মুহাম্মদ মুতাছিম বিল্লাহ্ মাক্কী
প্রিয় পরীক্ষার্থী বন্ধুরা! শুভেচ্ছা নিও। আশা করি তোমরা সবাই কাঙ্খিত প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছো। পরীক্ষা নামক শব্দটি তোমাদের মাঝে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে নিশ্চয়ই। উদ্বেগের কোন কারণ নেই, এ প্রতিধ্বনির প্রকৃত সাফল্যের ভাগ্য নির্মাতা তোমরাই। সামনে তোমাদের জেডিসি/জেএসসি, ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী/পিএসসি, দাখিল/এসএসসি পরীক্ষা। এ সময়টা তোমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমাদের স্ব স্ব পরীক্ষার জন্য চলছে দীর্ঘদিনের শ্রমলব্দ মেধা ও মননের চূড়ান্ত মহড়া। প্রতিটি বিষয়ে নিবিড় অনুশীলনে এখন তোমরা গভীরভাবে মগ্ন। পরীক্ষায় সফলতার জন্য শিক্ষার্থীর করণীয় সম্পর্কে তোমাদের কিছু পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি পরামর্শগুলো তোমাদের ভালো ফলাফল অর্জনে কাজে লাগবে। তোমাদের সবার পরীক্ষা ভালো হোক, তোমরা কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করো, মহান মহিয়ানের দরবারে এ প্রার্থনাই করছি।]
মানুষের জীবনটা বৃক্ষতুল্য। একে সাজাতে হয় নানাভাবে। সুশোভিত করতে হয় ফুলে-ফলে। জীবনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করতে চাই ঐকান্তিক সাধনা ও প্রাণান্তকর চেষ্টা। শিক্ষাজীবনে পরীক্ষা হলো এমনই এক চেষ্টা ও সাধনার সিঁড়ি। শিক্ষাজীবনের সফলতা-ব্যর্থতা বহুলাংশে নির্ণয় করা হয় পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। সকল শিক্ষার্থীই চায় ভালো বা কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে। পরীক্ষার খাতায় লেখার ওপর নির্ভর করেই মান যাচাই বা মূল্যায়ন করা হয়।
সকল শিক্ষার্থীর মেধা সমান নয়। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে উপস্থাপনের অভাবে কাক্সিক্ষত ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়। মেধাবী হলেই ভালো বা কাক্সিক্ষত ফল করা যাবে এ ধারণা মোটেই সঠিক নয়। কিছু কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে মেধার ঘাটতি অনেকটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।
পরীক্ষা কী:
“পরীক্ষা” শব্দটির সাথে আমরা সকলেই অতি পরিচিত। পরীক্ষা হচ্ছে মেধা যাচাই ও পড়ালেখার অগ্রগতি মূল্যায়নের মাধ্যম। পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর অগ্রগতি ও উন্নতি মূল্যায়িত হয়ে থাকে। কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে পারে না। এ কারণে পরীক্ষাকে কেউ কেউ এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন: “The way people connected with schools or other aspects of yours life evaluate your performance. Exams are also a way of informing you of your current progress and ability.”
