস খুলে দিয়েছে। স্কুলেও কিছু কাজ থাকে, অ্যাকাডেমিক কাজ থাকে। শিক্ষকরা আসতেই পারেন, অফিসাররা আসতেই পারেন।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান প্রধান বিদ্যালয়ে যেতে পারেন জরুরি কাজে। প্রয়োজনে সহকর্মীর সহযোগিতার জন্য প্রতিষ্ঠানে আসতে বলতে পারেন। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ছুটির মধ্যে অপ্রয়োজনে স্কুলে আসার কোনও প্রয়োজন নেই।
মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ষষ্ঠবারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হলো।’
প্রধানমন্ত্রীও আশঙ্কা করেছেন নভেম্বরে একটা সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে, তাহলে শুধু অক্টোবর কেন বন্ধ করা হলো জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘নভেম্বরের পরিস্থিতি এখনও আমাদের সামনে আসেনি। সেপ্টেম্বরের আক্রান্তের হার বিবেচনায় নিয়ে মনে করছি যে, এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা সমীচীন হবে না। সেই কারণে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই
শিক্ষাবর্ষ বাড়বে কিনা জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এখনও কোনও পরিকল্পনা নেই।’
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ‘পহেলা জানুয়ারি যে বই উৎসব করে থাকি, সেই বই ছাপানোর ব্যাপারে আমাদের পুরোদমে কাজ চলছে। আমাদের কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা পরবর্তী বছরে বই বিতরণ করবো, নতুন সেশন শুরু হবে। সে কারণে আমরা মনে করছি যে, সেশন বাড়ানোর পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত নেই।’
পরীক্ষা বা মূল্যায়নে নয়, গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে লার্নিং কমপিটেন্সি
মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষার সম্ভাবনা কমে আসছে কিনা জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা ১৬ মার্চ পর্যন্ত ৩০-৩৫ শতাংশ পাঠ পরিকল্পনা শেষ করতে পেরেছি। রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদের মেইন টার্গেট হলো—প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মিনিমাম একটা লার্নিং কমপিটেন্সি লাগে। এটা যাতে প্রতিটি শিশু অর্জন করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। পরীক্ষা বা মূল্যায়ন না। স্কুলের শিক্ষকই বলতে পারবেন বাচ্চারা সঠিকভাবে লার্নিং কমপিটেন্সি অর্জন করতে পেরেছে কিনা, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। পরবর্তী ক্লাসে তুলে দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকরা একটা টুলস তৈরি করবেন।’
অটো পাস
অটো পাস দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধীরে ধীরে স্পেস কমে যাচ্ছে। সেটা হতেই পারে, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করি।’
গণশিক্ষা সচিব আরও বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের একটা পাঠ পরিকল্পনা আছে। যদি স্কুল খুলতে পারি তাহলে সে অনুযায়ী চলবে। যদি স্কুল না খোলে, শেষ অপশন যদি ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে বুঝতেই পারছেন কী (অটো পাস) হবে…।’
Discussion about this post