নিজস্ব প্রতিবেদক
নওশিনের বড় স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করবে। রেজাল্ট ভালো হলেই পাওয়া যায় স্কলারশিপ। সেই আশায় বসেছিল সে। কিন্তু মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরীক্ষা ছাড়াই ফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে বিদেশে উচ্চশিক্ষা করার বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে নওশিন। তার প্রশ্ন, মূল্যায়নের ভিত্তিতে দেওয়া ফল বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রহণ করবে তো?বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পরিবর্তে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের পর ডিসেম্বরে ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সংশয়ে আছে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, সেইসব প্রার্থী। তাদের সংশয় হচ্ছে—বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই ফল গ্রহণ করবে কিনা।
বুধবার (৭ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা দীপু মনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে গত ২২ মার্চ ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আমরা স্থগিত করি। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় মূলত শিক্ষা কার্যক্রমের আলোকে, শিখন কার্যক্রম কোন অবস্থায় আছে, সেটা যাচাইয়ের জন্য। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশে বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করে। শিক্ষা অর্জনের একটি পর্যায় শেষ করে তারা একটি সনদ পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা বোর্ডগুলোর জন্য একেবারেই নতুন। ফলে কীভাবে মূল্যায়ন করা হলে ফলাফল দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা, সে বিষয়গুলোও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এইচএসসির পরীক্ষার্থীরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা অতিক্রম করে এসেছে জেএসসি ও এসএসসি। সেই দুটি পরীক্ষায় তাদের যে ফলাফল তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
করোনার কারণে পরীক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করলেও বিদেশে উচ্চশিক্ষায় তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে—তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। এমন একজন অভিভাবক আজিম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। কারও পক্ষে সম্ভব হয় আবার অনেকেরই সামর্থ্য থাকে না। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের নির্ভর করতে হয় স্কলারশিপের ওপর। ভালো রেজাল্ট না হলে স্কলারশিপ পাওয়া যায় না। মূল্যায়নের ভিত্তিতে ভালো ফলাফল হলে, আর পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল করার মাপকাঠি কি এক হবে?’
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন এবং পরামর্শ সেবা দেন তারাও আছেন দ্বিধার মধ্যে। তবে কেউ কেউ বলছেন, রেজাল্টের কারণে ভর্তির সমস্যা না হলেও স্কলারশিপ পেতে সমস্যা হতে পারে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেছেন, সিদ্ধান্ত তো আজই হয়েছে। এটা নির্দেশনা আকারে আসবে। এটা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। তবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আলী নেওয়াজ বলেন, ‘পরীক্ষার পর সরকার স্বীকৃত একটি সার্টিফিকেট দেবে। যেটা সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা থাকে। সরকার যদি সেটা দেয় তাতে সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফলাফল নিয়ে সমস্যা হতে পারে স্কলারশিপ পেতে। এখন এরকম ঘটনা তো প্রথমবার, তাই নিশ্চিত করে বলা খুব মুশকিল।’
উল্লেখ্য, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পর্যায়ে এবার ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। একটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫১ হাজার ৩৪৮ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। নিয়মিত-অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর বাইরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৬ হাজার ৭২৭ জন। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়। একই কারণে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা/মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। নভেম্বরে এসব পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
Discussion about this post