ফিরে আসার পথে
সোহেব চৌধুরী
যার অস্তিত্ব যেখান থেকে শুরু
তার মতো করে ফিরে যাবে সন্ধ্যার নিড়ে,
বড়ই গাছে চড়ুইদের ভিড়ে।
শত ব্যস্ততাকে অপেক্ষায় ফেলে
ভেলা ভাসাবে সেদিন অশ্রুস্রোতে
ঢেউ ভাঙ্গা আর্তনাদ আকাশের ঐ উদাস মেঘে জড়ো হবে।
পৌষের কুয়াশা চোখে ঘোলাটে রোদ্দুর ঘাম ঝড়াবে বন্ধুর কনুয়ে।
কাস্তেকুড়াল সবুজ কচি ঘাস কুড়াবে তোমার বিছানার পরশ ঘুচিয়ে।
যার অস্তিত্ব যেখান থেকে শুরু
তার মতো করে ফিরে যাবে সন্ধ্যার নিড়ে, বড়ই গাছে চড়ুইদের ভিড়ে।
সূর্যপথ পাড়ি দিবে যখন ঐ রাঙ্গা মেঘের নিম্নে;
হিজলের ছায়া পড়বে তখন দিঘিজলের পৃষ্ঠে,
বকেরাও ফিরত যাবে সেদিন নিজের মতন প্রতিদিনের ঝোপঝাড়ে।
জোনাকিরা সেদিন বিলের নালায় মিছিল সমাবেশে আহত কন্ঠে
জ্বলে যাবে ভোর রাতের ঐ তারাদের মিলিয়ে।
যে যার মতো করে ফিরে যাবে আবার ঝোপঝাড়ে সন্ধ্যা বানিয়ে সেদিনের ঐ সকালটাকে।
ধুলিপড়া এই ইটপাথরের শহরটাকে
ছুটি জানিয়ে;
যে যার মতো করে
একটা গল্প বানিয়ে;
নিখিলের চায়ের দোকান ঘিরে
ছোট সেই জটলার ভিড়ে,
বলাবলি করবে ফোটন
বেশ অনুভব করে।
তখন বিকেলবেলা,
মন ভড়ে
আর্তনাদ!
ফিরে আসার কবিতা!
সে সারাদিন আঁকতো
বিলের কিনারায় রাখালের ছবিটা,
তিন জোড়া সাদা কালা আর লাল গরু
হাতে তার কাঞ্চা বাঁশের বাশি
খুবি সরু
চায়ে চুমুক দিয়ে গালে হাত রেখে
আমায় বলত
জীবন দার বনলতা সেনের দু একটা লাইন
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন
সূর্যাস্ত থেকে ফিরে আসে আবার সন্ধ্যে।
দোকানে হারিকেনের আলোয় কেরাসিন তেলের গন্ধ্যে
বেশ মাখামাখি।
তখন মাঘের শেষে
ফাল্গুনের বাতাসে,
ইরিধানের ঘ্রাণ;
অশ্বত্বগাছের নিচে নিখিলের দোকান।
দোকানের পিছনে খালের বাকে
কেওড়াগাছের ঝোপঝাড়ে শিয়ালেরা ডাকে; সেদিনগুলিতে
ঝিঝিপোকারাও থেকেথেকে
এক সুরে গান গেয়েছিল লেবুপাতা আর জুঁইশাখে।
ফিরে আসার পথে ফোটন আর ছোটন
যে যার মতো সন্ধ্যার নিড়ে
বড়ই গাছে চড়ুইদের ভিড়ে।
তরুণ
ইমরান হোসাইন ইমু
তরুণ তোমার দুই বাহুতে
আছে যত জোর,
মৃত্যুগুহার আঁধার ভেঙ্গে
আনো নতুন ভোর।
পাখির সাথে গাও তুমি
বাঘের সাথে লড়ো,
কূলছাড়া ঐ পালতোলাটার
হালটা তুমি ধর।
একহাতে অস্ত্র তোমার
আরেক হাতে ফুল,
অত্যাচারীর দেয়াল ভেঙ্গে
গড়ো নতুন কূল।
থেকো না ক বন্দি খাঁচায়
বেরিয়ে এসো পথে,
নতুন সূর্য দেখতে হবে
চড়ে নতুন রথে।
যাচ্ছে দেশ রসাতলে
ভাবছ বসে, আমার কি?
গৃহহীন হবে যখন
বুঝবে তখন দেশটা কি?
