নিউজ ডেস্ক
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
হাসপাতালের ভেন্টিলেটর মেশিন স্থাপনে অবহেলার বিষয়ে জারি করা রুলের রায়ে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার, সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার ও উর্বষী বড়ুয়া সীমি। ডা. মোসাররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার। এছাড়া রিটে সংশ্লিষ্ট একটি ইংরেজি দৈনিকের পক্ষে ছিলেন কাজী ইরশাদুল আলম।আদালত বলেন, ‘দেশের একমাত্র ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা, দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধুমাত্র দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়।’আদালত আরও বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে ভেন্টিলেটর স্থাপন না করে আইসিইউ চালু না হওয়ার জন্য ডা. এএমএম শরফিুল আলম, ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ, ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন এবং ডা. মানস কুমার বসুকে দায়ী করা হয়।’‘মানস কুমার বসু ছাড়া অন্যরা অবসরে রয়েছেন। অবসরে থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। আর মানস কুমার বসুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’রায়ে আদালতের আদেশ ও পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়, ‘দায়ী ডা. এএমএম শরিফুল আলম ও ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহের বিরুদ্ধে পিআরএলজনিত কারণে যেহেতু বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হলো। আদায়কৃত ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের উন্নয়ন তহবিলে জমা করতে হবে। ক্ষতিপূরণ প্রদানে ব্যর্থ হলে পিডিআর আইনের বিধান মতে ওই টাকা আদায় করতে হবে।’‘‘এছাড়া ডা. মোসাররফের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো। তিনি দাবি করেছেন, ‘২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালে ভেন্টিলেটরগুলো সচলের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।’ কিন্তু ন্যাশনাল ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) কর্তৃপক্ষ সচলের দুটি পত্র পায়নি বলে তদন্তে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় বিষয়টি রায় পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্যদিবসে তদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। যদি ডা. মোসাররফের দাবি সঠিক না হয়, তাহলে তাকেও ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি তার দাবি সঠিক হয়, তাহলে নিমিউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ুম (যুগ্ম সচিব, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এবং মো. রেজানুর রহমান (যুগ্ম সচিব) এর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।এছাড়া ডা. মানস কুমার বসুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।’রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ের লক্ষ্যে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য দেশের সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েকটি নিয়মনীতি দিয়ে তা অনুসরণ করতে বলেছেন আদালত।এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুদকের সুপারিশমালার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২ জানুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘আইসিইউ অন সিকবেড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রায় ১২ বছর আগে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন কেনা হয়েছিল।’‘আইসিইউ’র জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রগুলোর প্রত্যেকটি ৭০ লাখ টাকায় কেনা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে একবারের জন্যও সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি। আইসিইউ’র ভেতরে এক কোণায় অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে যন্ত্রগুলো। এখন হাসপাতালটির আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজনীয় কোনও ব্যবস্থা নেই।’‘অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাসপাতালটিতে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা তিন বছর আগে চালু হলেও ভেন্টিলেটরগুলো এখনও বসানো হয়নি। আরও খারাপ খবর হলো, এর মধ্যেই ভেন্টিলেটরগুলোর মাদারবোর্ড চুরি হয়ে গেছে। ফলে এ যন্ত্রগুলো এখন পুরোপুরি অকেজো।’ওই প্রতিবেদনটি নজরে আনা হলে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন স্থাপন রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
একইসঙ্গে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
Discussion about this post