যে প্রশ্নসেট ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হয় তার নাম অভীক্ষা। অভীক্ষা নিম্নরূপ হতে পারে:
১) সৃজনশীল প্রশ্ন বা Creative Question (CQ), ২) নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন বা Objective/Short Question, ৩) রচনামূলক, বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন বা Subjective/ Broad Question
আমাদের দেশের পরীক্ষা পদ্ধতিতে এক সময় রচনামূলক বা বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার বহুল প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সৃজনশীল ও নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের প্রচলন অনেক বেশী ও কার্যকর।
পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কতিপয় পরামর্শ:
১. প্রশ্নপত্রের নম্বরের আলোকে উত্তর লেখার জন্য সময় বন্টন করা: শিক্ষার্থীকে নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার অনেক আগেই প্রশ্নপত্রের নম্বরের আলোকে উত্তর লেখার জন্য সময় বন্টন করে নিতে হবে।
২. বণ্টনকৃত সময়ের আলোকে উত্তর লেখার প্র্যাক্টিস/ অভ্যাস করা: পরীক্ষার্থীকে বণ্টনকৃত সময়ের মধ্যে উত্তর লেখার প্র্যাক্টিস বা অভ্যাস করতে হবে, যাতে সে আলোকে পরীক্ষার হলে সকল প্রশ্নের উত্তর লেখতে সক্ষম হয় এবং সময়ের অভাবে কোন উত্তর লেখা বাদ পড়ে না যায়।
৩. পরীক্ষার স্থান (কেন্দ্র), সময় ও রুটিন জানা: পরীক্ষার স্থান/কেন্দ্র, পরীক্ষা শুরু ও শেষ হওয়ার সময় এবং রুটিন/সময়সূচি অর্থাৎ কোন বিষয়ের পরীক্ষা কোন দিন হবে তা পরীক্ষার্থীর জানা থাকা অত্যাবশ্যক। পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পরীক্ষার সময়সূচি ভালোভাবে দেখে নেয়া প্রয়োজন।
৪. পরীক্ষার রাতে অধিক না জাগা: পরীক্ষার রাতে বেশি সময় জাগ্রত থাকার চেয়ে পরিমিত ঘুমানো উচিত, যাতে করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ঘুমের ভাব না থাকে এবং মস্তিস্ক শান্ত থাকে। পরীক্ষার আগের রাতে অধিক পরিমাণে জাগ্রত থাকার কারণে অনেকের জন্য ভালোভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
৫. উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও টেনশনমুক্ত ফাইনাল বা চূড়ান্ত রিভিশন : শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা উদ্বেগ ও টেনশনের কারণ। পরীক্ষার আগের রাতেই সকল পরীক্ষার্থী চূড়ান্ত বা ফাইনাল রিভিশন দিয়ে থাকে। চূড়ান্ত রিভিশন কালে কোন কিছু মনে না এলে, মুখস্থ করতে কোন বিষয় বাদ পড়ে গেলে, জানা বিষয় ভুলে গেলে উদ্বেগ বা টেনশন নেয়া উচিত নয়। এতে সময় অপচয়, মানসিক অশান্তি বৃদ্ধি হওয়া ব্যতিত কোন উপকার হতে পারে না। উদ্বিগ্ন হলে কোন অজানা বিষয় জানা হয় না, বরং জানা বিষয় ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য পরীক্ষার আগের রাতে টেনশন, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠামুক্ত ফাইনাল রিভিশন দেয়া উচিত।
৬. পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম নেয়া : পরীক্ষার আগের রাতে শরীর ও মনকে পরিমিত বিশ্রাম দেয়া দরকার। পড়তে পড়তে মাথা জ্যাম করে পরীক্ষার হলে যাওয়ার চেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষার হলে যাওয়া উত্তম।
পরীক্ষার দিন করণীয়:
১. প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে রাখা: পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বেই প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকরণ সাথে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। কোন কোন পরীক্ষার্থী একেবারে নতুন কলম নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে, প্রবেশপত্র বা পরীক্ষাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বাসায় ফেলে রেখে হলে ঢুকেই মানসিক বিড়ম্বনার শিকার হয়। এতে মন-মানসিকতা খারাপ হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে ব্যবহার উপযোগী কলম, প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, জ্যামিতিবক্স, পেন্সিল, রাবার, ক্যালকুলেটরসহ পরীক্ষা সম্পৃক্ত উপকরণাদি সাথে রাখা দরকার।
