১) বিসর্গ ও কোলন
আমরা প্রায়ই শিরোনাম বা প্রধান লেখার পরে বিসর্গ ব্যবহার করি, অতঃপর বিসর্গের পরে বিস্তারিত বক্তব্য লিখি। এটি ভুল। মনে রাখতে হবে, বিসর্গ একটি অক্ষর, ফলে আমরা যেখানে ‘বিসর্গ’ ব্যবহার করি সেটি আসলে বিসর্গ না হয়ে ‘কোলন’ হবে। যেমন- বাক্য পাঁচ প্রকারের, যথাঃ এখানে যথার পরে বিসর্গ দেওয়া হয়েছে, এটি ভুল; এখানে কোলন (:) হবে। সেক্ষেত্রে এটা হবে- বাক্য পাঁচ প্রকারের, যথা:
২) স্পেসের ব্যবহার
দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোলন এসবের পর সবসময় একটা স্পেস হবে, তবে আগে কোন স্পেস হবেনা। ভুল: সাবরিনা অনেক ভাল,সুন্দর ,লক্ষ্মী ও ভদ্র একটা মেয়ে।সে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত থাকে। শুদ্ধ: সাবরিনা অনেক ভাল, সুন্দর, লক্ষ্মী ও ভদ্র একটা মেয়ে। সে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত থাকে। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে কোলনের আগে স্পেস ব্যবহার করতে দেখা যায়। আসল নিয়মটা হলো কোলনের আগে অর্ধ-স্পেস ব্যবহারের। কিন্তু ইউনিকোডে অর্ধ-স্পেস সাপোর্ট না করায় কোলনের আগে কোন স্পেস ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
৩) ডটের (.) ব্যবহার
বাংলায় সংক্ষিপ্ত শব্দে ডট ব্যবহার হবে। যেমন- ড. (ডক্টর), লি. (লিমিটেড), মি. (মিস্টার) ইত্যাদি। ইংরেজিতে Govt. (Government), Ltd. (Limited), Mr. (Mister), Dr. (Doctor)। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপে (Abbreviation) ডট ব্যবহার না করাই ভালো। যেমন— SSC, HSC, SMS, MMS, BCS, BA; বাংলায় এসএসসি, এইচএসসি, এসএমএস, এমএমএস, বিএ, বিকম ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ডট ব্যবহার করা ভুল নয়, তবে আমাদের দ্বারা ভুলের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- BSc, PhD লিখতে গিয়ে B.S.C., P.H.D. লেখা। BSc, PhD-তে ডট ব্যবহার এভাবে হবে B.Sc., Ph.D. শুধু মাঝে ডট দিলে চলবে না (B.Sc, Ph.D) অর্থাৎ Sc. ও D.-এর পরেও ডট হবে; অনুরূপ বাংলাতেও। সুতরাং ভুল এড়াতে এবং বাংলা বানানের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ডট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এসব শব্দে হাইফেন ( – ) বা কমাও ( , ) ব্যবহার করা যাবে না।
সাধারণ ভুল-২
৪) কি ও কী
