নিউজ ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুকির বর্তমান অবস্থা দেখে তার পাশে দাঁড়িয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবদুল জলিল তার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন জানান, তাকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসক পত্রিকা বিক্রেতা খুকির বাসায় যান। এরপর তারা খুকির সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে দেখভালের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নেওয়া হবে বলে জানান।
এ সময় খুকি রাজশাহী জেলা প্রশাসককে জানান, তার বাবা রাজশাহী জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন। তার মা ছিলেন সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষিকা।
অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই তাকে ঠকিয়েছে। চরম দুর্দিনেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। এজন্যই তিনি পত্রিকা বিক্রি করে অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন-যাপন করেন। তার নিজস্ব বাড়ি আছে। পৈত্রিকভাবে তারা স্বচ্ছল ছিলেন। কিন্তু কিছুটা মানসিক সমস্যা হওয়ায় নিজের ভাই-বোনও তাকে দেখেন না।
শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, খুকির জমি আছে। বাড়ি আছে। তবে তা বসবাস উপযোগী করা প্রয়োজন। তার সেবা-যত্ন বেশি প্রয়োজন। কারণ তিনি একা থাকেন।
এখন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বাড়িটি বসবাস উপযোগী করে দেওয়া হবে। যদিও এরই মধ্যে অনেকেই খুকির পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। এর পরও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুকিকে প্রতি মাসের বাজার খরচ দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাকে দেখভালের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সহকারী কমিশনার।
ডিসি মো. আবদুল জলিল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা খুকির পাশে আছি। তাকে দেখভালের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। মূলত তিনিই খুকিকে দেখভালের জন্য বলেছেন। তিনি নিজেই খুকির দায়িত্ব নিয়েছেন।
এদিকে, খুকি রাজশাহী শহরের একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।একদিন রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ উপযুক্ত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়ার সম্মানি হিসেবে ১৫০ টাকা পান। এই ১৫০ টাকা দিয়ে শুরু করেন নিজের উঠে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা। শুরু করলেন পত্রিকা বিক্রি। তাকে নিয়ে ২০০৯ সালে করা একটি ভিডিও কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এতে দেখানো হয়েছে- প্রতিদিন ভোর ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে খুকি এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন অফিস থেকে পত্রিকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শহরে।
রাজশাহী শহরের বিভিন্নপ্রান্তে ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করেন দিল আফরোজ খুকি। ওই ভিডিওতে খুকির জীবনের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরা হয়। ভাইরাল ওই ভিডিও দেখে অনেকেরই মন বিমর্ষ হয়ে ওঠে। অনেকেই তার পুরোনো সেই ভিডিওটি আবারও শেয়ার দিয়ে খুকির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
জীবন যুদ্ধে হার না মানা খুকি সংবাদপত্র বিক্রি করলেও কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে নিজের খরচ যুগিয়ে চলেছেন।
খবরের কাগজ বিক্রি করে একসময় প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করতেন। এই আয় থেকে নিজের জন্য ব্যয় করতেন মাত্র ৪০ টাকা। হজে যাওয়ার তীব্র বাসনায় ১০০ টাকা ব্যাংকে জমা করতেন। আর ১৬০ টাকাই ব্যয় করতেন মানুষের সেবামূলক কাজে। এর মধ্যে ১০০ টাকা দিতেন এতিমখানায়, ৫০ টাকা দিতেন মসজিদ-মন্দিরে আর ১০ টাকা দিতেন ফকির-মিসকিনকে।
এতদিনে ব্যাংকে জমা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই জমানো অর্থ আর পৈতৃকভাবে পাওয়া কিছু সম্পত্তিই তার জীবনের শেষ সম্বল। যা দিয়ে যেতে চান কোনো স্কুলের নামে। সেই দানের টাকা থেকে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে বৃত্তি। মৃত্যুর পর তার লাশটা যেন জন্ম শহর কুষ্টিয়ায় দাফন করা হয়, সে ইচ্ছাই তিনি জানিয়েছেন। খুকির সময়টা এখন ভালো কাটছে না। কাটছে নানা দুঃখ-কষ্টে। প্রায় ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত খুকি।
খুকি যখন কিশোরী তখন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। মাস না ঘুরতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার ও স্বজনরাও তাকে বাড়ি ছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তির কারণে বাবার বাড়িতে তার স্থান হয়নি। এরপর থেকেই অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন নারী পত্রিকা বিক্রেতা খুকি।
পরে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে বাড়ি তৈরি করে একাই থাকেন।
Discussion about this post