২. রুচি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ : পরীক্ষার সময় বা পরীক্ষা শুরুর আগের দিনগুলোতে সাধারণত স্বাস্থ্য ও রুচিসম্মত খাবারগ্রহণ করা উচিত। কেউ কেউ স্বাস্থ্যসম্মত খাবারগ্রহণ না করে অস্বাস্থ্যকর খাবারগ্রহণ করে থাকে, ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এতে করে কোন কোন সময় পেটের সমস্যা তৈরী হয় বা অস্বস্তিবোধ করে থাকে।
৩. আরামদায়ক পোশাক পরিধান : পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এমন পোশাক পরিধান করা উচিত, যা আরামবোধ হয়। পরিধেয় পোশাক যদি আরামদায়ক না হয় তাহলে শরীরে অস্বস্তি অনুভূত হয়, এর কারণে পরীক্ষার হলে যথাযথ উত্তর লেখতে অসুবিধা হতে পারে।
৪. প্রাকৃতিক কাজে সেরে নেয়া: প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে প্রাকৃতিক কাজ/টয়লেট সেরে নেয়া উচিত। পরীক্ষার হলে প্রাকৃতিক কাজ সারতে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে নিজের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় অপচয় হয়ে যাবে।
৫. নির্দিষ্ট সময়ের ন্যূনতম ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার হলে পৌছা: পরীক্ষা শুরু হওয়ার ন্যূনতম আধা ঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষা কেন্দ্রে/হলে প্রবেশ করা দরকার। যাতে নির্ধারিত আসনে বসে একটু রেস্ট নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যসহকারে পরীক্ষার উত্তরপত্র লেখা শুরু করা যেতে পারে।
পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীর করণীয়:
১. নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়া ও অনুধাবন করা: সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কিছু নির্দেশিকা দেয়া থাকে, তা মনোযোগ সহকারে পড়া ও অনুধাবন করা প্রয়োজন। নির্দেশিকা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য জরুরি।
২. উত্তর পত্র সঠিক আছে কিনা ভালোভাবে চেক করা : লেখা শুরু করার পূর্বে উত্তরপত্র যথাযথ আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে নেয়া বা চেক করা দরকার। কোন কোন সময় উত্তরপত্র ছেড়া থাকে বা পিন খোলা থাকে। এ ধরণের উত্তরপত্র জমা দিলে অসদুপায় অবলম্বন করা হয়েছে বলে পরীক্ষক সন্দেহ করতে পারেন।
৩. উত্তরপত্রে রোলনম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য নির্ভুলভাবে লেখা : পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রের নির্ধারিত স্থানে পরিষ্কারভাবে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোডসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ভালোভাবে লেখতে হবে ও সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা তা চেক করতে হবে এবং বৃত্ত সঠিকভাবে ভরাট করতে হবে । কখনও কখনও দেখা যায়, পরীক্ষার উত্তরপত্রে রোলনম্বর না লেখা, ভুল লেখা, সঠিকভাবে বৃত্ত ভরাট না করার কারণে পরীক্ষার খাতায় ভালো লিখেও নম্বর পাওয়া যায় না এবং কখনও কখনও ভুল রোল লেখা বা বৃত্ত সঠিকভাবে ভরাট না হওয়ার কারণে পরীক্ষার ফল স্থগিত হয়ে যায়। এ বিষয়ে পরীক্ষার্থীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
৪. প্রশ্নপত্র ভালোভাবে পড়া : প্রশ্নপত্র পাওয়ার সাথে সাথেই মনোযোগসহকারে প্রশ্নপত্র ভালোভাবে পড়ে নেয়া দরকার। পরীক্ষার্থীকে ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে যে- কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, প্রশ্নে এমন কোন প্রশ্ন আছে কিনা যা, যার জবাব দেয়া বাধ্যতামূলক।
