খাগড়াছড়ি: সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ফলের সমাহার ঘটে পার্বত্য জেলাগুলোতে। সুস্বাদু ফল উৎপাদনে দেশজুড়ে পাহাড়ের ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। এরমধ্যে কাঁঠাল, কলা, আম, আনারস, লিচু অন্যতম। সেই সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া সুস্বাদু মাল্টা বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
পাহাড়ের উর্বর মাটি যেন ফল-ফলাদি চাষের জন্য অনন্য এক উদাহরণ। অনূকুল জলবায়ু ও আবহাওয়ার কারণে খাগড়াছড়ির পাহাড় সবুজ সুস্বাদু ফল মাল্টায় ছেয়ে গেছে। এককভাবে মাল্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখায় দিনে দিনে মাল্টা চাষির সংখ্যা বাড়ছে। বেগবান হচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি-১ জাতের এ মাল্টার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ভালো উৎপাদন ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মাল্টা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ২০০৪ সালের দিকে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কৃষি বিজ্ঞানীরা বারি মাল্টা-১ উদ্ভাবন করেন।
এ বছর খাগড়াছড়িতে প্রায় তিনশ চাষি ৩শ ৪৮ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। গত বছর হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হলেও এবার তা বেড়ে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে বলে বলছে কৃষি বিভাগ। সে অনুযায়ী এবার উৎপাদন দাঁড়াবে ২ হাজার ৮৮ মেট্রিক টন।
প্রতি এক একর জায়গায় প্রায় ২শ মাল্টা গাছ হয়। ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী একটি গাছ প্রায় এক মণ ফলন দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে ফলনও বাড়ে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় (৬/৭টি মাল্টায় এককেজি)। খাগড়াছড়ির চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকরা মাল্টা সরবরাহ করছেন।
খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়ার মাল্টা চাষি সাহাজ উদ্দিন বলেন, আমি ৪ একর জায়গায় মাল্টা চাষ করি। ৯শ গাছের মধ্যে ৫শ গাছে ফলন এসেছে এবার। যেখান থেকে আমি সাড়ে পাঁচ টন মাল্টা পাবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, একটি আম গাছের চারপাশে ২০ ফিট করে জায়গা রাখতে হয়। যাতে করে গাছটি বৃদ্ধি পায়। তবে মাল্টার জন্য ৮ ফিট জায়গাই যথেষ্ট। আর মাল্টা চাষে কষ্ট কম। জৈব সার আর নিয়মিত গাছে পানি দিতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
মাল্টা চাষি বাবু মারমা বলেন, রোগবালাই এবং ঝরে পড়া কম এবং উৎপাদান ভালো হওয়ায় মাল্টা চাষ করে ভালো লাভ করা যায়। আর সুস্বাদু স্থানীয় এই মাল্টার চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা সরবরাহ করি। অল্প পুঁজিতে মাল্টা থেকে ভালো লাভ হয়। একর প্রতি এক লাখ টাকার উপরে লাভ থাকে বলেও জানান তিনি।
অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে মাল্টা হার্ভেস্টের উপযুক্ত সময় হলেও পাহাড়ে দুই সপ্তাহ আগেই মাল্টা উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে মাল্টা পরিপক্ক হওয়ার আগেই অনেক কৃষক বাজারজাত করছেন। এতে মাল্টার পরিপূর্ণ স্বাদ এবং দাম পাওয়া যায় না।
খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছাড়াও ঘরের আঙিনাতেও মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সৃজন হচ্ছে নতুন নতুন মাল্টা বাগান। স্থানীয়ভাবে শুধু নয় বাইরে থেকেও অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মর্তুজ আলী বলেন, শুরুতে কৃষি বিভাগের সাইট্রাস প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২০০ জনকে একশ করে চারাবাগানসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়। এখনকার মাটি ও জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন মাল্টা চাষির সংখ্যাও বাড়ছে। আশা করছি সামনে এই কৃষকরা মাল্টা চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন।
স্থানীয় মাল্টা চাষ খাগড়াছড়ির মানুষের বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে, এমনটাই প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।
Discussion about this post