মো. আমিরুজ্জামান
অভিনব ও ব্যতিক্রম একটি চিন্তা। বাড়ির উঠানে চারটা পানির ট্যাংক। প্রতিটা ট্যাংকের উচ্চতা চার ফুটের মত। একটু কৌতূহল নিয়ে ট্যাংকের কাছে এগিয়ে গেলেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে। তাহলে কি পুকুর ছাড়াও মাছ চাষ করা সম্ভব? কিন্তু কীভাবে? মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন উঁকি দেওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এ পদ্ধতির নাম রি-সার্কুলেটিং একুয়া কালচার সিস্টেম। যাকে সংক্ষেপে রাস পদ্ধতি বলা হয়।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান কনক নিজ জমিতে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। পেশায় তিনি একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হলেও নিজ উদ্যমে কিছু করার প্রচেষ্টা স্বরূপ মাস তিনেক আগে গড়ে তুলেছেন এ ফিস ফার্ম। নাম দিয়েছেন জামান একুয়া ফিস ফার্ম। যা এরইমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক উদ্যোক্তা তার এ ফার্ম দেখতে ছুটে আসেন।
প্রাথমিকভাবে তিনি চারটি ট্যাংকে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ১০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ প্রতিটা ট্যাংকে প্রায় আট হাজার পিস মাছ উৎপাদন করছেন। তার এসব ট্যাংকে তেলাপিয়া, শিং ও পাবদা মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে বছরে তিন থেকে চারবার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। যার ফলে অল্পসময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তার এ ফার্ম দেখভাল করার জন্য সার্বক্ষণিক একজন লোক নিয়োজিত আছেন।সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান কনক।রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষের সঙ্গে পুকুরে মাছ চাষের বিস্তর পার্থক্য। কেউ যদি পুকুরে মাছ চাষের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ পদ্ধতিতে চাষ করতে চান। তবে তাকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নয়তো অতিরিক্ত খাওয়ার দেওয়া ও অব্যবস্থাপনার জন্য মাছ মরে যেতে পারে। তবে সৈয়দপুরের তরুণ উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান এ ফার্ম বাস্তবায়নের জন্য কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। নিজের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞদের পরামর্শেই তিনি এ ফার্ম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন।
রাস পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো, অল্প ঘনত্বে অধিক মাছ উৎপাদন করা। এ পদ্ধতিতে একই পানি পুনরায় বিভিন্ন ফিল্টার ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়ে মাছের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। যার ফলে পানি অপচয়ের সুযোগ নেই।
এছাড়া মাছের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য অবশ্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের সুব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক। মূলত চীনে এ রাস পদ্ধতির উদ্ভাবন হলেও বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেরও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। সৈয়দপুরে তথা নীলফামারী জেলার মধ্যে কামরুজ্জামানই প্রথম উদ্যোক্তা যিনি এ ব্যয়বহুল পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন।
রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষের কারণ জানতে চাইলে কনক বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে ক্ষেতের জমি অনেক কমে আসছে। যদি আমরা অধিক হারে পুকুর কাটি তাহলে আমাদের জমি অনেক কমে যাবে। তাই এ রাস পদ্ধতি বেছে নেওয়া। এ পদ্ধতিতে পুকুরের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। অন্যদিকে পুকুরে যেখানে দুই কেজি খাওয়ারে মাত্র এক কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়, সেখানে রাস পদ্ধতিতে মাত্র এক কেজি খাওয়ারে দেড় কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
জামান একুয়া ফিস ফার্মের এ মালিক আরও বলেন, রাস পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দেশি শিং, দেশি-বিদেশি মাগুর, পাবদা, টেংরা, তেলাপিয়া, চিংড়িসহ নানান প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। তবে এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ একটু বেশি। কিন্তু পরবর্তী ব্যবস্থাপনা ব্যয় সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী। সুদূরপ্রসারী চিন্তা করলে যা অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।
Discussion about this post