মো. রহমত উল্লাহ্
আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা, এই সময়ে তারা টিনএজে অবস্থান করে বিধায় তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন চলমান থাকে। দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে শারীরিক ও মানসিক গঠন। অতিক্রম করতে থাকে বয়ঃসন্ধিকাল। তাই তাদের চিন্তা-চেতনায়ও এ সময়ে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। একেকজন করে থাকে একেক রকম আচরণ।
অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় অবাধ্য হবার প্রবণতা। শুনতে চায় না উপদেশ, মানতে চায় না আদেশ-নির্দেশ। শুরু করে বেপরোয়া দুরন্তপনা, দেখায় ভয়াবহ দুঃসাহস। নিজে যা ভাল মনে করে তাই সঠিক বলে ধরে নেয় এবং তাই করার চেষ্টা করে। বাঁধভাঙ্গা গতিতে ধাবিত হতে থাকে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি। সামান্য প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানে হয়ে যায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, প্রকাশ করে অস্বাভাবিক রাগ-অভিমান। অল্পতেই বোধ করে অপমান, হুটহাট করে ফেলে আত্মহত্যা। লেখাপড়ায় হয়ে উঠে অমনোযোগী। পাল্টে যায় চলন-বলন ও সাজ-পোশাকের ধরন। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি হয়ে ওঠে অতিরিক্ত আগ্রহী, আকৃষ্ট। কেউ হয়ে ওঠে বাহির মুখী, কেউবা লুকিয়ে যায় নিজের ভিতর। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ সকল বিষয়ের প্রতি যত্নশীল না হলে তারা হয়ে যেতে পারে বিষন্ন, জড়িয়ে যেতে পারে অপকর্মে, চলে যেতে পারে বিপথে, হারাতে পারে মনোযোগ, ছিটকে যেতে পারে লেখাপড়া থেকে। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে শিক্ষক ও অভিভাবকের হতে হয় অত্যন্ত যত্নশীল। তবেই তৈরি করা সম্ভব হয় দেশ ও জাতির কল্যাণে অধিক যোগ্য নাগরিক-কর্মী।
শিক্ষার্থীর শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আমরা সবাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। আসলে সুস্থতা বলতে শারীরিক ও মানসিক উভয় সুস্থতা কেই বোঝায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে- ‘শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য’। অর্থাৎ দেহ ও মন ভালো থাকা মানেই স্বাস্থ্য ভালো থাকা। দেহ ও মন পরস্পরের পরিপূরক। শরীর যতই সুস্থ থাকুক, ভালো কিছু করার জন্য মানসিক সুস্থতা আবশ্যক। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে, মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আবেগ-অনুভূতির সুষ্ঠু সমন্বয়। এই মানসিক বিষয়গুলোর সঠিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমেই মানুষ তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পাদন করে এবং পরস্পরের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে। এসব যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উত্তম মানুষে পরিণত করার জন্যই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন অপরিহার্য। সুস্থ শরীরের যেমন যত্ন নিতে হয় তেমনি সুস্থ মনেরও নিয়মিত যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এর মতে, ‘পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে না পারা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচাতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট (মনোবিদ) নিয়োগ দিতে হবে। মানসিক শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সুরক্ষায় আমাদের এখন থেকেই কাজ করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।’
