নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে কার না ভালো লাগে! বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চাহিদার কিংবা আকর্ষণের একটি কাজ হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ব্যবসা কিংবা চাকরি যেকোনো জায়গাতেই মানুষ চায় নিজেকে কিছুটা আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে। তাই তো বর্তমান সময়ের তরুণ তরুণীদের আকর্ষণের একটি জায়গা হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তার আসনে দেখা। যদি আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করে থাকেন তবে আপনি এই পোস্টের শেষ পর্যন্ত পড়বেন ।
লক্ষ্য স্থির করা
জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে লক্ষ্য স্থির করা। আপনি যখন কোনো কাজ মন প্রাণ দিয়ে করতে চাইবেন দেখবেন নানা ভাবে নানা সমস্যা মাথাচারা দিয়ে উঠছে। আপনার হয়ে যাওয়া কাজটাও শেষ মূহূর্তে আর করা হয়ে উঠছে না। এই পর্যায়ে বেশিরভাগ নতুন উদ্যোক্তাদের মনে এটাই আসে যে আমাকে দিয়ে আর হবে না। আমি এই কাজটি শেষ করতে পারবো না। এটি আপনার মনোবল ভেঙ্গে দেয় যাতে করে আপনি আর আপনার লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তাই সবার আগে লক্ষ্য স্থির করুন।
নেটওয়ার্ক তৈরি
একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি অনেক কিছুই জানেন না। সেই দিক থেকে নতুন কিছু করতে গেলে আপনাকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হবে। তাই যত পারুন আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন। এটি আপনাকে নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। সেই সাথে আপনার জন্য এই যোগাযোগ আপনার জন্য কাজ করবে নেটয়ার্ক হিসেবে।
এ্যাডভারটাইজিং
আপনি আপনার কাজকে যত সুন্দর করে মানুষের মাঝে তুলে ধরবেন তার কদর ততো বাড়বে। আর সেই ক্ষেত্রে মোবাইল এ্যাডভারটাইজিং হতে পারে আপনার প্রথম স্টেপ। সেজন্য আপনার আশেপাশের বন্ধু কিংবা আত্নীয়দের নির্বাচন করুন। এরপর তাদের আপনার কাজ মেইল কিংবা নানাভাবে প্রদর্শন করুন। যখন দেখবেন সাড়া পাচ্ছেন, তখন বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন।
উদ্ভাবন থেকে বিরত না থাকা
মনে রাখুন আপনি একজন উদ্যোক্তা। আপনার কাজই হচ্ছে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করা। নতুনকে সবার মাঝে তুলে ধরা। পিছনে হাজার মানুষ হাজারটা কথা বলবেই। তাকে নিয়ে বসে থাকলে আপনি কখনো সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবেন না। তাই সব সময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।
কঠোর পরিশ্রমী
উদ্যোক্তা হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তিল তিল করে গড়ে তোলা বিজনেস এক সময় বিশাল শিল্প সামাজ্য করে সাজাতে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এরপর আপনাকে হতে হবে ডায়নামিক এবং চৌকস। কেননা উদ্যোক্তা হতে আপনাকে পিওন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রধানের সঙ্গে পর্যন্ত কথা বলতে হবে। অধিক পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। কোনো কারণে কাজে সফল না হতে পারলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। অধিক মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আত্মবিশ্বাস
প্রত্যেক মানুষের কিছু গুণ থাকে। সফল উদ্যোক্তার প্রধান গুণ হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। যার আত্মবিশ্বাস যত বেশি তার সাফল্য তত বেশি। যদিও এটি অর্জন করা কঠিন। সফল উদ্যোক্তা তার আশপাশের আত্মবিশ্বাসী লোকদের মধ্যে অন্যতম। আপনাকে হতে হবে স্থির ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, যা আত্মবিশ্বাসকে আরও বৃদ্ধি করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে।
