জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিজস্ব মূল্যায়নে সব শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করবে। আর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রত্যেককে সনদ দেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কারণ ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
১২ নভেম্বর সচিবালয়ের নিজ দফতরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি। এ সময়ের মধ্যে যদি আমরা করোনামুক্ত হতে পারি, তাহলে বাকি থাকছে মাত্র ১১ দিন। এ সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব না হলে আমরা বলে দিয়েছি স্ব-স্ব বিদ্যালয় মূল্যায়নের ভিত্তিতে করবে।
কিন্তু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা কিসের ভিত্তিতে ওপরের শ্রেণিতে উঠবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিটি বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বলে না দেওয়ায় মূল্যায়নের কাজটি শুরু করতে পারছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।
এ রকম পরিস্থিতিতে একেক বিদ্যালয় একেক রকম চিন্তা করছে, কিন্তু কোনোটাই কার্যকর করতে পারছে না। অথচ চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে মাত্র দেড় মাস বাকি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও উচিত সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া, যাতে বিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ। এগুলোর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (৬৫,৬২০টি) শিক্ষার্থী ১ কোটি ১৪ লাখ।
ঢাকার কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এখনো পরিষ্কার বুঝতে পারছেন না, কীভাবে কাজটি করবেন। ঢাকার আজিমপুর এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রথমত, শারীরিক দূরত্ব মেনে একেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিনের জন্য বিদ্যালয়ে এনে বিষয়ভিত্তিক মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করার কথা ভাবছেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে আবার কোনো শিশু যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, সেটি একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার শিশুদের অনেকেই পরিবারের সঙ্গে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। আরেকটি বিকল্প চিন্তা হলো, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করে মূল্যায়ন করা। কিন্তু এটিও কতটা বাস্তবে করা সম্ভব হবে, সেটি নিয়ে তাঁরা দ্বিধায় আছেন।
চট্টগ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জানালেন, আমরা ইতোমধ্যেই মোবাইলের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট পাঠদান করছি।বিষয় শিক্ষকগণ মোবাইলে বা ফেসবুক মেসেন্জারে বাড়ীর কাজ এবং পড়া আদায় করছেন।এর উপর ভিত্তি করে আমরা সাপ্তাহিক মুল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরী করছি এবং শিক্ষার্থীর জন্য একটি গ্রেডিং দিচ্ছি। এই প্রতিবেদন উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করছি। আশা করছি এই প্রতিবেদন থেকেই বছর শেষে চুড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। সেটি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
Discussion about this post