অনীক মাহমুদ
২০২১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীর পাদমূলে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক পরিসরে জাতির পিতার অসামান্য অবদান বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর কৈশোরকাল থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিমকাল পর্যন্ত তার শিক্ষানুরাগ ও সংস্কৃতিমনস্কতা আমাদের আলোড়িত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবৃত্ত থেকে তিনি ছাত্র রাজনীতির যাত্রাপথ সুগম করেছিলেন।
দেশ বিভাগোত্তর পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের একটি বলিষ্ঠ মাইলফলক। ভাষাভিত্তিক বাঙালিত্বের একসূত্রিক আদর্শের বীজ লুপ্ত হয়ে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ঘনীভূত হয়। সেই সময় বিশেষ করে ১৯৪৮ এর ১১ মার্চ প্রথম ভাষা-সংগ্রাম দিবস প্রতি বছর ঘটা করে পালন করা হতো। বঙ্গবন্ধু ১৯৫০ সালে বিপুল উদ্দীপনায় দিবসটি পালনের প্রাক্কালে গ্রেফতার হন। অনুরূপভাবে ১৯৫২ সালেও তিনি ফরিদপুর জেলে থেকে আমরণ অনশন করেন। কাজেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তার প্রজ্ঞায় তা উপলব্ধি করেছিলেন। ঐতিহাসিক ছয় দফার বিশ্লেষণে আফসোসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ইচ্ছা করিলে ভোটের জোরে শুধু বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করিতে পারিতাম।’ ঐতিহাসিক ছয় দফার পাশাপাশি ছাত্রদের ১১ দফার সঙ্গেও তিনি একাত্ম ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘১১ দফা দাবির ভেতরে আমাদের দলের ৬ দফাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সুতরাং ছাত্রদের ১১ দফা কায়েম করার সংগ্রামে আমরাও শরিক হব।’ এই ১১ দফার মধ্যে প্রথম দফার ১৭টি পর্যায়ে শিক্ষা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার বহুমাত্রিকতা, বেতন, চাকরি, মাধ্যম, যাতায়াত প্রভৃতি বিষয়ে দাবি উত্থাপিত হয়েছে। মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার দাবি রয়েছে। সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলা প্রচলনেরও দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ছাত্রদের ১১ দফার অনেক বিষয়ে তিনি হস্ত প্রসারিত করেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছয় দফার দাবি উত্থাপনের পরে ১৩ মার্চ আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে তা অনুমোদিত হয়। এই দফাগুলোর প্রচারণার গতি তীব্র হয়ে উঠলে দেশরক্ষা আইনে ৮ মে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ৭ জুন দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাধারণ ধর্মঘটের মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। সরকারি দমননীতি গ্রেফতারের সঙ্গে ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে বেতার ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময়ও বাংলাভাষা সংস্কারের অপপ্রয়াস চালান হয়। এসব ঘটনা তরঙ্গের কোনোটিই বঙ্গবন্ধু ভুলে যাননি। ১৯৬৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ফেরত বঙ্গবন্ধুকে যে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় সেখানে তিনি আমাদের অবিনাশী সংস্কৃতিপ্রীতির বন্ধনের কথা বলেন দৃঢ়তার সঙ্গে-
‘আমরা মীর্জা গালিব, সক্রেটিস, শেকসপিয়র, দান্তে, লেলিন, মাওসেতুং পড়ি জ্ঞান আহরণের জন্য আর দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করিয়া দিয়াছেন রবীন্দ্রনাথের লেখা যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখিয়া যিনি বিশ্ব কবি হইয়াছেন। আমরা এই ব্যবস্থা মানি না। আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়িবই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাহিবই এবং রবীন্দ্রসংগীত এদেশে গীত হইবেই।’
মা-মাটি-মাতৃভাষার স্বাদেশিক চেতনা বঙ্গবন্ধু কখনো ম্রিয়মাণ হতে দেননি। ১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুর্বাণীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তার বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের অনমনীয় মনোভাব প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন-
‘শিল্পী, সাহিত্যিক এবং কবিদের জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই প্রতিফলিত করতে হবে। তারা তাদের মানুষ, তাদের মাতৃভূমি ও সংস্কৃতির জন্য শিল্পচর্চা করবেন।… রাজনৈতিক ক্ষমতা না পেলে সংস্কৃতিকে গড়ে তোলা যায় না। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না বলেই বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ হয়নি।’
এই বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থা, রেডিও, টেলিভিশনের প্রসঙ্গ তুলে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টির সমালোচনা করেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘জনগণ তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত সহ্য করবে না। বাংলাভাষার বিরুদ্ধে যেসব বাঙালিবিরোধী সরকারি সমর্থন পেয়েছেন তাদের দিন আজ শেষ।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আগে সংগ্রামের নানা পর্যায়ে বাঙালির শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক সংবর্ধনার আয়োজন করে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত শিল্পী সমাজ। এখানকার মানপত্রে শিল্পী আবদুল আহাদ বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গসংস্কৃতির অগ্রদূত’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন। এখানকার বক্তৃতাতেও বঙ্গবন্ধু গণমুখী সংস্কৃতি বিকাশের ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন। স্বীকার করেন ‘সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন’। এখানে তিনি তার দলের ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের প্রসঙ্গ তুলে মন্তব্য করেন-