উদ্দেশ্য
সব কাজেই একটা উদ্দেশ্য থাকে, উদ্দেশ্যবিহীন কাজ ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। বিশ্বাস করতে হবে আপনি ব্যতিক্রমী কিছু করতে সক্ষম।
মনে মনে দৃশ্যকল্প অংকন
মনে মনে আপনার ব্যবসার দৃশ্যকল্প আঁকুন। কীভাবে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে দেখুন। সেখানে নানা রকম দৃশ্যপট উপস্থাপিত হবে। সবকিছু সুচারুভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। একজন সফল উদ্যোক্তা তার বাস্তব জীবনে দৃশ্যপটের যথাযথ প্রয়োগে সফলতা অর্জনে সক্ষম হন।
ধৈর্যশীলতা
কঠোর ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে ব্যবসার পথকে অধিকতর মসৃণ করতে হবে। ব্যবসায় সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতা নামক শব্দটি থাকে। ব্যর্থতা নামক শব্দটিতে ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসার সুদীর্য পথ অতিক্রম করে সফল উদ্যোক্তা হতে অবশ্যই ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
কখনোই ‘না’ বলা যাবে না
সফল উদ্যোক্তারা জানেন যে তাদের পক্ষে কী করা সম্ভব এবং কী করা সম্ভব নয়। তাই অন্যরা যখন কাজের ভয়ে না বলেন বা পারবেন না বলে কাজ পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন সফল ব্যক্তিরা তাদের সবকিছু বিবেচনা করেই সুযোগকে হ্যাঁ বলেন। এর ফলে ক্লায়েন্টদের কাছে অন্য সবার থেকে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন আলাদা। অনেক সময় ক্লায়েন্টরা অন্য কাউকে না খুঁজে সরাসরি সফল ব্যবসায়ীদের আর কাজ করার এবং আরও আয় করার সুযোগ দিয়ে থাকেন।
মূলধন
সর্বোপরি উদ্যোগের শুরুতেই নিশ্চিত করতে হবে প্রয়োজনীয় মূলধন। বিশেষ করে প্রথম বছরের সব খরচ এবং বিনিয়োগের পুরো টাকাই থাকা চাই আপনার হাতে। পরের বছরগুলোর জন্য হয়তো তারল্য নির্ধারণ করে আপনি ব্যবসার আয় থেকেই সব খরচ নির্বাহ করতে পারবেন। এছাড়া বাংলাদেশের অনেক সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও তৈরি আছে আপনাকে সাহায্যের জন্য। এর মধ্যে অনেক বছর ধরে এসএমই বা ক্ষুদ্র ঋণের মাধমে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু বেসরকারি ব্যাংক বিভিন্ন রকম সাহায্য করে আসছে।
আপনি যখন উদ্যোক্তা – উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণ
আমরা সবাই উদ্যোক্তা, যে উদ্দ্যেগ নেয় তাকেই উদ্যোক্তা বলা হয় । কিন্তু আমরা তো সবাই খাই , তার পরও আমরা কিছু ব্যক্তিকে খাদক বলে ডাকি , তাকেই ডাকি যে কিনা একটু বেশী খায় । তাকে ভিন্ন ভাবে চেনার জন্যেই তাকে এই নামে ডাকা , ঠিক তেমনই সবাই উদ্দ্যেগ নেয় , কিন্তু বিশেষ কিছু ব্যাক্তি একটু আলাদা ভাবে উদ্দ্যেগ নেয় , আর আমরা তাদের কে চিহ্নিত করার জন্য উদ্যোক্তা বলি । ( সম্পূর্ণ নিজের যুক্তি কিছু ভুল থাকতে পারে , তার জন্য ক্ষমা পার্থী )
সমস্যা সবার জীবনেই থাকে , বা আসে । কিন্তু আপনি যখন উদ্যোক্তা তখন সেই সমস্যাটা একটু বেশী আকারেই আসবে । কারণ আপনি আর অন্য আট/দশজনের মতো করে সাধারণ উদ্দ্যেগ নেন নাই ,তাই । আপনি অন্যদের মতো করে ভাবেন না তাই । সমস্যা গুলো মাঝে মাঝে এক সাথে আসবে , কখন ও কখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আসবে । আর সমস্যা সব সময় দল বদ্ধ ভাবে চলতে পচন্দ করে । তাই তারা যার উপর ভর করে একসাথে সব দিক থেকে করে । আর সেটাকে জয় করতে পারলেই আপনি হবে সফল , আর না হয় , ওই কাজ থেকে আপনাকে পিচ পা হতে হবে । ব্যর্থ হবে বলছি না । কারণ আমি এই বাক্যটার সাথে সব সময় দ্বিমত পোষণ করে আসছি , কারণ কোন কাজেই কেউ ব্যর্থ হয়না , হতে পারে সে গন্তব্যে পৌছাতে পারে নি । কিন্তু তাই বলে সে ব্যর্থ না । ব্যর্থ সেটাকেই বলা যায় , যেখান থেকে আপনি কিছুই পান নি । কিন্তু আপনি যখনই কিছু করার উদ্দোগ নিবেন , তখন গন্তব্যে পৌছাতে না পারলেও কিছুনা কিছু পাবেন । একে বারে না হলে ও বুঝতে পারবেন ওই কাজটা আপনার দ্বারা সম্ভব না । যদি চেষ্টাই না করতেন তবে কি সেটা বুঝতে পারতেন ? তাই বলছি কেউ কখনই ব্যর্থ হয় না । আর যদিও হয় , তবে সেটাই তার সফল হওয়ার সিড়ি হিসেবে কাজ করে ।