তাঁর কথার আলোকে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে গ্রহণ করতে হবে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এর প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট বিশেষ করে এডুকেশনাল কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেননা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জটিল মানসিক রোগীর চিকিৎসা করার চেয়ে মানসিক রোগ প্রতিরোধে কাজ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত যোগ্য লোক তৈরি না থাকায় আমাদের দেশের লক্ষাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এডুকেশনাল কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। যে কোন স্তরেই হোক, শিক্ষকতায় যথাযোগ্য লোক আসার অপেক্ষা না করে তড়িঘড়ি করে বেকার লোকের কর্মসংস্থান করার চিন্তা করা মানেই দেশ ও জাতির চিরস্থায়ী ক্ষতি সাধন করা। যারা যোগ্যতার অভাবে কোথাও চাকরি পায় না তারা যেনতেন ডিপ্লোমা সনদ সংগ্রহ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে এডুকেশনাল কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হয়ে গেলে এবং ৩০ থেকে ৪০ বছর এই কর্মে নিয়োজিত থাকলে কী মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হবে আমাদের তা কল্পনা করাও কঠিন। এমন লোক নিয়োগ হলে কিছুদিন পর হয়তো দেখা যাবে, তারা ক্লাস নিচ্ছেন বা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন অন্য কোন বিষয়ে। তাই অধিক যোগ্য লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার পাশাপাশি নিয়মিত কাজ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদেরই অর্জন করতে হবে ন্যূনতম যোগ্যতা, পালন করতে হবে সর্বাধিক দায়িত্ব।
বর্তমান বাস্তবতায় ‘মানসিক শিক্ষা’কে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা (আসন্ন একমুখী শিক্ষায় প্রস্তাবিত ‘ভালো থাকা’ বিষয়টিতে তা যুক্ত করা যেতে পারে) এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলমান রাখার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদে তাদের কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া আবশ্যক।
যেমন-
*শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অনুকূল রাখতে হবে সকল স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার পরিবেশ। সবাই খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোনোভাবেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বুলিংয়ের শিকার না হয় শিক্ষার্থীরা।
*প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বজায় রাখতে হবে একটা জয়জয়কার (উইন উইন) পরিবেশ।
*শিক্ষক কোনভাবেই ভয়ের পাত্র হবে না শিক্ষার্থীদের। এমনকি সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও ভয়ের পাত্র হবেন না কোন জুনিয়র শিক্ষার্থীর। পরস্পরের মধ্যে বিরাজ করতে হবে শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক।
*শিক্ষার্থীদের সাথে তুইতোকারি করে কথা বলা যাবে না। সম্মানজনক সম্বোধন করে কথা বলতে হবে। কোনভাবেই করা যাবে না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ডাকা যাবে না বিকৃত নামে।
*শিক্ষকগণ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে শুনবেন শিক্ষার্থীদের কথা, যেন প্রত্যেক শিক্ষার্থী মনে করে তার শিক্ষক অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন, আদর করছেন তাকে। শিক্ষক কোনভাবেই প্রকাশ করবেন না বিরক্তিভাব। কোন কিছু ‘না’ করতে হলেও ব্যবহার করবেন অনুকূল শব্দ বা বাক্য।
*শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ও পরীক্ষায় ভালো করার জন্য শিক্ষকগণ প্রতিনিয়ত প্রদান করবেন উৎসাহ ও উদ্দীপনা। কোনভাবেই করবেন না বকাঝকা বা তিরস্কার, দেখাবেন না কোনকিছুর ভয়।
*শিক্ষকগণ সর্বদা ইতিবাচক কথা বলবেন শিক্ষার্থীদের সাথে। কোন শিক্ষার্থীকে তার চেয়ে অধিক যোগ্য কারোর সঙ্গে তুলনা করে অপমান করবেন না। যা পারেনি তা বলবেন না, যা পেরেছে তা যত ছোটই হোক বার বার উল্লেখ করে ধন্যবাদ দিবেন।
*শিক্ষার্থীদের মনে স্বপ্ন জাগাবেন, সাহস যোগাবেন শিক্ষক। যেন তারা এমন মনোভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে যে, ‘আমি অবশ্যই পারব, কখনোই হারব না’।