কি: যেসব প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দ্বারা দেওয়া যায়, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে ‘কি’ ব্যবহৃত হবে। যেমন: সাবরিনা কি আমাকে চেনে? তোমার নাম কি যুক্তিযুক্ত? অনিমেষ কি গিয়েছিলে? কি শীত কি গ্রীষ্ম! মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই ‘কি’ শব্দটি হচ্ছে অব্যয় পদ। অন্য বর্ণের সাথে একসঙ্গে ‘কি’ এর ব্যবহার হয়। যেমন: কিনা- ফারিহা আজ কলেজে যাবে কিনা জানি না। নাকি- তানি আজ দুপুরে নাকি ভাত খায়নি। কিরে- কিরে বন্ধু, আজ ক্লাস করবি না? কিসে- হা হা, কিসে কী হল। (‘কি’ ও ‘কী’ একসঙ্গে লেখা) কী: যেসব প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দ্বারা দেয়া যায় না, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায়না সেক্ষেত্রে ‘কী’ ব্যবহৃত হবে। যেমন: তোমার নাম কী? নিশাত কী বলতে চাও, বলো? কী বিষয়ে অনার্স করছো? কী থেকে তেল হয়? কী জন্য রেগে গেলে? মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই ‘কী’ শব্দটি হচ্ছে সর্বনাম পদ। বিভিন্ন পদরূপে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়। যেমন: কী আনন্দ! – বিশেষণ কী সুন্দর! কী অপরূপ! – বিশেষণের বিশেষণ তুমি কী খাবে? – সর্বনাম কীভাবে? – ক্রিয়া-বিশেষণ। (কীভাবে বানানটি নিয়ে মতদ্বৈততা আছে, কেউ বলেন এটা হবে ‘কিভাবে’)
‘কি’ এবং ‘কী’ ব্যবহারের ভুলটি আমাদের সবচেয়ে বেশি হয়। সিংহভাগই আমরা সব জায়গায় কি ব্যবহার করি। অথচ কেবল ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ বোধক উত্তর যেসব প্রশ্নের হয় সেসব ক্ষেত্রে ‘কি’ হবে। একটু খেয়াল করে কয়েকদিন চর্চা করলেই ভুলটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। উত্তরের পার্থক্যটা মাথায় রেখে লিখলেই ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
৫) ‘কালীন’ মানেই ‘সময়’
মনে রাখা দরকার ‘কালীন’ মানেই ‘সময়’। ফলে এ দুটি শব্দ একসাথে বসে না। ভুল: সমকালীন সময়ে শুদ্ধ: সমকালীন ভুল: খেলা চলাকালীন সময়। শুদ্ধ: খেলা চলাকালে/ খেলা চলার সময়ে ভুল: গর্ভকালীন সময়ে। শুদ্ধ: গর্ভকালীন/গর্ভাবস্থায়
৬) এক বচন ও বহু বচনের ভুল
ভুল: সব বন্ধুদেরকে বলেছি। শুদ্ধ: সব বন্ধুকে বলেছি।
সাধারণ ভুল-৩
৭) ন ও ণ
ঋ, র, ষ বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়; যেমন: ঋণ, বর্ণ, কারণ, ধারণা, দারুণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা। যদি ঋ, র, ষ বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ থাকে; তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়; যেমন : কৃপণ, নির্বাণ, নির্মাণ, পরিবহণ, গ্রহণ, শ্রবণ। ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়, যেমন : বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড, ঘণ্টা। বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না, যেমন : ধরেন, মারেন, করেন। বিদেশী শব্দের দন্ত্য-ন কখনোই মূর্ধন্য-ণ হয় না; যেমন : কোরান, জার্মানি, ফরমান, ফ্রান্স, রিপন, লন্ডন, ড্যান্ডি, ইন্ডিয়া/ ইনডিয়া, প্রিন্ট, পেন্টাগন, মডার্ন, ইস্টার্ন, পর্নোগ্রাফি, কর্নার, বার্ন, হর্ন, পপকর্ন। সন্ধি বা সমাসনিষ্পন্ন শব্দে ণ হয় না; যেমন: দুর্নীতি, দুর্নিবার, দুর্নাম, ত্রিনয়ন। মানুষ “ন আর ণ”-এই দুটোর মধ্যে এতো বেশি গোল পাকায়, এটা ধারণার বাইরে। ছোটোখাটো বানান, যেমন- কারণ, নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ বানানেও অনেকেই দেদারসে ‘ন’ ব্যবহার করে। অথচ এসব জায়গায় ‘ণ’ হবে। বিশেষ দ্রষ্টব্য: ধারণা ও দারুণ বানানে ণ হলেও ধরন ও দরুন বানানে ন। বর্ণ থেকে উদ্ভূত বরনে ন হলেও বরণ করে নেয়ার বরণে ণ। এছাড়া ধরনা, ঝরনা/ঝর্না বানানে ন।
৮) দরিদ্র ও দারিদ্র্য
‘দরিদ্র’ বিশেষণ আর ‘দারিদ্র্য’ ও ‘দরিদ্রতা’ বিশেষ্য। ‘দারিদ্রতা’ বলে কোনো শব্দ নেই।
৯) স্মরণ ও সরণ
‘সরণ’ মানে রাস্তা, সরণ থেকে ‘সরণি’। যেমন- রোকেয়া সরণি, বিজয় সরণি, প্রগতি সরণি। স্মরণ মানে মনে করা। যেমন- স্মরণসভা। সরণির সাথে স্মরণের কোনো সম্পর্ক নেই।
১০) পরা ও পড়া
‘পরা’ আর ‘পড়া’ এক না। কেবল পরিধান করা অর্থে ‘পরা’ এবং বাকি সব ক্ষেত্রে ‘পড়া’। যেমন- পরা: আমি পাঞ্জাবি পরি। বাবা চশমা পরেন। সে শাড়ি পরেছে। চাচি বোরকা পরতেন। মা শাড়ি পরেছেন। নানি চাদর পরতেন। সেদিন নীল পাঞ্জাবি পরেছিলাম, আজ লাল পাঞ্জাবি পরব। সাবরিনা চোখে কাজল পরতে পছন্দ করে। কোনোমতে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। আমি কারোটা খাইও না, পরিও না। সেদিনের ঐ শাড়ি-পরা বালিকাটিকে আর কোথাও দেখিনি। কে শাড়ির ওপর ব্লাউজ পরল, আর কে ব্লাউজের ওপর শাড়ি পরল; তাতে কার কী আসে-যায়? যার যা ইচ্ছে, পরুক! পড়া: সে বই পড়ে। বৃষ্টি পড়ছে। সে প্রেমে পড়েছে। তিনি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন প্রশ্ন কমন পড়েনি। শেয়ারবাজার পড়ে গেছে। বই পড়ছি। গাছ থেকে আম পড়ল। লোকটা রিকশা থেকে পড়ে গেল। বাজারে আলুর দাম পড়ে গেছে। বেজায় গরম পড়েছে। রাগ পড়ে গেছে। ভারি বিপদে পড়েছি।
অর্থের পার্থক্যটা মাথায় রেখে লিখলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
সাধারণ ভুল-৪
১১) আ-কার এর কারণে ণ
ধরন ও দরুন বানানে ন। ধারণ, ধারণা, দারুণ বানানে ণ। খেয়াল রাখতে হবে- দ বা ধ এর সাথে আ-কার বসলে পরে ণ হয়, আ-কার না বলে ন হয়।
১২) দ্রব্যমূল্য ও দ্রব্যমূল্যের দাম
‘দ্রব্যমূল্য’ অথবা ‘দ্রব্যের দাম’ শুদ্ধ। ‘দ্রব্যমূল্যের দাম’ কথাটা ভুল, মূল্য মানেই দাম।
