শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে রোডম্যাপ ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। তারা বলছেন, করােনা ভাইরাসের প্রকোপে গত বছরের মার্চের ১৭ তারিখ থেকে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে বন্ধ। করােনার কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর অংশটিকে মহামারী শেষে আবার শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে পারবে কি-না সেই প্রশ্ন করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতরা।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। নেতারা বলছেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার রোডম্যাপ ঘােষণা করুন। আমাদের ৮ দফা দাবি মেনে নিন।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক মতবিনিময় সভা করা, ২৭ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে ৮ দফা দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং স্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল।
আট দফা দাবি হচ্ছে:
১) করােনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন ফি মওকুফ করতে হবে। এসাইনমেন্টের নামে আদায়কৃত ফি ফেরত দিত হবে।
২) নামে-বেনামে ফি আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩) বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার রোডম্যাপ ঘােষণা করতে হবে।
৪) সেশনজট রােধে দ্রুত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট রােধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫) পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করতে হবে।
৬) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলােতে আবাসিক হল খুলে দিয়ে, আবাসনের ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নিতে হবে। অছাত্র-সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়ন করতে হবে।
৭) সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ করতে হবে।
৮) অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দিতে হবে।
এছাড়া লিখিত বক্তব্যে দীপক শীল বলেন, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে ছাড়াই পাঠ-কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামােগত সুবিধা না থাকা, ইন্টারনেটের মন্থরগতি, ডিভাইসের অভাবে অধিকাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমে যথাযথ আশগ্রহণ করতে পারেনি। শতভাগ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নিশ্চিত না করেই চলছে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাে টিউশন ফি শ্রাদায় করার ঘৃণ্যতমতম প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এসাইনমেন্টের নামে নেয়া হচ্ছে নামে-বেনামে ফি। তারপরেও নিশ্চিত হচ্ছে না এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। সংকটকালীন সময়ে বাতিল হয়েছে ২০২০ সালের এইচএসসি, জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষা। এইচএসসি’র শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় আছে ।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংকট ভিন্নতর। একদিকে কর্মসংস্থানের সংকট, অন্যদিকে ফুরিয়ে যাচ্ছে চাকরীর বয়সসীমা। সেশনজটের ভয়াবহ চাপকে সামাল দিতে একেবারেই প্রস্তুত নয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাই ঝুঁকি নিয়েও একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে চায়। এমতবস্থায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি, সিলেবাস পুরণ না করে, পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করলেও হল খুলে দিতে রাজি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের হলওলাে দখল করে আছে অছাত্র, সন্ত্রাসীরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা না পারছে প্রস্তুতি নিতে, না পারছে আবাসনের সংকট দূর করতে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন সুবিধা পর্যন্ত দিতে রাজি না। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এই সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন প্রদান করা প্রয়ােজন।
Discussion about this post