১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর বাংলায় এক প্রচন্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়। স্বভাবতই এই সময় শিক্ষা ক্ষেত্রেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কার্জনের শিক্ষা সংস্কার এমন এক সময়ে শুরু হয় যখন একে অবশ্যম্ভাবীরূপে শিক্ষার আমলাতান্ত্রিকীকরণের সাথে সমার্থক বিবেচনা করা হয়। পাঁচ বছরের অদম্য প্রচেষ্টার পরও কার্জন জনগণকে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হন। অপর দিকে, বন্ধন দৃঢ়করণের ফলে কার্জনের নীতি এবং পদক্ষেপ বিপ্লবী জাতীয়তাবাদের উত্থানের ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করে। এ নতুন বিপ্লবী জাতীয়তাবাদ শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাসমূহের প্রকৃতি পরীক্ষা করার এবং সম্ভব্য সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, এ নতুন বিপ্লবী জাতীয়তাবাদ শিক্ষা বিভাগের দ্রুত ভারতীয়করণ, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভারতীয় ভাষাসমূহ গ্রহণ, সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাস শিক্ষাদান এবং ছাত্রদের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করার দাবি করে। কার্জনের প্রশাসনিক নীতিসমূহ জাতীয় শিক্ষার জন্য প্রথম সংগঠিত আন্দোলন সৃষ্টি করে। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কলকাতায় একটি জাতীয় কলেজ এবং একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাংলায় একান্নটি জাতীয় স্কুলের ভিত্তি স্থাপন করে। কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশন (১৯০৬)-এর লক্ষ্য হিসেবে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে এ আন্দোলন ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করে। স্বদেশী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়লে অধিকাংশ জাতীয় বিদ্যালয়গুলি পরিণামে বন্ধ হয়ে যায়। এ আন্দেলনের প্রভাব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলায় বোলপুরের কাছে শান্তিনিকেতনে ১৯০১ সালে তাঁর বিখ্যাত বিদ্যালয় শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য জাতীয়তাবাদীদের দাবি সর্ব-ভারতীয় মুসলিম লীগের এলাহবাদ এবং নাগপুর অধিবেশনে উচ্চারিত হয়।
কার্জন-এর উত্তরাধিকারিগণ মূল উদ্দেশ্যকে নির্বিঘ্ন রেখে শিক্ষানীতি কিছুটা সংশোধন করেন। কার্জনের সংস্কারের প্রতি বিরূপ জনমত সত্ত্বেও তাঁর শাসনামলে শিক্ষার উন্নতি উল্লেখযোগ্যভাবে সাধিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পুনঃস্থাপন ও পুনর্গঠিত হয়েছিল এবং সেগুলির পরীক্ষা গ্রহণ ও ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা অব্যাহত রেখে সেগুলিকে শিক্ষা দানকারী সংস্থার রূপ দান করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োজিত পরিদর্শকগণ নিয়মিতভাবে কলেজগুলি পরিদর্শন করতেন। সরকারও সতর্ক ভূমিকা গ্রহণ করে এবং বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিকে স্বীকৃতি প্রদানের উন্নততর ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। বিশৃঙ্খল প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে। মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ হয়।
১৯১৭ সালের ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি কমিশন স্যার মাইকেল স্যাডলারের নেতৃত্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে এক তদন্ত পরিচালনা করে। এর মৌলিক উদ্দেশ্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে কেন্দ্রীভূত থাকলেও এর প্রাপ্ত তথ্যাদি ও প্রস্তাবসমূহের গুরুত্ব ছিল সর্ব ভারতীয়। মধ্যবর্তী কলেজসমূহ প্রতিষ্ঠাসহ কমিশন একটি মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড গঠনের সুপারিশ করে। এ কলেজগুলি দুবছর মেয়াদী একটি পাঠক্রম অনুসরণ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং উচ্চ-মাধ্যমিকোত্তর পর্যায় হবে তিন বছর মেয়াদী একটি স্নাতক