আপনি একটা উদ্দোগ নেন । যেটা সর্ম্পকে কেউ তেমন জানেনা । তখনই দেখবেন , সবাই আপনাকে সুন্দর ভাবে বুঝাতে শুরু করবে , এইসব পাগলের কাজ , তুমি কেন এইসব করতে যাও । কারণ আমরা সবাই গতানুগতিক কাজ করতে পচন্দ করি , আমার বড় ভাই চাকুরী করে আমি ও সেটা করবো , কিন্তু সমাজে অন্যতম একজন হতে হলে , আপনাকে একটু ব্যতিক্রম কাজ করতে হবে । আর সেটা যারা করতে পারে , তাদের নিয়েই আজ আলোচনা হয় ।
আপনি যখন উদ্যোক্তা:
কাজ শুরু করেন , প্রথম বাধাটা পরিবার থেকেই আসবে । বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে শুরু করবে । তারপর পরিচিত লোকজনেরা সেই দ্বায়িত্বটা নিয়ে যাবে । দেখা যাবে , আপনি কারোর কথাই শুনেন নি । আপনি আপনার গতিতে চলতে শুরু করেছেন , তখন আপনার পাশে কেউ নেই । আপনি একা , আপনার চারপাশে টাকা , কিন্তু চাইলেই বলবে নাই । যাদের জন্য আপনি এক সময় অনেক কিছু করেছেন , আজ তারাও আপনাকে এড়িয়ে চলতে চাইবে । কাউকে ভালোর কথা জিজ্ঞাস করার জন্যে ফোন করলে ও সে অন্য কিছু ভেবে আপনাকে বলবে উনি এখন ব্যস্ত । পরে কথা বলবে , সেই পরটা কবে হবে , সেটা আপনি ওনি কেউ জানেনা । আপনার মোবাইল চুরি হয়ে যাবে । মানি ব্যাগ হারিয়ে যাবে । এই সব অন্যদের ও হয় , কিন্তু আপনার যখন হবে , তখন আপনার কাছে ওটাই থাকবে , একমাত্র সম্বল , তাই অনেক কষ্ট হবে । বই পড়ে আপনার মনে হয়েছিলো সফলতাটা বোথ হয় দরজার ও পাশেই আছে , কেবল দরজাটা খুলবেন আর সে আপনার ঘরে ঢুকে পড়বে , কিন্তু বাস্তবতা সেটা নয় , সে অনেক কঠিন । যারা আপনাকে একটা সময় উৎসাহ দিয়েছে , দিনে দিনে তারাও একটু একটু করে দুরে সরে যাবে । অনেকেই আশঅ দিবে , চালিয়ে যাও , আমরা আছি , কোন সমস্যা নাই , কিন্তু কাজের বেলায় দেখবেন কারোর কোন দেখা নাই । পরিবার পরিজন , অনেক রকম কথা শুনাবে । আর আপনিও সেগুলো শূনে যাবেন কারণ আপনি একজন উদ্দোক্তা তাই । নিজে অসুস্থ হয়ে পড়বেন । আর যদি বউ থাকে তাহলে তো আর কথাই নাই , সেই কি প্যারা । তখন বুঝবেন । আজ বউ অসুস্থ , আর বাচ্চা থাকলে কি হবে সেটা আর বলবোই না । আশ্বাস করা হয়েছিলো হাতে টাকা আসলেই আপনাকে দিবে , কিন্তু আপনার চোখের সামনেই আপনার সেই আপন লোক গুলো টাকা নিয়ে খেলবে , কিন্তু আপনাকে দিবে না । আপনি কেবলই চেয়ে দেখবেন । একদিন দু-দিন করে আপনার মনোবল হারাতে শুরু করবে । যদি একে বারে হারিয়ে যায় , তবে তো আর কারোর সাথে কথাই বলতে পারবেন না । তখন নানান রকম কথা শুনাবে সাবাই , আর যদি চেষ্টা চালিয়ে যান , তখন আবার দেখবেন , অনেকের মন আপনার জন্য কাধতে শুরু করবে , অনেকটা জ্ঞানী ব্যাক্তির ন্যায় বলবে , কেন যে এই সব পাগলামি করিস , এখন ও সময় আছে , একটা চাকুরী খুজে নে ।
আপনি কেন সফল হবেন :
আপনি সফল হবেন কারণ এই সকল কথা গুলো আপনাকে শুনতে হচ্ছে তাই , আপনি ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করছেন তাই । আজ সবাই আপনাকে অবহেলা করছে তাই , আপনাকে দেখলে সবাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে বলেই আপনি সফল হবেন , যদি না কারোর কথায় মন খারাপ না করে , সেটাকে শক্তিতে রূপান্তর করে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন থাকে তবেই ।
Discussion about this post