বিশেষ প্রতিবেদক
করোনা মহামারির কারণে গেলো মার্চ মাস থেকে দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিগত ৮ মাসে কোন ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আগামী বছর (২০২১ সাল) এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে জানিয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে পরীক্ষা কীভাবে হবে, সিলেবাস কমবে কিনা, সময় বাড়ানো হবে কিনা এসব বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি) এখনও ‘পরিকল্পনা’ তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এক ধরনের উদ্বেগে রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এসব শিক্ষার্থী বছরের প্রায় পুরোটাই ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ৯ মাস ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে থাকার পর মাত্র ৩ মাসে পরীক্ষার প্রস্তুতির ঘোষণায় ব্যাপকভাবে মানসিক চাপে ২০ লাখ কিশোর-কিশোরী।
ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরাও চায় ক্ষতি পুশিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘এসএসসি ব্যাচ ২০২১’, ‘এসএসসি’২১ ব্যাচ এর ক্ষতিপূরণ চাই’, ‘করোনার মধ্যে এসএসসি নয়’সহ বেশ কিছু নামে গ্রুপ খুলেছে তারা। এসব গ্রুপে প্রায় ৭ লাখ সদস্য রয়েছে।
তারা ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছে।
১. দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া যাবে না
২.পরীক্ষা নিতে হলে সিলেবাস শেষ করার মতো যৌক্তিক সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা
৩.অল্প সময়ে পরীক্ষা নিলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে অন্তত তিন মাস আগে ঘোষণা করা, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা
৪.অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলে সব রকম ফি নেয়া বন্ধ রাখা
৫.পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দেওয়া।
এসএসসি পরীক্ষার্থী মামুন বলেন, ‘এখন আমাদের ৮ মাসের সিলেবাস ২ মাসে শেষ করতে হবে! মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সবার পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি,এইচএসসি’২০ ব্যাচ যেখানে ৭ মাস সময় বেশি পেয়েও অটোপাস পেল সেখানে আমরা ৮ সময় কম পেয়েও কীভাবে পরীক্ষা দেই।’
অপর পরীক্ষার্থী হাফসা বেগম জানায়,‘করোনার মধ্যে আমরা আমাদের লেখাপড়া স্বাভাবিকভাবে করতে পারিনি। এজন্য পরীক্ষা পেছানো হোক।আর সামনে আসছে করোনার ২য় ঢেউ। ফলে আমাদের জীবন হুমকিতে রয়েছে। মানবিক বিবেচনায় ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরও অটোপাস দেওয়া হোক।
আবার অনেক পরীক্ষার্থী কোনোভাবেই করোনা চলাকালীন এবং করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে এবং স্কুলে যেতে রাজি নয়।
পরীক্ষার ঘোষণা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন, ‘পরীক্ষা সব সময় একটু চাপের বিষয়। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রাখা হবে। তারা নবম ও দশম শ্রেণিতে কতটা ক্লাস করতে পেরেছে, সংসদ টিভি বা অনলাইনে কতদূর এগিয়েছে এসব বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।’
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন নি বলেন, ‘সকল বিষয় বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
Discussion about this post