পাঠক্রম। শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান এবং একক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতকোত্তর ও অনার্স পাঠক্রমগুলি অগ্রাধিকার লাভ করবে। বিজ্ঞান চর্চা, টিউটোরিয়াল ও গবেষণা কাজের উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নারী শিক্ষা সম্পর্কে কমিশন সুপারিশ করে যে, হিন্দু এবং মুসলমান বালিকা, যাদের পিতা-মাতা তাদের ১৫ অথবা ১৬ বছর পর্যন্ত শিক্ষা দান করতে আগ্রহী, তাদের জন্য পর্দাস্কুল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। কমিশন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় নারী শিক্ষার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করে, যা মহিলা কলেজসমূহে শিক্ষাদানের জন্য সহযোগিতামূলক ব্যবস্থার আয়োজন করবে। এ পর্ষদ বিশেষ করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা পাঠক্রম প্রস্ত্ততির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঢাকা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বিভাগ সৃষ্টি করতে হবে এবং উচ্চ মাধ্যমিক, বি.এ এবং এম.এ পরীক্ষায় শিক্ষাকে আলাদা বিষয় হিসেবে প্রবর্তন করতে হবে।
ভারত সরকার এ প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলি সংক্ষিপ্ত আকারে ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে একটি প্রস্তাব আকারে প্রকাশ করে। তখন থেকে উচ্চ-শিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সম্পর্কে যে, কোন আইনে কম-বেশি এ প্রতিবেদনের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করত।
কার্জনের নীতিসমূহ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বৃহত্তম অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করায় ১৯০৫ এবং ১৯১২ সালের মধ্যে এর দ্রুত সম্প্রসারণ সাধিত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর প্রস্থানের পর সরকার শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের পক্ষে তার অভিমত ব্যক্ত করে। ফলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নীতি বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী জনমত অবশ্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষেই ছিল। ১৯১০ এবং ১৯১৩-এর মধ্যে গোখলে সরকারকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষানীতি গ্রহণ করার জন্য সাহসিকতার সাথে জোর প্রচেষ্টা চালান। বোম্বাই আইন পরিষদ পৌর এলাকায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য বিটলভাই জে. প্যাটেল-এর প্রস্তাবিত বিল গ্রহণ করে, যা পরিণামে ১৯১৮ সালে বোম্বাই প্রাথমিক শিক্ষা আইনে পরিণত হয় এবং তা পরবর্তীসময়ে প্রণীত আইনের আদর্শ হিসেবে ১৯২১ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিল।
১৯১৯ সালের আইনে শিক্ষা হস্তান্তরিত বিষয়ে পরিণত হয় এবং প্রায় সম্পূর্ণভাবে এর দায়িত্ব প্রদেশগুলির উপর অর্পিত হয়। প্রত্যেক প্রদেশে, শিক্ষানীতি ও প্রশাসনের দায়িত্ব প্রাদেশিক আইন পরিষদ এবং চূড়ান্তভাবে জনগণের নিকট দায়ী শিক্ষামন্ত্রীর ওপর অর্পিত হয়। ইউরোপীয় রীতির শিক্ষা সংরক্ষিত বিষয় হিসেবে রাখা হলেও এটি ভারতীয় শিক্ষামন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে এ অনিয়ম চূড়ান্তভাবে সংশোধিত হয়। এর দ্বারা ‘হস্তান্তরিত’ এবং ‘সংরক্ষিত’ বিষয়সমূহের পার্থক্য চূড়ান্তভাবে বিলুপ্ত করা হয় এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রদেশগুলিকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়।
