নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশো বছর উদযাপনের লক্ষ্যে আগামী ২১ জানুয়ারি আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর আগামী ১ জুলাই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
সংবাদ সম্মেলনে শতবর্ষের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন শতবর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান এবং পরিবেশ উন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প ও মৌলিকগ্রন্থ রচনা জার্নালসমূহ আধুনিকায়ন এবং শতবর্ষের ওপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হবে।
এছাড়াও শতবর্ষের ওপর দুটি বই প্রকাশিত হবে। এর একটি হলো ‘হিস্ট্রি অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ । যেটি সম্পাদনা করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. রতন লাল চক্রবর্তী। অন্যটি ‘দি রোল অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি দ্য মেকিং অ্যান্ড শেপিং বাংলাদেশ’। যেটির সম্পাদনা করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজ সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মান্নোয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নত যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে গবেষণাগারকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশ ও বিদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রতিষ্ঠিত অ্যালামনাই এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের নিয়ে ঢাকায় ছয়টি আন্তর্জাতিক সেমিনার-ওয়েবিনারের আয়োজন করা হবে। সেমিনারগুলো হলো ‘হিস্ট্রি অব ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা হ্যায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ’, ‘সায়েন্সেস অ্যান্ড সোসাইটি’, ‘আর্ট অ্যান্ড ক্যালচার’, ‘বিজনেস ফর সাসটেইনেবিলিটি’, ‘সোস্যাল সায়েন্সেস লাইভ অ্যান্ড লিভিং’, ‘ফিউচার অব হ্যায়ার এডুকেশন‘৷
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ’২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে ওই সেমিনার উদ্বোধন করবেন। ১ জুলাই শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আব্দুল হামিদ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভাবনা এবং খ্যাতিমান পণ্ডিত-গবেষক ও বিশেষ করে লন্ডনসহ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১২ থেকে ১৪ জুলাই তিন দিনব্যাপী লন্ডনে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ সেমিনারে সাতটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে একটি সেনটেনারি মনুমেন্ট তৈরি করা হবে। শতবর্ষের একটি বিশেষ স্যুভিনিয়র এবং তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে। সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শিক্ষার্থীদের সরাসরি জড়িত থাকার জন্য তিনটি ইভেন্ট রাখা হয়েছে। প্রথমত শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও প্রত্যয় নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, এক্ষেত্রে শীর্ষ একশো জনকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বরচিত কবিতা নিয়ে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনের আয়োজন করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্ববিদ্যালয়, এটি এ দেশের আপামর জনসাধারণ এবং সব স্তরের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার লালন কেন্দ্র। গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ চর্চার এবং প্রতিপালনের অসাধারণ ঘাঁটি। সবসকিছুকে বিবেচনায় রেখেই মূলত আমরা নানাভাবে শতবর্ষ উদযাপন করার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেখানে আমাদের একটি ভিশন থাকবে।
শতবর্ষের ভিশন হলো টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ ও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি। এই ভিশনকে সামনে রেখেই আমাদের সব কর্মপ্রয়াস। সেজন্য আমরা তিনটি ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। সে তিনটি ক্ষেত্রের প্রথমটি হলো-শিক্ষার গুণগত মান ও শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন, দ্বিতীয়টি হলো-মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা-প্রকাশনা জোরদারকরণ এবং তৃতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সহযোগিতার সম্প্রসারণ।’
Discussion about this post