নিউজ ডেস্ক
প্রাথমিকভাবে সরকারের প্রতিটি ভবন বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সরকারি ভবনগুলো বীমার আওতায় আনা গেলে পরবর্তীকালে বেসরকারি প্রতিটি ভবন বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বহুতল ভবন বীমার আওতায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে বীমা সংশ্লিষ্টরা দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে ২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুন লাগলে এ দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে এবং মার্চে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগলে এ দাবি আরও জোরদার হয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ভবনের বীমার বিষয়ে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে তথ্য চেয়ে আমরা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে সরকারি বিভিন্ন ভবন বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। সরকারি বিভিন্ন ভবন বীমার আওতায় চলে এলে পরে বেসরকারি ভবনও বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হবে।
এদিকে সাধারণ বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ভবন বীমার আওতায় আনা গেলে একদিকে যেমন বীমা কোম্পানিগুলোর স্বাস্থ্য ভালো হবে, অন্যদিকে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ প্রসঙ্গে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ইমাম শাহীন বলেন, সরকারি ভবনের বীমা বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো সরাসরি পাবে না। এই বীমা হবে সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে। এ সংক্রান্ত বীমার আন্ডাররাইট (অবলিখন) করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো এই বীমার ৫০ শতাংশ ভাগ পাবে। সুতরাং সরকারি ভবন বীমার আওতায় এলে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোরও প্রিমিয়াম বাড়বে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কারণ প্রতিটি বীমার জন্য সরকারকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
সরকারি ভবন বীমার আওতায় এলে সাধারণ বীমা খাতে কী পরিমাণ ব্যবসা বাড়তে পারে— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। কারণ সরকারি ভবন কী পরিমাণ আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তাছাড়া বীমার অঙ্ক কত হবে তাও এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এটা অনুমান করা যায় যে, সরকারি ভবন বীমার আওতায় এলে সাধারণ বীমা খাতের ব্যবসা বড় অঙ্কে বেড়ে যাবে।
যোগাযোগ করা হলে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের সিইও মো. জাহিদ আনোয়ার খান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভবন বীমার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। একটি ভবন যখন বীমার আওতায় আসবে, তখন তার একটা নিরাপত্তা তৈরি হবে। পাশাপাশি বীমা খাত লাভবান হবে। আর বীমা খাত লাভবান হলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। আমাদের দাবি, প্রতিটি দোকানের ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার সময় বীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বাজারে ১০-২০টা দোকান পুড়ে যায়। এটা গ্রামে যেমন আছে, শহরেও আছে। কিন্তু এসব দোকানের বীমা না থাকায় তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পান না। এতে কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অথচ এসব দোকান বীমার আওতায় থাকলে তারা ক্ষতিপূরণ পেতেন, যা দিয়ে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন। সুতরাং আমাদের দাবি, প্রতিটি ভবন বীমা আওতায় আনা উচিত। তবে প্রথমে সরকারি ভবনগুলোও যদি বীমার আওতায় আনা যায়, তা হবে খুব ভালো উদ্যোগ।
Discussion about this post