১৯১৯ সালের আইনের দ্বারা সূচিত শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনসমূহ ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং এ আন্দোলন বিলাতি প্রতিষ্ঠান ও দ্রব্যসমূহ বর্জন করার নির্দেশ দেয়। শিক্ষা বিষয়ক পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী জাতীয় বিদ্যালয়সমূহ খোলা এবং নির্বাচিত কেন্দ্রসমূহে বিদ্যাপীঠসমূহ (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত এ জাতীয়তাবাদী জোয়ার বেশিদিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। প্রচন্ড সরকারি বিরোধিতার মুখে এবং উপযুক্ত যন্ত্রপাতি, দালানকোঠা, অর্থ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অভাবে এ আন্দোলন তার উদ্দ্যম হারিয়ে ফেলে।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রীদের অবস্থান আরো জোরদার করে। প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার, বয়স্ক শিক্ষার প্রবর্তন, পেশাভিত্তিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ এবং নারী শিক্ষা ও অপরাপর অ-সুবিধাভোগী শ্রেণির শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ – প্রভৃতি প্রাদেশিক সরকারসমূহের উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাদেশিক সরকারসমূহ কর্তৃক দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন প্রণয়ন ছিল ১৯২১ এবং ১৯৪৭-এর মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক বৈশিষ্ট্য। এ আইনসমূহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের নিজ নিজ এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার ক্ষমতা প্রদান করে।
এক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল গান্ধীর মৌলিক শিক্ষা পরিকল্পনা প্রবর্তন। গান্ধীর কর্মসূচি পরিকল্পনা করা হয়েছিল ছাত্রদেরকে কতিপয় মৌলিক পেশায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য বিষয় বেছে নেওয়ার অধিকার প্রদান, যা পরে তাদের অর্থ উপার্জনের উৎস হতে পারে। এটি ছিল জীবনের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে শিক্ষার যোগসূত্র স্থাপনের একটি সচেতন পদক্ষেপ।
মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটে। ১৯৪৬-৪৭ সালে তালিকাভুক্ত ২১,৯৯,০০০ ছাত্রসহ উচ্চবিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৫২৯৮; অথচ ১৯১৬-১৭ সালে ছাত্র সংখ্যা ছিল ৯৭,২০০ জন এবং স্কুলের সংখ্যা ছিল ১৫০৭টি। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষার দাবি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে গ্রাম ও উপ-শহরে স্কুলসমূহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এসব স্কুলে স্বল্পোন্নত সম্প্রদায়গুলি অংশগ্রহণ করতে পারত। এসময় নারী শিক্ষার প্রতিও যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়। ১৯২১-২২ এবং ১৯৪৬-৪৭ সময়কালের মধ্যে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
বেসরকারি ভোকেশনাল বিদ্যালয়গুলিকে বিপুল আর্থিক অনুদান দিয়ে প্রাদেশিক সরকারসমূহ কারিগরি, বাণিজ্যিক ও কৃষি স্কুলগুলির উন্নতি সাধন করলে পেশাভিত্তিক শিক্ষা যথার্থ পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তহবিল ঘাটতি এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব শিক্ষার উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় ছিল। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি তখনও কলেজে কলা এবং বিজ্ঞান পাঠক্রমে ছাত্রদেরকে ভর্তির জন্য প্রস্ত্তত করতেই ব্যস্ত ছিল।
এ সময়ে (১৯১৬-১৭ হতে ১৯৪৬-৪৭) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয় এবং সমগ্র একক ও অধিভুক্ত ধরনের ১৪টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল শিক্ষা সম্প্রসারণ কর্মসূচির অংশবিশেষ। নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রশাসনিক অঙ্গের গণতন্ত্রায়ণ ঘটে। নতুন নতুন অনুষদ, পাঠ্যক্রম ও গবেষণা প্রকল্পগুলি চালু হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়। এর ফলে মহাবিদ্যালয় এবং তালিকাভুক্ত ছাত্রদের সংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে। সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ছাত্রদের শারীরিক শিক্ষা এবং চিত্তবিনোদনকারী কর্মকান্ডের ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পর্ষদ গঠন এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কার্যকলাপের উন্নয়নের জন্য শিক্ষাঙ্গনের জীবনে নতুন গতি সংযোজিত হয়।
Discussion about this post