নিউজ ডেস্ক
শহীদ শেখ রাসেলের শিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেছেন, মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের কচি মনে। তার শিশু মন ছিল মানবিকতায় ভরা।
শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েবটিম আয়োজিত ওয়েবিনারে তার গৃহশিক্ষিকা এভাবেই নিজের ছাত্রের মেধা ও কোমল মনের অকৃত্রিম প্রশংসা করেন ।তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেলকে একবার যেটা শিখিয়েছি, তা সে কোনোদিন ভোলে নাই।’
শেখ রাসেলকে পড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার সামনে পরীক্ষা থাকায় শেখ রাসেলকে পড়াবো না বলে আমি মানা করে দেই। এই কথা শুনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বললেন ৩০ মিনিট? আমি বললাম, তাও সম্ভব না। তিনি আবার বললেন ২০ মিনিট? আমি চুপ করে রইলাম, মানে ২০ মিনিটও সম্ভব না। তারপর তিনি আবারও বললেন- ১৫ মিনিট? তখন আমার কাছে মনে হলো, একজন মা তার ছেলের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় চাইছেন, এই সময়টুকু তো আমার দেওয়া উচিত। আমি চেঞ্জ হয়ে গেলাম। তারপর আমি কাকিমার (বঙ্গমাতার) দিকে তাকিয়ে বললাম, এই রাস্তায় কি বাস চলে? নইলে আমি যাতায়াত করবো কীভাবে? আমার তখনো এই বোধটুকু নেই যে, আমি কাকে যাতায়াতের কথা বলছি। তখন বঙ্গমাতা বললেন- আপনি পড়াবেন? তাহলে যাতায়াতের ব্যবস্থাটুকু আমিই করবো।’
এর পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘শেখ রাসেলকে যেটা শিখিয়েছি সে তা কোনোদিন ভোলে নাই। শেখ রাসেল একবার বলে- আমি আর অঙ্ক করবো না। আমি প্রশ্ন করলে বলে- আমার ইচ্ছে করে না। এরপর আমি চিন্তা করলাম, কীভাবে শেখানো যায়। বললাম যে, তুমি স্কুলে চকলেট নিয়ে যাও? সে বললো- হ্যাঁ, আমি বললাম, একা একা খাও তাই না? রাসেল বললো- নাহ, একা খাই না, বন্ধুদের দিয়ে খাই। তখন বললাম, এই যে তুমি দুইটা অঙ্ক রেখে দিলে, তারা কষ্ট পাবে না? রাসেল বললো- কেন কষ্ট পাবে? ওরা কী কথা বলতে পারে? খুব অবাক ও! আমি বললাম, এই যে আমাদের বাংলাদেশ আছে, তেমনই একটা অঙ্কের দেশ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। কষ্ট পেয়ে যাবে। এরপর রাসেল টপ টপ করে দুটো অঙ্ক করে বলে- এখন তো আর ওরা রাগ করবে না। এখন তো আর অঙ্কের দুঃখ নাই।’
কথাসাহিত্যিক ও শিশু একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমি তাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রতীকী শিশু হিসেবে দেখি। রাসেলের হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে একটি ছবি আছে, তা দেখলে আমার কাছে প্রতীকী অর্থে সে বড় হয়ে যায়। ছোট বেলা থেকেই দেশাত্ববোধ ছিল তার মাঝে। একেবারে পরিবার থেকে পাওয়া।’
ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘রাসেলের কথা বলতে গেলে আমার ১৫ আগস্টের কথা মনে পড়ে যায়। সেদিন কী ভয়ঙ্কর রূপ ছিল, আমরা তো পাশেই ছিলাম। গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। ছোট্ট শিশুর মনের অবস্থা সেদিন কী হয়েছিল! আর যেই পাষণ্ডরা এই বাচ্চার বুকের ওপর গুলি চালালো, তারা কীভাবে পারলো। তাদের কি একটুও মায়া হয়নি? একটুও হাত কাঁপেনি? একটুও বুক কাঁপেনি? আজকের দিনে এটুকু চাই ও যেখানে থাকে, যেন ভালো থাকে, ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
এতে আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, বিশিষ্ট অভিনেতা ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ১৮ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বর ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারাতে হয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু রাসেলকে।
Discussion about this post