১৩) উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ
উদ্দেশ্য = লক্ষ্য, উদ্দেশ = প্রতি। সংকট নিরসনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, ভাষণ শেষে তিনি ব্রিটেনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
১৪) লক্ষ ও লক্ষ্য
লক্ষ = লাখ, দৃষ্টি। লক্ষ্য = উদ্দেশ্য। জীবনের লক্ষ্য পূরণের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আমার দিকে লক্ষ করো। লক্ষ করে শোনো।
১৫) চন্দ্রবিন্দু
দাঁড়িপাল্লা, দাঁড়ি-মাল্লা, দাঁড়ি-কমা ইত্যাদি সব দাঁড়িতে চন্দ্রবিন্দু থাকলেও কেবল দাড়ি-মোচের দাড়িতে চন্দ্রবিন্দু নেই। কাঁচা ও হাঁড়িতে চন্দ্রবিন্দু আছে, কাচ ও হাড়ে নেই।
১৬) ভারি ও ভারী
ভারি = খুব, ভারী = ওজনদার। ক্লাসের ভারী-ভারী বই পড়তে ভারি কষ্ট লাগে।
সাধারণ ভুল-৫
১৭) উত্তম, মধ্যম ও নাম পুরুষ
ভুল: আমি ও সে যাব। শুদ্ধ: সে ও আমি যাব। বাক্যে একাধিক পুরুষ থাকলে উত্তম পুরুষটি শেষে বসবে। ক্রম হবে- সে>তুমি>আমি।
১৮) নিচ ও নীচ
নিচ = নিম্ন, নীচ = জঘন্য। আমাদের নিচতলার ভাড়াটিয়া অত্যন্ত নীচ প্রকৃতির মানুষ।
১৯) নিত্য শ
‘পোশাক’ বানানে শ।
২০) জীবী ও জীবি
আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ইত্যাদি সকল জীবী-তে দুটোই দীর্ঘ ই-কার; কিন্তু জীবিকা বানানে ব-য় হ্রস্ব ই-কার অর্থাৎ ‘বি’।
২১) ত্য, ত্ত, ত্ত্ব, ত্ব
সত্য বানানে ত্য, সত্তা বানানে ত্ত, সত্ত্বেও বানানে ত্ত্ব, স্বত্বাধিকারী বানানে ত্ব।
২২) ভুঁড়ি ও ভূরি
ভুঁড়ি : নাড়ি-ভুঁড়ি ভূরি : এ জগতে হায় সে-ই বেশি চায়, আছে যার ভূরি-ভূরি!
২৩) জোর ও জোড়
জোর = শক্তি জোড় = যুগল বাবা তাকে জোরে ধমক দিলেন, সে করজোড়ে ক্ষমা চাইল। জোরাজুরি করলে কারো মনও পাবে না, বেজোড় থেকে জোড়ও হতে পারবে না। সে পরীক্ষায় বড়জোর ৪০ পাবে।
২৪) স্বার্থক নয় সার্থক
স্বার্থক না, সার্থক; স্বার্থকতা না, সার্থকতা।
২৫) য় নয় র
‘সে আশায় গুড়েবালি’ কথাটা ঠিক নয়, কথাটা হবে ‘সে আশার গুড়ে বালি’।
সাধারণ ভুল-৬
২৬) অন্তঃস্থল নয় অন্তস্তল
‘অন্তরের অন্তঃস্থল’ না, ‘অন্তরের অন্তস্তল’।
২৭) আপস/আপোস/আপোষ
বাংলা একাডেমির অভিধান মতে আপস, আপোস এবং আপোষ এই তিনটা বানানই সঠিক।
২৮) ‘ওঠে’ ও ‘উঠে’
ওঠে’ সমাপিকা ক্রিয়া, ‘উঠে’ অসমাপিকা ক্রিয়া। সে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। ঘুম থেকে উঠে ছাদে ওঠে। ছাদে উঠে আকাশ দেখে।
২৯) ক্ষ-এর নিচে ম
লক্ষ্মী, যক্ষ্মা বানানে ক্ষ-এর নিচে একটা ম-ও আছে।
৩০) ষ্ঠ ও তম
কনিষ্ঠ মানেই সবার ছোট, জ্যেষ্ঠ মানেই সবার বড়, শ্রেষ্ঠ মানেই সবার সেরা। কনিষ্ঠতম, জ্যেষ্ঠতম, শ্রেষ্ঠতম বলে কোনো শব্দ নেই।
