নিউজ ডেস্ক
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সহযোগী সংগঠন ও এডুকেশন ওয়াচ। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষে স্মারকলিপি দিয়ে পরীক্ষা বন্ধ এবং প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা না করার আহ্বান জানানো হয়। করোনা মহামারি ও করোনা পরবর্তীতেও এই পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বরাবর স্মারকলিপি দেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও এডুকেশন ওয়াচের সদস্য সচিব রাশেদা কে চৌধুরী। স্মারকলিপিতে গণস্বাক্ষরতা অভিযান, এর সহযোগী সব সংগঠন এবং এডুকেশন ওয়াচের শতাধিক সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে মুখস্থ নির্ভরতা, গাইড-বই অনুসরণ, কোচিং বাণিজ্য ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের প্রসার না ঘটিয়ে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রথিতযশা সকল শিক্ষাবিদের মতে, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রবর্তিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই পরীক্ষাটি মুখস্থ নির্ভরতা, গাইড-বই অনুসরণ, কোচিং বাণিজ্য ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের প্রসার ঘটিয়েছে। বিদ্যালয়ের পাঠদান এবং শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ জ্ঞান অর্জন থেকে সরে পরীক্ষামুখী হয়ে গেছে।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্মারকলিপিতে বলা হয়, গণস্বাক্ষরতা অভিযান সম্প্রতি ঢাকার বাইরে ৮টি এলাকায় অংশীজনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ৮টি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। ওইসব সভায় শিক্ষক, অভিভাবক, এসএমসি সদস্য এবং উপজেলা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ওপর অহেতুক চাপ কমানো এবং কোচিং বাণিজ্যের লাগাম টানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের জোরালো প্রস্তাব এসেছে।
প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ২০১৮ সালে সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন ‘প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’
সম্প্রতি স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তার একটি বক্তব্যে বলেছেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে নানাবিধ চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা জানতে পেরেছি। মন্ত্রণালয় একটি প্রাইমারি শিক্ষাবোর্ড’ গঠন করে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাকে স্থায়ীরূপ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। যা শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ -এর দিকনির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
স্মারকলিপিতে সুপারিশ তুলে ধরা বলা হয়, শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যায়ন শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি প্রধান উপাদান। এক্ষেত্রে বহু দেশে প্রচলিত ব্যবস্থা হচ্ছে স্কুল শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রমিত মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন ও বিদ্যালয়ের কার্যকারিতা যাচাই করা। প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষা ও গণিতের দক্ষতা পরিমাপ করা হয়। মূল্যায়নের অন্যান্য দিক প্রতি বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থায় যাচাই করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এই জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা মনে করি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পরিবর্তে এই পদ্ধতিটিকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতি এবং করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা যেখানে সরকারের প্রাধিকারভূক্ত একটি বিষয় সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থায়ী করা হবে একটি নেতিবাচক পদক্ষেপ। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন ও ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা করার কোনও বিকল্প নেই।
Discussion about this post