আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ করোনার টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে তা সাধারণ নাগরিকদের দেয়ার দিনক্ষণও ঠিক করে ফেলেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির পরিকল্পনা আগামী মাসেই (ডিসেম্বর) তাদের দেশের নাগরিকদের করোনার টিকা দেওয়ার। আর স্পেনের পরিকল্পনা তারা তাদের নাগরিকদের টিকার আওতায় নিয়ে আসতে চায় আগামী বছরের একদম শুরুতে অর্থাৎ আগামী জানুয়ারি থেকে নাগরিকদের টিকা দেওয়া শুরু করবে দেশটি।
তবে, করোনার টিকা প্রয়োগে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেককে চলতি সপ্তাহেই নীতিগত অনুমোদন দিতে চায় ব্রিটিশ সরকার। আর এটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন দেবে অন্য দেশ। এমন খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম।
বলা হচ্ছে, কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকা কোভিড-১৯ বিরুদ্ধে ৯৫ ভাগ কার্যকর এমন ঘোষণার পরই মার্কিন ও ইউরোপের দেশগুলোর আস্থা অর্জন করে ফেলে। তাই আগামী মাসে এই টিকার চূড়ান্ত পরীক্ষা (ফাইনাল ট্রায়াল) হওয়ার পরপরই তারা তাদের দেশের নাগরিকদের এই টিকার আওতায় নিয়ে আসতে চায়।
মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান জার্মানির বায়োএনটেক তাদের তৈরি ভ্যাকসিন অনুমোদনে শুক্রবার মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এফডিএর উপদেষ্টা কমিটির আগামী ১০ই ডিসেম্বর ফাইজারের আবেদন নিয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
এদিকে ওষুধ প্রস্তুতকারী মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান মডার্নাও গত সপ্তাহে দাবি করেছে, তাদের আবিষ্কৃত টিকাও কোভিড-১৯’র বিরুদ্ধে ৯৪.৫ ভাগ কার্যকর।
এই দুটি টিকাই প্রত্যাশার চেয়ে আগে হাতের নাগালে চলে আসছে। দুটি টিকা আবিষ্কারেই নতুন মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়েছে। আর এই টিকাই করোনা মহামারি রোধে আশার আলো হয়ে দেখা দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনক্ষণও ঠিক করে ফেলা হয়েছে কবে প্রথম কোনও নাগরিককে চূড়ান্ত পর্যায়ের টিকা দেওয়া হবে। রোববার (২২ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএনের খবর মার্কিন সরকারের টিকা কর্মসূচির প্রধান মনসেফ স্লাউ জানিয়েছেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর প্রথম কোনও সাধারণ মার্কিন নাগরিককে কোভিড-১৯’র টিকা দেয়া হবে। টিকা অনুমোদিত হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
আর যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফের খবর, ১ ডিসেম্বর থেকেই সাধারণ নাগরিকদের টিকার আওতায় নিয়ে আসার জন্য দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ সরকার আগে থেকেই ফাইজার ও বায়োনটেকের টিকার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। এবার দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানাল কবে নাগাদ তারা টিকাটি হাতে পাবে।
যুক্তরাজ্য ৪ কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ দিয়ে রেখেছে এবং আশা করছে আগামী মাসের মধ্যে অন্তত কোটি ডোজ হাতে পাবে যা দেশটির অন্তত ৫০ লাখ মানুষকে করোনার ছোবল থেকে রক্ষা করবে।
জার্মানিও আগামী মাসে তাদের নাগরিকদের টিকা দিতে প্রস্তুত। রোববার (২২ নভেম্বর) এমন আশার কথা জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্ফেন। তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের মধ্যে জার্মানি ও স্পেন প্রথম করোনার টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আসতে চায়।
আর স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ রোববার (২২ নভেম্বর) জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে সমন্বিতভাবে করোনার টিকা প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত তার দেশ। এবং এরপর তিন মাসের মধ্যে দেশটির সব নাগরিককে এই টিকার আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তুতিও রয়েছে আর জানুয়ারিতে ১৩ হাজার স্পট থেকে টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোমবার (২৩ নভেম্বর) জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছেন, আগামী বছর ২ বিলিযন ডোজ করোনার টিকা বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাবে। সংস্থাটি বলছে, করোনার টিকা পৌঁছে দিতে সাড়ে ৩০০ এয়ারলাইন্স ও জাহাজ কোম্পানি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব দেশের নাগরিক যেন সময়মতো করোনাভাইরাসের টিকা পায় সদ্য সমাপ্ত জি-২০ সম্মেলনের অংশ নিয়ে এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তাদের আশঙ্কা, সবার জন্য কোভিড পরীক্ষা, ওষুধ ও টিকার সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা না গেলে বিশ্বজুড়ে বাড়বে ধনী-গরিবের ব্যবধান।
Discussion about this post