৩১) যুক্তবর্ণে ন ও ণ’র ভুল
অপরাহ্ণ ও পূর্বাহ্ণ বানানে ণ; সায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন, আহ্নিক ও চিহ্ন বানানে ন।
৩২) গাঁথা ও গাথা
গাঁথা = গ্রন্থন (মালা গাঁথা, সুতো গাঁথা) গাথা = কবিতা (সাফল্যগাথা, বীরত্বগাথা, জীবনগাথা, দুঃখগাথা)
৩৩) লী নয় লি
অঞ্জলি বানানে ই-কার। এভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি, গীতাঞ্জলি।
সাধারণ ভুল-৭
৩৪) দু, দূ ও দুঃ
দূর বানানে দীর্ঘ ঊ-কার; কিন্তু দুর্নীতি, দুর্লভ, দুর্গম, দুর্নাম, দুর্ধর্ষ, দুর্দিন, দুঃস্থ, দুষ্প্রাপ্য, দুর্বল, দুর্গ ইত্যাদিতে হ্রস্ব উ-কার। দুঃসম্পর্কের আত্মীয় না, দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
৩৫) শীষ ও শিস
শীষ- গুচ্ছ। গমের শীষ। শিস- শুভ কামনা। শব্দটি ‘আশীষ’ বা ‘আশিশ’ নয়, ‘আশিস’। এভাবে শুভাশিস, দেবাশিস, স্নেহাশিস হবে।
৩৬) ভাষাভাষী নয় শুধু ভাষী
‘বাংলা ভাষাভাষী’ বা ‘ইংরেজি ভাষাভাষী’ লেখা নিষ্প্রয়োজন, ‘বাংলাভাষী’ বা ‘ইংরেজিভাষী’ লিখলেই চলবে।
৩৭) বেশি ও বেশী
বেশি = খুব, অনেক বেশী = বেশধারী (ছদ্মবেশী, ভদ্রবেশী)
৩৮) য-ফলা আছে
সন্ন্যাসী বানানে ‘ন্ন্যা’, সন্ধ্যা বানানে ‘ন্ধ্যা’। জ্যেষ্ঠ, জ্যৈষ্ঠ, জ্যোতি, জ্যোৎস্না, ন্যূনতম, ব্যূহ বানানে য-ফলাগুলো কই-কই বসেছে; লক্ষ রাখতে হবে।
৩৯) কারণ ও কেননা
ইতিবাচক বাক্যে ‘কারণ’ বসবে, যেমন : সে ভালো ফলাফল করেছে, কারণ সে নিয়মিত স্কুলে যায়। নেতিবাচক বাক্যে ‘কেননা’ বসবে; যেমন : সে পাশ করেনি, কেননা সে লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিল না। সে ভালো নেই, কেননা তার বাবা মারা গেছেন। অর্থাত যেসব বাক্যে ‘না, নি, নেই’ ইত্যাদি আছে; সেসব বাক্যে ‘কেননা’ বসে।
৪০) ষ ব্যবহারের ব্যতিক্রম
বিদেশী কোনো শব্দেই ‘ষ’ না বসলেও কেবল ‘খ্রিষ্ট’ শব্দটিতে ‘ষ’ বসবে। ‘খ্রিষ্ট’ শব্দটি ইংরেজি ‘ক্রাইস্ট’ থেকে এলেও এটি বাংলা ভাষায় ঢুকে আত্মীকৃত হয়ে গেছে এবং এর উচ্চারণও বদলে গিয়ে সংস্কৃত শব্দ ‘কষ্ট’, ‘নষ্ট’ ইত্যাদির মতো হয়ে গেছ। ফলে খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টীয়, খ্রিষ্টপূর্ব, খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিষ্টান ইত্যাদিতে ‘ষ’ লিখতে হবে।
সাধারণ ভুল-৮
৪১) ভাল ও ভালো
ভাল – ভালো, কাল – কালো একক শব্দ হিসেবে লিখলে দুটো বানানই ঠিক।কিন্তু এর অন্য কিছু জুড়ে দিলে ‘লো’ হবে। যেমন: ভালোবাসা কালোবাজার।
৪২) তৈরি ও তৈরী
‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ দুটো বানানই সঠিক। কিন্তু এর মধ্যে মার-প্যাঁচ আছে। ‘বেশি’ এবং ‘বেশী’ দুটো বানান যেমন সব জায়গায়, সবসময়েই ঠিক। ‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ দুটো বানান কিন্তু সব জায়গায়, সবসময়েই ঠিক না। প্যাঁচটা এখানে। যদি অতীত ও ভবিষ্যৎকে নির্দেশ করে তবে ‘তৈরী’ অর্থাৎ দীর্ঘ ই-কার ব্যবহৃত হবে আর যদি বর্তমান বা সতত কোন কিছুকে নির্দেশ করে তবে ‘তৈরি’ অর্থাৎ হ্রস্ব ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: লজিক্যাল বাঙ্গালী জেনুইন মসলা দিয়ে ‘তৈরি’ (সতত অর্থে)। ফারিহার ‘তৈরী’ আয়না (ইতোমধ্যে ক্রিয়াটি সম্পাদিত, অর্থাৎ অতীত)। ফারিহা কী যে আয়না ‘তৈরী’ করবে কে জানে? (ভবিষ্যৎ)। বিশেষ দ্রষ্টব্য: এতো প্যাঁচের দরকার কী? বর্তমান বাংলা একাডেমীর অভিধানে ‘তৈরি’ লিখেছে। ঐটা লিখলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়।
৪৩) বুঝা ও বোঝা
‘বুঝা’ এবং ‘বোঝা’ শব্দ দুইটি নিয়ে আমাদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আমরা অনেকেই “বুঝা” এর জায়গায় “বোঝা” লিখি। বুঝ (১) = বোধ, বিচার, জ্ঞান। যেমন: তিনি কী বলেছেন, তার কিছুই বুঝতে পারিনি। বুঝা গেল তুমি একটা ভুল করেছ। খেয়াল করলে দেখবেন দ্বিতীয় বাক্যটির “বুঝা” শব্দটি অনেকে ভুল করে “বোঝা” লিখে থাকেন। বুঝ (২) = প্রবোধ, সান্ত্বনা। যেমন: তাকে বুঝ দিয়ে লাভ নাই। তিনি অনেক বুঝানোর (এখানে বোঝানোর হবে না) চেষ্টা করেছেন, লাভ হয়নি। বোঝা (১) = ভার; মোট। যেমন: তার বোঝা টানার শক্তি ছিলো না। সংসারের বোঝা টানতে টানতে আমি হয়রান। বোঝা (২) = দায়িত্ব। যেমন: না জেনে এত বড় বোঝা নিতে গেলে কেন? বোঝাই- পূর্ণ বা ভর্তি। যেমন: মাল বোঝাই ট্রাকটিকে পুলিশ আটক করলো। তবে বোঝা অথবা বুঝা দু’টোই ব্যবহৃত হচ্ছে আজকাল। দু’টোই সঠিক। তাই বুঝাপড়া বা বোঝাপড়া-তে কোনো পার্থক্য নেই। (বাংলা একাডেমি প্রণীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে এর উল্লেখ আছে)।
৪৪) গণ ভুল
শিরোচ্ছেদ বানানটি হবে শিরশ্ছেদ (শ্+ছ = শ্ছ)। মতদ্বৈততা বানানটি হবে মতদ্বৈধতা সান্তনা/শান্তনা বানানটি হবে সান্ত্বনা (ন+ত+ব=ন্ত্ব)
৪৫) ঙ, ঙ্ক (ঙ+ক), ঙ্খ (ঙ+খ) ও ঙ্ক্ষ (ঙ+ক্ষ)
পঙক্তি, অপাঙক্তেয় বানানে ঙ অঙ্ক বানানে ঙ্ক (ঙ+ক) শৃঙ্খলা বানানে ঙ্খ (ঙ+খ) আকাঙ্ক্ষা বানানে ঙ্ক্ষ (ঙ+ক্ষ)
৪৬) সাধারণ দুইটি ভুল
১) হ্যাঁ: এটার ব্যাপারে সবাই খুব কিপ্টে। ‘হ্যাঁ’ বানানে চন্দ্রবিন্দু দিতে চায় না কেউ; ‘হ্যাঁ’ বানানে চন্দ্রবিন্দু হবে। ২) জ্বি: আরেকটা ট্রিকি বানান হচ্ছে ‘জ্বি’, যেমন- “হ্যালো, জ্বি বলছি”। এটাকে কেউ জ্বী লেখে, কেউ জি, কেউ জী। শুদ্ধ বানান হচ্ছে ‘জ্বি’।
Discussion about this post