নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিগ্রি পাস কোর্সের অনুমোদন ও শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় পরস্পরবিরোধী তথ্য যুক্ত থাকায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর শিক্ষকরা। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তবে এসব শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে রয়েছে। করণীয় নিয়ে কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
তথ্য অনুযায়ী, কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্স খোলার শর্ত হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নীতিমালায় বলেছে, স্নাতক (পাস) কোর্স চালুর জন্য বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যান্য শর্তের পাশাপাশি নিয়ম মেনে তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিলেই ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালুর অনুমতি দেয় এবং নবায়নের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম কঠোরভাবে মানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিগ্রি (পাস) স্তরে বিষয়ভিত্তিক দুই জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছে।
২০১৮ সালে নতুন করে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, ডিগ্রি (পাস) কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়াও প্রভাষক/ সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) দুই জন, প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) দুই জন, প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (তথ্যপ্রযুক্তি) দুই জন, প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (ঐচ্ছিক বিষয় চালু থাকলে) দুই জন হবে। এসব শিক্ষকই এমপিওভুক্তি পাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় বৈপরীত্য থাকায় বিপাকে শিক্ষকরা। কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্স অনুমতি নিতে গিয়ে তিন জন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি ডিগ্রি কলেজগুলো। দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেও তৃতীয় জন এমপিওভুক্ত হতে পারছে না।
বাংলাদেশ ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক রুমানা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে তাদের এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এক চিঠি পাঠিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে মতামত জানতে চান।
মাউশি অধিদপ্তরের মতামতে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্তি ডিগ্রি কলেজের জনবল কাঠামো-২০১০ প্রকাশের পরে বিধি মোতাবেক সারা দেশে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বার্ষিক ২৫ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় হবে।
সূত্র জানায়, মাউশি অধিদপ্তর থেকে যে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে ৭১ জন আছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত। বাকি ৭৭০ জন ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এনটিআরসিএ গঠনের আগেই সরাসরি গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান উর রশীদ বলেন, শিক্ষার মান রক্ষার জন্য ডিগ্রিতে প্রতি বিষয়ে তিন জন শিক্ষক প্রয়োজন। সে হিসেব বিবেচনায় এনে ডিগ্রি খোলার শর্ত হিসেবে বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে।
Discussion about this post