নিউজ ডেস্ক
বরগুনার তালতলী উপজেলার এমএ মুনঈম সাগর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার-২০২০ এর জন্য মনোনীত হয়েছে। তাকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়ে নেদারল্যান্ড সরকারের পিচ রাইটস কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠনো হয়েছে। শিশুদের জন্য এটি নোবেল পুরস্কার নামে পরিচিত।
তালতলী উপজেলার চামোপাড়া গ্রামের শাহ মো. হুমায়ুন সগির ও মোসা. মনিরা বেগম দম্পতির বড় সন্তান এমএ মুনঈম সাগর। ছোটবেলা থেকেই মুনঈমের শিশু অধিকার বাস্তবায়নের প্রতি ছিল অদম্য ইচ্ছা। তারই ধারাবাহিকতায় মুনঈম শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন।
শিশু অধিকারের প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা শাহ মো. হুমায়ুন সগির ছেলেকে সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ জোগান এবং প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ডিজাবল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট বিডিডিটি নামের একটি সংগঠন। ওই সংগঠনের টাইগার্স অব বাংলাদেশ শাখার প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার মুনঈম সাগর।
এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাত্র ৯ বছর বয়সে অসহায়, গৃহহীন, মাতৃহীন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য কাজ করছেন সাগর। তার কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের নজরে আসে মুনঈম সাগরের কার্যকলাপ। আস্তে আস্তে তার কাজের পরিধি দেশ গড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
মুনঈম শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে অসহায় শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছেন। মুনঈম সাগর বর্তমানে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান শাখার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। অধিকারবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে মুনঈমের অনেক লেখা বাংলাদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন দক্ষ সঙ্গীত শিল্পীও।
মুনঈমের মা মুনিরা বেগম পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা। বাবা শাহ মো. হুমায়ুন সগির একজন সরকারি চাকরিজীবী। তার বাবা আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। মুনঈম তার এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জাপান সরকারের ‘সেভেন মিতসুবিসি জাপান এএনআইকেকেআই ফেস্ট বেস্ট ক্রিয়েটিভ অ্যাওয়ার্ড-জাপান সরকার ২০১৩’ এবং বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সেরা সমাজকর্মী-২০১৭, বেস্ট স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৭, জাতীয় সেরা স্কাউট মোটিভেটর অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ পুরস্কারের মতো ১৫টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
গত ১৩ অক্টোবর মুনঈমকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার-২০২০ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়ে নেদারল্যান্ডস সরকারের পিচ রাইটস কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
মুনঈম সাগরের বাবা শাহ মো. হুমায়ুন সগির বলেন, আমার ছেলের এ অর্জন শুধু বরগুনাই নয় বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। আমার ছেলে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হওয়ায় সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
মা মুনিরা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই মুনঈম মানুষের প্রতি দরদী ছিল। অসহায় শিশুদের দেখলে তাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যেত। এখনও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হয়েছে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
এমএ মুনঈম সাগর বলেন, শৈশবে আমার দুই বন্ধু খাবার ও ওষুধ না পেয়ে মারা যায়। ওই ঘটনা আমাকে খুব ব্যথিত করে। এরপর থেকে নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করি শিশুদের নিয়ে একটা কিছু করার। ওই ব্যথাকে বুকে ধারণ করেই লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করি। এ পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার অধিকারবঞ্চিত শিশুদের তাদের অধিকার প্রাপ্তিতে ভূমিকা রেখেছি। এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয়ভাবে ১৫টি পুরস্কার পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়ে নেদারল্যান্ডস সরকারের পিচ রাইটস কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে। আমি যাতে সফল হতে পারি তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।
Discussion about this post