সৃজনশীল ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর করার কিছু কৌশল ও পরামর্শ
তোমাদের জন্য বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের ধরন ও উত্তর কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শবিষয়ক আলোচনা করব। আশা করি নিম্নবর্ণিত প্রশ্নোত্তর সংক্রান্ত কৌশল ও পরামর্শ অবলম্বন তোমাদের কাক্সিক্ষত সাফল্যকে সুনিশ্চিত করবে।
সৃজনশীল অংশ : প্রশ্ন থাকবে ৯টি, উত্তর করতে হবে ৬টি, প্রতিটিতে
(ক-১, খ-২, গ-৩, ঘ-৪) = ১০ নম্বর করে মোট নম্বর ৬০।
সময় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট
ক. জ্ঞানমূলক অংশ : প্রদত্ত নম্বর-১ [পাঠ্যবই থেকে একবাক্যে সঠিক উত্তর দেবে; এখানে কোনো বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণের দরকার নেই]
খ. অনুধাবনমূলক : প্রদত্ত নম্বর-২, এখানে ২টি প্যারা করা যেতে পারে। [প্রথম প্যারাটি হবে একবাক্যের। প্রশ্নে যা চাইবে এক কথায় উত্তরের আসল বস্তু জ্ঞান আকারে লিখবে একবাক্যে আর দ্বিতীয় প্যারায়/অংশে থাকবে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ, যা সর্বোচ্চ ৩-৪ বাক্য হবে] । মনে রাখা প্রয়োজন অনুধাবনমূলক প্রশ্নে উত্তরের ক্ষেত্রে সব মিলে সর্বোচ্চ ৫ বাক্যে শেষ করতে হবে।]
গ. প্রয়োগমূলক অংশ : প্রদত্ত নম্বর-৩ । এখানে উত্তরের তিনটি প্যারা বা অংশ করা যেতে পারে। [এখানে তোমাকে তিনটি অংশ বা প্যারা করে লিখতে পার। অংশগুলো হলো : উত্তরের শুরুতেই মূল উত্তরটুকু অর্থাৎ জ্ঞানমূলক আকারে এক বাক্যে উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। এরপর প্রশ্নে চাওয়া বিষয়ের সঙ্গে মূল পাঠ্যের সম্পর্ক নিরূপণ থাকবে, যাকে ব্যাখ্যেয় অংশ বলা যেতে পারে। প্রয়োগের তৃতীয় অংশ অবশ্যই সম্পর্ক নিরূপণের ক্ষেত্রে প্রকৃত সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রথম প্যারা এক বাক্য; দ্বিতীয় প্যারা ৩/৪ বাক্য আর তৃতীয় প্যারা ৭/৮ বাক্য হতে পারে। এখানে সর্বোচ্চ ১১ বাক্য লিখতে পারবে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক : প্রদত্ত নম্বর-৪ [এখানে তোমাকে তিন থেকে চারটি অংশ বা প্যারা করে লিখতে হবে। অংশগুলো হলো : উত্তরের শুরুতেই প্রশ্ন অনুযায়ী জ্ঞানমূলক অংশে এক বাক্যে উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। দ্বিতীয় প্যারায় প্রশ্ন অনুযায়ী উদ্দীপক ধরে চিন্তন শক্তি ব্যাখ্যা করবে। তৃতীয় প্যারায় উদ্দীপক ও মূল পাঠ্যের সম্পর্কগত আলোচনা করবে, সার্বিক বিশ্লেষণ করবে, সে ক্ষেত্রে উদ্দীপক, মূল পাঠ্য বিষয় ও পারিপার্শ্বিক জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে তোমার অনুভূতি/মতামত প্রকাশ করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। এখানে সর্বোচ্চ ১৫ বাক্য লিখতে পারবে।
সৃজনশীলের ক্ষেত্রে প্যারা আকারে লেখা বাধ্যতামূলক নয়; তবে উত্তরের প্রাসঙ্গিকতা ঠিক রাখার জন্য প্যারা করা দোষের হবে না।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন : মোট প্রশ্ন ৪০, মোট নম্বার ৪০, সময় ৪০ মিনিট
নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। গল্প, কবিতা, শব্দার্থ ও টীকা বারবার পড়বে। কবিতা, প্রবন্ধ বা গল্পের মূল বিষয়বস্তু, গল্প ও কবিতা পাঠের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। কবি বা লেখকের জন্মস্থান, জন্ম-মৃত্যু সাল, তার রচিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার বা গ্রন্থের নাম মনে রাখবে। একটি গল্প বা কবিতার উৎস, প্রকাশের সাল, প্রকাশের পত্রিকা, কোনো গল্প বা কবিতার মাঝে অন্য কোনো লেখক কবির উদ্ধৃতি, কোনো মনীষীর নাম থাকলে তা গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের খ্যাতনামা স্কুলের প্রশ্নগুলো দেখে চর্চা করতে পারো। পরীক্ষায় কোনো ধরনের বাজে টেনশন না করা, প্রশ্ন পড়তে তাড়াহুড়া বা দ্রুত না করা, পরীক্ষাকক্ষে অমনোযোগী না হওয়া তোমার সাফল্যকে আরও বেশি নিকটবর্তী করবে। বর্তমান ক্যাটাগরিতে যে তিনটি স্তর তোমাদের পার করতে হবে তা হলো :
(ক) সাধারণ বহুনির্বাচনী অংশ : এ অংশ জ্ঞানভিত্তিক স্মৃতিনির্ভর। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো কখনও প্রশ্ন আকারে আবার কখনও অসম্পূর্ণ বাক্য হিসেবে দেওয়া থাকে, যা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। বিকল্প উত্তর ৪টি, যার মাত্র একটি সঠিক। এ বিভাগে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতাÑ এ ৪টি উপবিভাগ বিদ্যমান থাকে। মূল বই বারবার পড়লে এখান থেকে ১০০% নাম্বার আদায় করা সম্ভব।
(খ) বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্ন : এ ধরনের প্রশ্নের শুরুতে ৩টি তথ্যভিত্তিক উপস্থাপন থাকে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরে ৪টি প্রশ্ন তৈরি করা হয়, যা রোমান বর্ণে মুদ্রিত থাকে। এ প্রশ্নে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একাধিক উত্তর থাকে, যার উত্তর প্রদত্ত চারটি প্রশ্নে বিদ্যমান। অতি নিখুঁতভাবে ভেবে এখানে উত্তর করতে হবে তোমাদের। এ স্তরে অনুধাবন, প্রয়োগ, উচ্চতর দক্ষতা যাচাই করা হয়।
(গ) অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন : এখানে একটি উদ্দীপক পাবে, যার মাধ্যমে তোমাকে তথ্য সরবারহ করা হবে। প্রশ্নগুলোর সঙ্গে একে অপরের মিল দেখতে পাওয়া যাবে। ভয় পাবে নাÑ ভাবলেই দেখবে এখানে সাধারণ বহুনির্বাচনী বা বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্নই হয়ে থাকবে। এখান থেকে মূলত প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতাকে যাচাই করা হয়। উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়বে এবং মূল বইকে অনুসরণ করবে তাহলেই এ পর্বে তুমি নিশ্চিত ভালো করবে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ধরন : গদ্যাংশ : ১৫ পদ্যাংশ ১৫ : আনন্দপাঠ ১০ : মোট ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে, পূর্ণমান : ৪০
বাংলা দ্বিতীয় পত্র
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের ধরন, মানবণ্টন ও উত্তর কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শ
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপদ্ধতি ও মানবণ্টনে কিছু পরিবর্তন বছরের শুরু থেকেই তোমরা লক্ষ্য করেছ। রচনামূলক অংশে ৩০ নম্বর এবং নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা ২০ নম্বর সর্বমোট ৫০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য তোমরা ২ ঘণ্টা সময় পাবে। ২০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট ব্যতীত আরও ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় পাবে রচনামূলক অংশের জন্য, যা সব প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট।
সারাংশ ও সারমর্ম : গদ্যের আকারে থাকে সারাংশ আর কবিতার আকারে থাকে সারমর্ম। যে কোনো একটি লিখতে হবে নির্ধারিত নম্বর ০৫। সারাংশ/ সারমর্ম সুন্দর হাতের লেখায় তিন থেকে পাঁচ বাক্যে শেষ করবে। সারাংশ/ সারমর্ম মূলের এক-তৃতীয়াংশ লিখতে হয়। কোনো ক্রমেই এটি খুব বড় করে লেখা যাবে না।
