আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আগত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এমনিতেই কমছে। এর মধ্যেই সংখ্যা আরও কমাতে নতুন বিধিনিষেধ আনার চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত মাসে ফেডারেল রেজিস্টারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত বিধিটি ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত মার্কিন নাগরিক ও সংস্থাগুলোর মতামতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এরপরই এই বিধিমালা সম্পর্কে মূল্যায়ন ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।যদি এই নিয়মটি পাস হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে গত প্রায় ২০ বছরের মধ্যে এটিই হবে সবচেয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন।
প্রস্তাবিত এই নীতিতে এখন পর্যন্ত ২২ হাজারেরও বেশি মন্তব্য পড়েছে। পাবলিক ফোরামের অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার যে প্রবণতা নতুন বিধিনিষেধকে তার সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এটি খুব কমই কাজ করবে।
এই পরিবর্তনের জন্য বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চার বছরের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। আফ্রিকার দেশগুলোতে এবং আফগানিস্তান, ইরান ও ইরাকে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য এ সুযোগ থাকবে মাত্র দুই বছরের জন্য।
বিদ্যমান নিয়মে যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ভিসার শর্তাদি মেনে চলেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারেন।
একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের জন্য লেখা এক নিবন্ধে এ বিষয়ে কথা বলেছেন মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ডেভিড এল ডি মারিয়া। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিধি দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোনও ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায় কি না; তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী একাডেমিক প্রতিভা আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে আরও দুর্বল করে দেবে।
গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ চার বছরের মধ্যে স্নাতক হন। তাদের বেশিরভাগই আবার বাড়তি ডিগ্রি নিয়ে থাকেন।
ডেভিড এল ডি মারিয়া বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নতুন নিয়মে কিছু শিক্ষার্থীদের বাড়তি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এবং তাদের শিক্ষাগত স্বপ্ন ত্যাগের মধ্যে যে কোনও একটি অসম্ভবকে বেছে নিতে হবে।’
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এই ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বৈধ শিক্ষার্থীদের দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া নিশ্চিত করবে।
কোভিড -১৯ মহামারি এবং বিদ্যমান কঠোর ভিসা নীতি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিয়েছে।
ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক-এর র্যাংক বলছে, গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২০ এমবিএ প্রোগ্রামে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হার ১৪ শতাংশ কমেছে।
বেশিরভাগ বিদেশী শিক্ষার্থী টিউশন ফি-র পুরো অর্থ প্রদান করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এই অর্থ কম খরচে দেশীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে সহায়ক।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভাড়া ও অন্যান্য খাতে যে ব্যয় করে যা মার্কিন অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ১০ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মার্কিন অর্থনীতিতে আনুমানিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের অবদান রেখেছে।
Discussion about this post