শিক্ষার আলো ডেস্ক
নেই পর্যাপ্ত যোগ্য শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। একাদশ বা ডিগ্রি শিক্ষা কার্যক্রম চালানোই দায়। অথচ চলছে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স। এই স্তরের শিক্ষক এমপিওভুক্ত নন, কলেজ থেকেও দেওয়া হচ্ছে না বেতন-ভাতা। ফলে শিক্ষকও নেই। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় এ ধরনের কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন করে ভাবছে মন্ত্রণালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বেসরকারি কলেজে আর কোনো অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেওয়া হবে না।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছেন। কাজেই যারা অনার্স-মাস্টার্স করবেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করবেন। ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্স করতে পারি।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বেসরকারি কলেজে নতুন করে আর অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেওয়া হবে না। গত ৮-৯ মাস ধরেও এমন কোনো কোর্স অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশে ১৩টি শতবর্ষী সরকারি কলেজ রয়েছে। সেসব কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্স না রেখে সেখানে শুধু অনার্স-মাস্টার্স কোর্স পরিচালনার চিন্তা করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর দ্বিমত নেই। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি রিজিওনাল সেন্টারের কাজ চলছে। সেখানে ভালো কলেজ থেকে শিক্ষকদের এনে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা যাবে।
এই উপ-উপাচার্য আরো বলেন, বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু না করে সেখানে ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে শর্টকোর্স চালুর চিন্তাও চলছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত্ কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাবে।
কলেজগুলোতে অনার্সমাস্টার্স কোর্স অনুমোদন, শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও কলেজে অনার্স মাস্টার্স কোর্স কেন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা বলেন, যেসব কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, অবকাঠামো নেই, এমন কলেজগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বাতিল করা হবে। আর কোর্স বাতিল হওয়া কলেজের শিক্ষকদের পার্শ্ববর্তী কলেজগুলোতে স্থানান্তর করার বিষয়টিও নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কলেজ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সারা দেশে ৮ শতাধিক কলেজে অনার্স কোর্স চালু আছে। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজ ৩ শতাধিক। আর মাস্টার্স রয়েছে এমন কলেজ অনেক কম। তিনি জানান, কলেজের পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই সেসব কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বাতিলের বিষয় চিন্তা চলছে।
অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স খোলার উদ্দেশ্য ছিল পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। বিশেষ করে মেয়েদের কথা চিন্তা করা হয়েছিল। উচ্চ শিক্ষার আগ্রহ আছে কিন্তু দূরের কলেজে গিয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই। কলেজে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেওয়ার সময় কলেজগুলোর জন্য শর্ত ছিল কলেজগুলো থেকে ঐ স্তরের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। কিন্তু কলেজগুলো তা করেনি। এখন শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবি তুলেছেন।
অন্যদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর সংশোধনীতে এমপিওভুক্তির সুযোগ চান অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা। এমপিওভুক্ত করা না হলে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা। বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ৩১৫টি কলেজে বর্তমানে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক শুধু জনবল কাঠামোর বাইরে থাকায় দীর্ঘ ২৮ বছর এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। অন্যদিকে মাদ্রাসা ফাজিল ও কামিল (মাস্টার্স) পর্যায়ে শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা বঞ্চিত রয়েছেন।
Discussion about this post