বৈশাখ এলে
সুমন রায়হান
বৈশাখ এলে বুকের ভেতর হাওয়া
অন্য সুখে, কেবল করে আসা-যাওয়া।
বৈশাখ এলে ঝড়ো হাওয়ায়
মেঘের মাদল ডানার পেখম মেলে…
বৈশাখ এলে ভালোবাসা অন্যরকম খেলে।
বৈশাখ এলে সূর্যরাঙা আম, গাছের ডালে ঝোলে…
বৈশাখ এলে ঝুলনখেলা অন্যদোলায় দোলে…
বৈশাখ এলে উষ্ণ বিরানভূমি
পলে পলে ভিজিয়ে যায় অন্যরকম জলে।
বৈশাখ এলে মন ছুটে যায় করিমগঞ্জের হাটে
পাতার বাঁশির সুরে…
রাঙা ধুলোর বায়, মুখর মেলার মাঠে।
বৈশাখ এলে নতুন সুখের আহ্বানে
সকল দুঃখ ভুলে, নতুন রঙে রাঙিয়ে হৃদয়
ভালোবাসা ছড়িয়ে যায় সকল প্রাণে প্রাণে…
শৈশব কুড়ানো বিকেল
এস এম কাইয়ুম
অবসান-অবক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় বিগতের দেনা
তারি মাঝে আপনাকে চেনা।
খাঁ খাঁ দুপুর ছুঁয়ে যায় চাতকের কণ্ঠ
রুদ্র বাতাসে ওড়ে কিশোরীর মন
আকাশে তৃষ্ণা শ্রাবণ
অচেনা আঙ্গিনায় বসে বৈশাখী মেলা
শৈশব কুড়ানো বিকেল।
অগ্নির অহংকার ও পতন
এনামুল হক টগর
তোমাকে দাসত্বের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছে
তুমি কিনা অহংকারে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করছো?
সেবা ও কল্যাণের কর্ম দিয়ে সেবক হয়ে যাও
অহংকার পরস্ত হলেও তুমি মহৎ হয়ে যাবে।
একদিন অগ্নি বাতাসকে গর্ব করে বললো
আমি অগ্নি আমিই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ!
তখন বাতাস ক্ষুব্ধ হলো, আকাশ মেঘ ও বৃষ্টি ক্ষুব্ধ হলো
তারা ঝটিকা বেগে আক্রমণ করলো
অগ্নি মুহূর্তেই নির্বাপিত হয়ে গেল!
আর অগ্নির অহংকার ও আমিত্ব ধূলায় মিশে গেল
এভাবেই অহংকারীরা পতনের স্বাদ গ্রহণ করে।
মনে রেখো নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবাই জ্ঞানীর কাজ।
ক্ষুদ্রের ভেতর থেকেই বৃহৎ প্রকাশ পায়,
তোমরা পরমাণুর মতো ক্ষুদ্র হয়ে অনুসন্ধান করো
গবেষণায় সফল হলে জাহের ও বাতেনের ফলাফলে
তুমি সত্যের দর্শন পেতে পারো।
নয়লে অহংকার আর আমিত্ব তোমাকে পতন করে দিবে।
শপথ
সুজন শান্তনু
ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাও, প্রাণ ভিক্ষা চাইব না
আমৃত্যু লোহার সেঁক দাও, মাথা নত করব না
আমার দু’চোখ উপড়ে ফেলো, গরম সীসায়
আমার শরীর ঝলসে দাও, আহাজারি করব না।
আমার সম্মুখে লুফে নাও আমার প্রিয়ার
ইজ্জত আর লাঞ্ছিত করো মা-বোনের গেরস্থালি;
বিশ্বাস করো আমার ধৈর্যর বাঁধ ভাঙবে না,
কাঁদবো না সর্বহারা হয়ে আর্তি করব না তবু
খবরদার সীমার যদি
আমার মাতৃভূমির বুকে তোমার নাপাক হাত
একবার পড়ে, খোদার কসম সইব না আর।
সূর্যসেন, তিতুমীর অথবা প্রীতিলতার শৌর্যে
আমার টগবগে রক্ত ধ্বংস করবেই তোমার
স্বৈরাচারী মূর্তি আর আমার ফুসফুস দম নেবে
‘জয় বাংলার’- এমনই শপথ এ মনে সদা।
জাত্যাভিমান
জাফর পাঠান
এমন দন্ত-নখর-ছিলো না অহিংস বুদ্ধের
জাতি ধর্মের বিভেদ টেনে কথা বলেনি যুদ্ধের,
মানুষ-মানুষ-মানুষ, বলেছে মানুষের কথা
শুধু মানবতার সুবাস ঢেলেছেন যথাতথা।
তবে কেন বুদ্ধের দেশ মিয়ানমারে রক্তনেশা
ধার্মিক লেবাসে হত্যা-হনন চলে হরহামেশা!
পড়ছে লাশের পর লাশÑ ভীতিকর সর্বনাশ
ধীকৃত নেশার জাত্যাভিমানে দেখায় অভিলাষ।
প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে
লেবাসধারীর সনে,
পশুত্ব কেন নয়নে
কেন উল্লাস দাহনে।
খুনিদের না হয় বললাম, বর্বর জানোয়ার
কিন্তু শাসক করছেটা কি! হাতে রেখে হাতিয়ার,
নিজ ভূমি- নিজ ঘর, তবু রোহিঙ্গারা যাযাবর
চোখে পেরেক- মুখে বালি, নীরব বিশ্ব মাতব্বর।
ওদের হাতে ক্ষমতা, পাতে রাশি রাশি মারণাস্ত্র
জাগ্রত মানুষের সম্বল, চৈতন্যের বিবেকাস্ত্র,
সুপ্ত বিবেক জেগে উঠুক, হোক বজ্রের নিনাদ
ত্রৈলোক্যে শুধু যেন শুনি, বর্বরদের আর্তনাদ।
Discussion about this post