৫. কোন প্রশ্ন না বুঝে থাকলে পরিদর্শকের নিকট থেকে বুঝে নেয়া : এমন কোন প্রশ্ন যদি থাকে যা পরীক্ষার্থীর নিকট অস্পষ্ট বা বুঝতে সমস্যা হয়, তা পরিদর্শক শিক্ষকের নিকট থেকে বুঝে নেয়া দরকার। সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে সঠিক উত্তর লেখতে অনেক পরীক্ষার্থী ব্যর্থ হয়, যা তার ফলের ওপর প্রভাব পড়ে।
৬. সময় বণ্টনের আলোকে উত্তর লেখা: পরীক্ষার্থীকে পূর্বেই নম্বরের আলোকে উত্তর লেখার সময় বন্টন করে নিতে হবে। অধিক নম্বর ও অল্প নম্বরের জন্য বন্টিত সময় এক হতে পারেনা। অল্প নম্বরের জন্য অল্প সময় এবং অধিক নম্বরের জন্য অধিক সময় বরাদ্ধ দিয়ে সময় বণ্টন করতে হবে এবং সে আলোকে পরীক্ষায় খাতায় লিখতে হবে। তাহলে কোন উত্তর লেখা সময়ের অভাবে বাদ পড়ে যাবে না।
৭. সহজ প্রশ্নের উত্তর আগে লেখা : সাধারণত পরীক্ষক প্রথম দু’-একটি প্রশ্নের উত্তর পড়ে পরীক্ষার্থী সম্পর্কে ধারণা লাভ করে থাকেন। এ কারণে পরীক্ষার্থীর উচিত যে প্রশ্নের উত্তর তার কাছে সবচেয়ে ভালো জানা আছে তার উত্তর সে প্রথমে লেখবে। যদি প্রথম প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় পরীক্ষার্থী নিজের কাছে কঠিন উত্তর লেখা হয়, তাহলে পরীক্ষকের নিকট একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরী হতে পারে। যা কাক্সিক্ষত নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে।
৮. নির্ভুল, সুস্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে লেখা : প্রতিটি মানুষ সুন্দরের পূজারী। কাজেই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার খাতায় নির্ভুল, সুস্পষ্ট ও সুন্দর পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নভাবে উত্তর লেখা উচিত। কেউ কেউ অস্পষ্ট, খুব বেশী ঘন ঘন, অপরিচ্ছন্নভাবে উত্তর লেখে, যা তাকে সঠিক ও কাক্সিক্ষত নম্বর পেতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।
৯. উত্তরপত্রে অধিক কাটাছেড়া না করা: পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তার উত্তরপত্রে অধিক কাটাছেঁড়া না হয়। তবে কখনও উত্তর লেখায় ভুল হলে তা একদাগে কেটে দিতে হবে। কেউ কেউ উত্তর লেখার সময় অধিক কাটাছেঁড়া করে থাকে, যা ভালো নম্বর পেতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।
১০. অপ্রয়োজনীয় কিছু লেখা থেকে বিরত থাকা : পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষককে লক্ষ্য করে অপ্রয়োজনীয় কিছু লেখা উচিত নয়। কখনও কখনও দেখা যায় কোন কোন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার খাতায় লিখে “স্যার! আমার মা খুবই অসুস্থ, তাই লিখতে পারছি না। আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে পাস করিয়ে দিবেন। আমি পাস না করলে আত্মহত্যা করবো ইত্যাদি”। যা কিনা পরীক্ষককে করুণা/অনুকম্পার পরিবর্তে রাগান্বিত করে তোলে। পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন কিছু লিখে অহেতুক সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
১১. প্রশ্নকঠিন হলেও মানসিকভাবে ভেঙে না পড়া : পরীক্ষার প্রশ্ন খুব কঠিন হলেও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া যাবে না। মনোবল ভেঙে পড়লে জানা বিষয়ও ভালোভাবে লিখতে পারবেনা এবং সহজ বিষয়গুলোও কঠিন মনে হবে।
১২. হঠাৎ কিছু মনে না হলে জায়গা খালি রাখা, পরে মনে হলে লেখা : এমনটি হতেই পারে যে, কোন প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় হঠাৎ কোন তথ্য মনে পড়ছে না। এমন হলে সময় অপচয় না করে জায়গা খালি রেখে লেখা চালিয়ে যাওয়া উচিত। পরবর্তীতে যখন স্মরণ হবে তখন তা যোগ করে দিতে হবে।
১৩. কোন প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে না পারলে জায়গা খালি রাখা : প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য নিজের পক্ষ থেকে যে সময় বরাদ্দ করা হয়েছে উক্ত সময়ের মধ্যে কোন প্রশ্নের উত্তর লিখতে শেষ করতে না পারলে জায়গা খালি রেখে পরের প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করা দরকার। অন্যথায় কিছু প্রশ্ন থেকে যাবে যার উত্তর সময়ের অভাবে লেখা যাবে না।