*শিক্ষকগণ খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন শিক্ষার্থীদের। চিহ্নিত করবেন তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা, বাতলে দিবেন সমাধানের উপায়। চাঙ্গা করে দিবেন মনোবল। সেই সাথে প্রদান করবেন পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতা জ্ঞান।
*ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকেই সমান গুরুত্ব দিবেন শিক্ষক। খেয়াল রাখবেন কোন শিক্ষার্থী যেন নিজেকে অবহেলিত ভাবতে না পারে।
*শিক্ষকগণ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সকল শিক্ষার্থীকেই আগ্রহ অনুসারে অংশগ্রহণ করাবেন কোনো না কোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমে।
*প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অন্তরে শিক্ষক জাগিয়ে দিবেন দেশপ্রেম, জাতীয় চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ। বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য করবেন অনুপ্রাণিত।
*শিক্ষকগণ অবশ্যই শিক্ষার্থীদের প্রদান করবেন খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়ামের উৎসাহ, উদ্দীপনা। নিয়মিত আয়োজন করবেন বিভিন্ন প্যারেড-পিটি ও খেলাধুলার। ক্লাসের আগে, টিফিনের ফাঁকে, ক্লাসের শেষে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের দিবেন কিছুটা দৌড়ঝাঁপ, লাফালাফি, হাসিতামাশা করার সময় ও সুযোগ। প্রদান করবেন পরিবারের বিভিন্ন কাজকর্ম করার ও বাগান করার উপদেশ।
*প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পারিবারিক অবস্থা অনুসারে শিক্ষক তৈরি করে দিবেন একটি কর্মপরিকল্পনা। যাতে নির্ধারিত থাকবে তার লেখাপড়া, নাওয়া, খাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম, কাজকর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি করার প্রমাণ সময়।
*কোনো শিক্ষার্থীর আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে, শিক্ষক একান্তে ডেকে কথা বলবেন তার সাথে। আগ্রহ দেখিয়ে শুনবেন তার বিস্তারিত সমস্যা, প্রদান করবেন সমাধানের পরামর্শ। বিষয়টি গোপনীয় হলে অবশ্যই রক্ষা করবেন গোপনীয়তা। প্রয়োজনে কথা বলবেন তার অন্য শিক্ষক ও তার অভিভাবকের সাথে।
*শিক্ষক নিজে হয়ে উঠবেন বিশ্বস্ত, শিক্ষার্থীদের উপরও রাখবেন বিশ্বাস। যেন সবকিছু মন খুলে বলতে পারে শিক্ষার্থী। বন্ধুত্ব করবেন, দূরত্ব রাখবেন, বজায় রাখবেন উত্তম ব্যক্তিত্ব। থাকবেন ধীর-স্থির, প্রকাশ করবেন না অস্থিরতা।
*এছাড়াও উদ্ভূত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে যখন যা প্রয়োজন তা করবেন শিক্ষকগণ।
শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের জন্যও চিহ্নিত করে দেওয়া উচিত কিছু করণীয়। যেমন:
*শিক্ষার্থী যখন ঘরে থাকে তখন তার প্রতি অভিভাবককে থাকতে হবে খুবই যত্নশীল। দিতে হবে সুন্দর সময়, মাতিয়ে রাখতে হবে গল্পে-আড্ডায়।
*কোনভাবেই অভিভাবক বা অন্য কেউ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করবেন না শিক্ষার্থী তথা সন্তানদের। করবেন না অস্বাভাবিক রাগারাগি, দেখাবেন না কোন ভয়।
*ক্লাসের নির্ধারিত লেখাপড়ার পাশাপাশি সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে হবে ভালো বই পড়ায়, ঘরোয়া খেলাধুলায় ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে এবং বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর সখের কাজে।
*অংশগ্রহণ করাতে হবে ছোটখাটো পারিবারিক কাজকর্মে। বয়স ও সক্ষমতা অনুযায়ী দিতে হবে কিছু দায়-দায়িত্ব। জাগিয়ে তুলতে হবে দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ। সামাজিক কাজেও করে তুলতে হবে সক্রিয়।
*যথাসম্ভব দুঃসংবাদ থেকে দূরে রাখতে হবে সন্তানদের। এমনকি মারামারি বা হিংস্রতা সম্পর্কিত গেম থেকেও রাখতে হবে বিরত। মুক্ত রাখতে হবে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে।