ভাবসম্প্রসারণ : ভাবসম্প্রসারণও সাধারণত একটি গদ্য ও একটি কবিতার আকারে থাকে, যে কোনো একটি লিখতে হবে। নির্ধারিত নম্বর ০৫। কমপক্ষে তিনটি প্যারায় সুন্দর হাতের লেখায় লিখবে। ভাবসম্প্রসারণে কোনো প্রকার উদ্ধৃতি বা ইংরেজি কোটেশন ব্যবহার করা যাবে না। ভাবসম্প্রসারণের আয়তন নম্বর অনুপাতে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ধরাবাধা কোনো নিয়ম নেই। তবে মূলভাব বজায় রেখে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে লেখার পরিধি নির্ধারণ করতে হবে।
অনুচ্ছেদ ও অনুধাবন শক্তি পরীক্ষা : এখানে একটি অনুচ্ছেদ ও একটি অনুধাবন শক্তি পরীক্ষামূলক অংশ থাকবে। যে কোনো একটি লিখতে হবে। নির্ধারিত নম্বর ০৫। অনুচ্ছেদ এবং অনুধাবনের বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন তোমাদের জন্য। তবে নতুন বিষয় হলেও অত্যন্ত সহজ। অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক পৃষ্ঠা লেখা যেতে পারে। অনুধাবন শক্তির ক্ষেত্রে যে চারটি প্রশ্ন থাকে তা অত্যন্ত সহজ-সরল ও ছোট আকারে উপস্থাপন করবে।
চিঠি/পত্র : চিঠি এবং পত্র দুটি থাকবে, যে কোনো একটি লিখতে হবে। নির্ধারিত নম্বর ০৫। চিঠি/পত্র নিয়ম মেনে সুন্দর হাতের লেখায় লিখবে। তবে চিঠির চেয়ে পত্র লেখাই বেশি সুবিধাজনকÑ স্বল্পায়তনের হয়ে থাকে। চিঠি/পত্রে প্রশ্নে যে নির্ধারিত নাম ও স্কুলের নাম উল্লেখ থাকবে তোমাকে অবশ্যই খাতায় সেটি ব্যবহার করতে হবে। চিঠি/পত্রে নিজের নাম কিংবা স্কুলের নাম লেখা বাঞ্ছনীয় নয়।
প্রবন্ধ রচনা : তিনটি বিষয় সঙ্কেতসহ উল্লেখ থাকবে। যে কোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা করতে হবে। নির্ধারিত নম্বর ১০। বিষয়ের সঙ্গে উল্লিখিত সঙ্কেত অনুসারে লিখতে হবে। বিষয়ের সঙ্গে উল্লিখিত সঙ্কেত ব্যতীত সঙ্কেত ব্যবহার করা যাবে না। প্রবন্ধ রচনার কোনো নির্ধারিত আকার-আয়তন নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঙ্কেত অনুসারে আয়তন যা হয়। এখানে বিষয় সংশ্লিষ্ট কোটেশন কিংবা কবিতার লাইন ব্যবহার রচনাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।
নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা : ২০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরে সরাবরাহকৃত উত্তরপত্রে কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দিয়ে টিক চিহ্ন দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ করে সর্বমোট ২০ নম্বর। বোর্ড থেকে সরবরাহকৃত ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ অষ্টম শ্রেণি, বইটির ব্যাকরণ অংশ (১ থেকে ৯০ পৃষ্ঠা) পর্যন্ত যে বিষয়গুলো দেওয়া আছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পড়বে।
উত্তর লেখায় বিশেষ সতর্কতা ও পরামর্শ হ
* নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ করা এবং সব প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তর করা।
* যেসব প্রশ্নের উত্তর অপেক্ষাকৃত সহজ সেগুলো দিয়ে উত্তর লেখা শুরু করা।
* লেখার শুরুতেই কোনো ধরনের কাটাকাটি না করা।
* প্রশ্নের উত্তরে আকার-আয়তনের যথাসম্ভব সমতা রক্ষা করা।
* গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, কোনো শিরোনাম বাচক শব্দ এবং কবি-লেখকের নামের বানান শুদ্ধ করে লেখা।
* যথাসম্ভব সুন্দর হাতের লেখায় উত্তর করা।
* পরীক্ষার খাতায় ঘষা-মাজা এবং বিশৃঙ্খলভাবে কাটাকাটি না করা।
Discussion about this post