১৪. প্রশ্ন আনকমন হলেও উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা : প্রশ্ন আনকমন হলেও সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আনকমন প্রশ্ন সকল পরীক্ষার্থীর জন্যই আনকমন এ কথা মনে রেখে, ধারণানির্ভর হয়েও উত্তর লেখা যেতে পারে। উত্তরপত্রে কিছু লেখা থাকলে কিছু নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৫. উত্তরপত্র চেক করা/রিভিশন দেয়া: পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার আগে পুরো উত্তরপত্র একবার ভালোভাবে চেক/ রিভিশন দেয়া প্রয়োজন, কোথাও মারাত্মক/অযাচিত ভুল রয়ে গেল কিনা। বিশেষ করে প্রথম প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে চেক করা। কারণ প্রথম প্রশ্নের উত্তর পড়েই পরীক্ষকের মনে পরীক্ষার্থী সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়।
১৬. পরীক্ষার সময় বাকি থাকতে হল ছেড়ে বের না হওয়া : যদি পরীক্ষার সময় অবশিষ্ট থাকতে চাহিত সকল উত্তর লেখা ও রিভিশন দেয়া শেষ হয়ে যায়, তাহলেও পরীক্ষার সময় বাকি থাকতে উত্তরপত্র জমা দেয়া যাবে না। বার বার উত্তরপত্র পড়তে হবে। বানানসহ কোন ভুল-ত্রুটি আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে।
পরীক্ষার পর করণীয় : ১. চিন্তা না করা: যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর চিন্তা করে কোন লাভ নেই। চিন্তা করে পরবর্তী পরীক্ষা খারাপ করার কোন সুযোগ নেই। কোন কোন সময় এক বিষয়ের পরীক্ষা একটু খারাপ হওয়ার পর বাকি বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা না দেয়ার কারণে কাক্সিক্ষত ফল পেতে ব্যর্থ হয়। অথচ পরীক্ষার পর নম্বরপত্রে দেখা যায়, যে বিষয়ে নিজেকে খারাপ নম্বর পাবে বলে ধারণা করেছে, সে বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়েছে। এ জন্য চিন্তা না করে পরবর্তী বিষয়ের প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
২. একটু বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা : পরীক্ষার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে পূর্বে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার খুব বেশী পর্যালোচনা না করে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিগ্রহণ করা সচেতন পরীক্ষার্থীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেউ কেউ পূর্বের পরীক্ষার পর্যালোচনা করতে গিয়ে পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি যথাযথ গ্রহণ করতে পারে না। এটা কাম্য নয়।
৩. আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ধরণা দেয়া, দো’আ করা : পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মহান আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ধরণা দিতে হবে, দো’আ করতে হবে। মহান রবের রহমত ছাড়া দুনিয়াতে কেউ উন্নতি করতে পারে না। তার রহমত ব্যতীত ভালো ফল করাও সম্ভব নয়। তাই আমরা যারা মুসলিম তাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, মহান প্রতিপালকের কাছে ফরয ইবাদত, তাহাজ্জুদের নামায, নফল ইবাদত বেশী বেশী আদায় করে বিনয়াবতচিত্তে কাক্সিক্ষত ফল অর্জনে প্রার্থনা করা।
সর্বোপরি পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত ফল অর্জনের জন্য ওপরোক্ত পরামর্শগুলো গ্রহণের পাশাপাশি পিতা-মাতা, শিক্ষকম-লী, মরুব্বীদের সাথে সদাচরণের মাধ্যমে তাদের দো’আ নেয়া, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীনের সাহায্য ও রহমত কামনা করা উচিত।
* লেখক : অধ্যক্ষ, নিবরাস ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা
Discussion about this post