*সন্তানদের নাওয়া-খাওয়া ও ঘুমের সময়সূচি ঠিক রাখার ব্যাপারে দিতে হবে উৎসাহ, করতে হবে সহযোগিতা।
*সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে তাদের প্রতি, আগ্রহসহকারে শুনতে হবে সকল কথা। তাদের শারীরিক ও মানসিক যেকোন সমস্যাকেই বিবেচনা করতে হবে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এবং তা সমাধান করতে হবে দ্রুততার সাথে।
*অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটি সন্তানের গতিবিধি। জানতে হবে, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে, কার সঙ্গে ওঠাবসা করে। নিশ্চিত করতে হবে সৎসঙ্গ।
*ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলায়। বয়স ও যোগ্যতা অনুসারে গুরুত্ব দিতে হবে বিভিন্ন কথায় ও কাজে। মতামত রাখার সুযোগ দিতে হবে সিদ্ধান্তে।
*শিক্ষক বা অন্য কারো কোনরূপ সমালোচনা করা যাবে না সন্তানের সামনে। সন্তানের সমালোচনাও করা উচিত নয় শিক্ষক বা অন্য কারোর কাছে।
*ভাইবোন বা অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করে খাটো করা যাবে না কোন সন্তানকে। যা পারেনি তা না বলে, যতটুকু পেরেছে ততটুকু বারবার বলে, ধন্যবাদ দিতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে, আস্থা বাড়িয়ে দিতে হবে।
*প্রতিনিয়ত দিতে হবে উৎসাহ-উদ্দীপনা যেন কোনোভাবেই বিষন্নতায় গ্রাস করতে না পারে তাদের।
*কথায়, কাজে, চলায়, বলায় হয়ে উঠতে হবে সন্তানের বন্ধু। সর্বক্ষেত্রে ধরে রাখতে হবে এই বন্ধুত্ব। যেন তারা যেকোন সমস্যা সহজেই শেয়ার করতে পারে মা-বাবার সাথে।
*এছাড়াও প্রয়োজন অনুসারে সন্তানের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে নিতে হবে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা।
যেমন-
*শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, খেলাধুলা ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে।
*’মানসিক শিক্ষা’সহ প্রতিটি বিষয়ে অধিক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
*শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত ইন হাউস ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
*শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আচরণ মনিটরিং করতে হবে।
*শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলার জন্য শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
*শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ভয় দেখানোর জন্যও বেত-লাঠি রাখতে দেওয়া যাবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
*অভিভাবকদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
*এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও উন্নয়নে যখন যা প্রয়োজন তখন তা নিশ্চিত করতে হবে।
এরিস্টটলের মতে- ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই শিক্ষা’। সুস্থ মন গঠন একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া! ছোটবেলা থেকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রেখেই গঠন করতে হয় শিক্ষার্থীর সুস্থ মন। যিনি এই কাজে যত বেশি সফল তিনিই তত বেশি উত্তম শিক্ষক, অভিভাবক। বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান বা মোকাবিলা করে সঠিক পথে এগিয়ে চলার জন্য শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক শক্তি লাভের জ্ঞান-দক্ষতা প্রদান করা শিক্ষক এবং অভিভাবকের গুরু দায়িত্ব। শিক্ষার্থীর মনকে এমনভাবে গঠন করতে হয় যেনো সে কোনদিন ভেঙ্গে না পড়ে ব্যর্থতায়, নিমজ্জিত না হয় বিষন্নতায়। স্বপ্রেষিত হয়ে সে যেনো নিজেই আজীবন ধরে রাখতে পারে নিজের কর্মোদ্যম ও মানসিক সুস্থতা।
লেখক : কলাম লেখক, সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।
rahamot21@gmail.com
Discussion about this post