জাহিদ হাসান, শাবি
সে মানুষের মতো দু’পায়ে হাটতে পারে, বাংলা ভাষা বুঝতে পারে, বাংলায় কথা বলতে পারে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সে মানুষের চেহারা মনে রাখতে পারে এবং পরবর্তীতে চিনতে পারে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তৈরি করলো বাংলায় কথা বলা প্রথম রোবট ‘লি’।
বাংলা স্বরবর্ণ থেকে হারিয়ে যাওয়া লিপি স্বরবর্ণ ‘লি’-কে এখনকার শিশুরা হয়তো চিনতেই পারবে না। যা দেখতে কিছুটা ‘৯’ এর মত ছিল। সেই লি আবার ফিরেছে বাংলায়, কিন্তু বাংলা বর্ণমালার বর্ণ হিসেবে নয়, এসেছে রোবট হয়ে।
লি রোবটটির নির্মাতা দলের নাম ফ্রাইডে ল্যাব। তাদের দলনেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের সাবেক ছাত্র এবং নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নওশাদ সজীব। লি-এর প্রোগ্রামিংয়ের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। নকশাকারের দায়িত্বে ছিলেন স্থাপত্য বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান, ইলেক্ট্রনিক্সের দায়িত্বে ছিলেন ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাইফুল ইসলাম, মেকানিজমের দায়িত্বে ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ সামিউল হাসান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বে ছিলেন একই বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থী জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি।
তারা জানান, লি দেখতে মানুষের মতো। শুধু দেখতেই নয়, সে মানুষের মতো দু’পায়ে হাটতে পারে, বাংলা ভাষা বুঝতে পারে, বাংলায় কথা বলতে পারে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সে মানুষের চেহারা মনে রাখতে পারে এবং পরবর্তীতে চিনতে পারে। লি মানুষের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে, স্যালুট দেয় এবং নাচতেও পারে। এছাড়াও লি তার চোখ, চোখের পাতা এবং ঠোঁট দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে পারে। রোবটটির উচ্চতা ৪ ফুট ১ ইঞ্চি এবং ওজন ৩০ কেজি।
ফ্রাইডে ল্যাব দলনেতা নওশাদ সজীব জানান, আইসিটি ডিভিশনের ইনভেনশন ফান্ডের ১০ লাখ টাকা অনুদানে রোবটটি তৈরি করতে সময় লেগেছে মোট ৩ বছর। এই দলের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ দলের ৫ জন সদস্য ছাড়াও গত ৩ বছরে এ রোবট তৈরিতে আরও অনেকেই কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাজিদ, শান্ত, খাইরুল, শোভন, সোহান, জান্নাতসহ আরও অনেকে।
তিনি আরও বলেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতে রোবটকে মানুষের বাসাবাড়ি এবং অফিস-আদালতের বিভিন্ন কাজ করতে দেখা যাবে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার গতিকে আরও বেগবান করতে এবং বাংলাদেশ যাতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে প্রযুক্তিতে অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এ রোবটটি তৈরি। দেশেই আমরা বাইরের বিশ্বের মত রোবট তৈরি করতে পারি।
লি বলে, “আমি লি। আবার আসিয়াছি ফিরে রোবট হয়ে এই বাংলায়।”
রোবট লি এর অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেন সোর্স উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেম ভার্সন ১৮.৪। এতে মিডলওয়্যার হিসেবে রয়েছে জনপ্রিয় রোবট অপারেটিং সিস্টেম রস (ROS) জাভা এবং পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষায় রোবটের কন্ট্রোল মোশনসহ যাবতীয় সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে।
রোবটটি তৈরিতে ৮ জিবি র্যাম এবং কোর আই ফাইভ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ৩টি মোটর কন্ট্রোলার এবং একটি মাইক্রো-কন্ট্রোলার রয়েছে। একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল রয়েছে এতে। রোবটটি মোট ডিগ্রি অফ ফ্রিডম ৩৬ এবং ৩৬টি মোটর রয়েছে এতে। লি এর চেহারাসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীদের তৈরি হিউম্যানোয়েড রোবট ‘লি’ ।বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়।
Discussion about this post