সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশকে এখন সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে দাবি করা যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কানেকটিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, ই-গর্ভনমেন্ট, আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রি প্রমোশনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ ঘিরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমাদের উন্নয়নও ত্বরান্বিত হচ্ছে। টেন্ডারের বাক্স নিয়ে ছোটাছুটি-দখলবাজি হয়, ই-টেন্ডারের ফলে সে কাহিনী নিশ্চয়ই আর আপনারা শোনেন না। আজ অন্তত আমরা এইটুকু দাবি করতে পারি, আজকের বাংলাদেশ সত্যিকারভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তৃতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০১৯ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি সরকারের মেয়াদে নেদারল্যান্ডের টিউলিপ কোম্পানি থেকে কম্পিউটার ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সরবরাহের প্রস্তাব গ্রহণ না করার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিনা পয়সায় পেলাম, সেটা আমরা নিতে পারলাম না। পরবর্তী সময়ে আমাদের অনেক অর্থ দিয়ে ব্রডব্যান্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংযোগটা তৈরি করতে হয়েছিল। একেকটা সরকারের একেকটা সিদ্ধান্তে দেশ কত ভোগান্তিতে পড়তে পারে, সেটাই হচ্ছে আসল কথা। আর কোনো কোম্পানি বিনিয়োগ করতে এলে কমিশন দাবি করা— হাওয়া ভবনের সেই কমিশনের কথা সবার জানা আছে। কাজেই আমি এটা বলতে চাই না।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ছিল, সেখানে রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ছিল। আজ অন্তত আমরা এটুকু দাবি করতে পারি, আজকের বাংলাদেশ সত্যিকারভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অবদান রাখায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ডিজিটাল সেবার জন্য নির্বাচিতদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ১২ ডিসেম্বর দিনটিকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পালন করে যাচ্ছি। বর্তমানে বাংলাদেশে কানেকটিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, ই-গর্ভনমেন্ট, আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রি প্রমোশন, বিভিন্ন উদ্যোগ ঘিরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যার ফলে আমাদের উন্নয়নটাও ত্বরান্বিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি। এর ফলে দেশব্যাপী আমাদের কানেকটিভিটি তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো এই স্যাটেলাইটের সেবা ব্যবহার করতে শুরু করেছে। তাদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। কারণ এর জন্য টাকা-পয়সা বাইরে পাঠাতে হতো, এখন আর পাঠাতে হয় না। তবে তিন মাস তারা ফ্রি নিচ্ছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে তারা আমাদের চার্জ আরও একটু বেশি করে বাড়িয়ে দেবে, যেন সরকার এখান থেকে উপার্জন করতে পারে।
দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৩ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আরও ২০০টি ইউনিয়নে কানেকটিভিটি দেওয়ার কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নে আমরা এই ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি পৌঁছে দেবো। দুর্গম এলাকাগুলোতেও ইউনিয়ন পর্যায়ে এই কানেকটিভিটি পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিএনপি জোট শাসনামলে মোবাইল ফোনের মনোপলি ব্যবসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় যখন মনোপলি ব্যবসা ছিল, তখন মোবাইল ফোন কিনতে লাগত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর ফোন করতে গেলে প্রতি মিনিট ১০ টাকা খরচ করতে হতো। ফোন ধরলেও ১০ টাকা। এই ছিল অবস্থা। এখন কম্পিটিশনের যুগে সামান্য দুই হাজার বা আড়াই হাজার টাকার মোবাইল ফোনও মানুষ কিনতে পারে এবং কথা বলার তো শেষ নেই। আর আমরা বাঙালিরা এমনই— একটু কথা বলতে পছন্দ করি। সে কারণে দেখা যায়, কারও কারও হাতে দুইটা-তিনটি করে ফোন আছে।
দেশে এখন ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সরকারি কাজগুলোও এখন ডিজিটাল উপায়ে সম্পাদন করা হয় বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে বিভিন্ন সেবা দেওয়ার যে সুযোগটা তৈরি করেছি, তাতে জনগণই লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি এখন মানুষের জন্য ৯৯৯, ৩৩৩ ও ১০৯-এর মতো জরুরি সেবাগুলো চালু করা হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের ওপর এক ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখন মানুষের সেই আস্থা তৈরি হয়েছে যে যেকোনো সমস্যায় পড়লে তার সমাধান পাওয়া যায়, নিরাপত্তা পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আওয়াজ আমরা আন্তর্জাতিকভাবে শুনতে পাচ্ছি। তার প্রস্তুতিও আমরা গ্রহণ করছি, যেন আমাদের দেশের মানুষ পিছিয়ে না থাকে। অর্থাৎ আমাদের তরুণ সমাজ যেন পিছিয়ে না থাকে, তারা যেন এই শিক্ষা নিতে পারে। আর তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা যেন কাজে লাগাতে পারি, তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এবং মন্ত্রণায়লয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
ছিয়ানব্বই সালে সরকারে এসে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি কম্পিউটার..কম্পিউটার কেউ তখন ব্যবহারই করত না। অনেক অফিসে একটা ডেক্সটপ সাজিয়ে রাখা হত। কিন্তু কেউ ওটায় হাত দিত না এমন একটা অবস্থা ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে সজীব ওয়াজেদ জয় (তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা) বলল তুমি যদি এটা (ডিজিটাল বাংলাদেশ) করতে চাও মা, তাহলে (কম্পিউটার ও কম্পিউটার সরঞ্জামের ওপর) ট্যাক্স কমিয়ে দিতে হবে। এটার দাম কমাতে হবে এবং শিক্ষার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ এ আবার সরকারে আসার পর আমরা উদ্যোগ নিলাম। আজকে সারা বাংলাদেশে আমরা যেটা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব সত্যিই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।’
Discussion about this post