‘আমি আশ্বাস দিচ্ছি যদি আমরা ৬ ও ১১ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন লাভে সক্ষম হই, তাহলে শিল্পী ও সাহিত্যিকরা সবকিছুই পাবেন। সবকিছুই হবে তাদের। ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসনের অর্থই হচ্ছে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক স্বাধিকার। জয় বাংলা স্লোগানের লক্ষ্য এই সামগ্রিক স্বাধিকার অর্জন। জনগণের সরকার কায়েম হলে বাংলার মাটিতে জাতীয় সংগীত প্রতিষ্ঠা ও একটি জাতীয় ‘ললিতকলা একাডেমি’ গঠন করতে হবে।’
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ বাংলা একাডেমির ভাষা আন্দোলনের স্মরণ সপ্তাহের অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সব সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই স্বল্প সময়ের পরিসরে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে স্বাভাবিক স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবেশের সামগ্রিক বাতাবরণে প্রতিষ্ঠা দান করার একান্ত সোৎসাহ জাতির পিতার মধ্যে সক্রিয় ছিল। ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করে ১৩ জানুয়ারির মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভাতেই জাতীয় সংগীত হিসাবে ‘আমার সোনার বাংলা’, রণসংগীত হিসাবে কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’কে নির্ধারণ করা হয়। আমাদের এতদিনের প্রাণের দাবি বাঙালির নিজস্ব উত্তরাধিকারের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য কর্মে ও কথায় স্থান পাবে। সংবিধান, প্রশাসনিক নীতি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, দালাল আইন, পুনর্বাসন, কৃষিসংস্কার, জাতীয়করণ প্রভৃতির সঙ্গে শিক্ষা সংস্কৃতির বিষয়টি তিনি মনোযোগ সহকারে সম্পাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শাসনভার গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যেই তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন দেড় বছরের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৭৪ সালের ৩০ মে কমিশন সরকারের কাছে রিপোর্ট দাখিল করে। এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের সুযোগ না পেলেও দায়িত্ব গ্রহণের পরেই শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সব ছাত্রবেতন মওকুফ করেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন। তার সরকার ৯০০ কলেজ ভবন এবং ৪০০ হাইস্কুল ভবন পুনঃনির্মাণ করে। সারা দেশে ১১০০০ নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাস অবধি ৩৬১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। এতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৩ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিও সরকারি হয়। ১৯৭৩ সালের জুলাই থেকে এটি কার্যকর হয়। জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাশ করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন। চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্ত জ্ঞানচর্চার সোপান তৈরিই ছিল অধ্যাদেশ পাশের উদ্দেশ্য। ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তির ঘোষণায় বাংলাভাষাকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম করা হয়। অফিস, আদালত, সেনাবাহিনীর অফিস, সব ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার শুরু হয়। বাংলা একাডেমিকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু নিজেও জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা করেন। গণশিক্ষা প্রচলনেও বঙ্গবন্ধু সরকার যথার্থ ভূমিকা পালন করে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়। শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ন্যাশনাল আর্কাইভস অব বাংলাদেশ স্থাপন করা হয় গবেষণার উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য ১৯৭২ সালের নভেম্বরে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায়ের দুর্গতির মধ্যে খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছিল ১১ দফার অঙ্গীকারের প্রাসঙ্গিকতায়। তার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছাত্রদের ভূমিকা ও সাহচর্য ছিল অনন্য। বঙ্গবন্ধু ওয়াদা পালনের ক্ষেত্রে নীতিনিষ্ঠ ছিলেন। ড. মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের সুযোগ পেলে তার শিক্ষানুরাগের বিশিষ্টতা আরও পূর্ণতা পেত।
দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ সাধনেও বঙ্গবন্ধু যথার্থ পদক্ষেপ নেন। জাতীয় সংগীত এবং রণসংগীত যুক্ত করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি রেসকোর্স ময়দানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে ঢাকায় আনেন। ১৯৭৪ সালের মধ্যে ৯টি দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন করেন। ১৯৭৫ সালের ৬ মার্চ উদ্বোধন করেন রামপুরার টেলিভিশন ভবন। ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুস্থ সংস্কৃতিসেবীদের কল্যাণসাধনে বঙ্গবন্ধু সংস্কৃতিসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে চির জাগরূক করে রাখার জন্য ১৯৭২ সালের ৯ মার্চ সাভার ও মেহেরপুরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। ২২ ডিসেম্বর ১৯৭২ মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের স্বল্পপরিসরের শাসনামলে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন বাঙালি জাতির শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিশীলনে সেটি ছিল তার প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক দর্শনেরই একটি অনাবিল দৃষ্টিলোক।
এ বছর আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ পছর পূর্ণ হচ্ছে। এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবৃত্তে যতটা পরিবর্তনের হাওয়া লাগা উচিত ছিলো তা লাগেনি। নানা সময়ের নানা পরিকল্পনা সংকর ফলাফলের উদগম ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে প্রাথমিক পর্যায়ের হাজার হাজার স্কুলের সরকারিকরণ করেন। আমরা হাইস্কুল ও কলেজ শিক্ষাকে সরকারিকরণে নিয়ে যেতে পারতাম। জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তর করতে পারতাম। কিন্তু পারিনি। আমাদের ব্যক্তি স্বার্থের চরিতার্থতার দৌড় যত বেগবান ছিল সামষ্টিক চিন্তা ততটাই ছিল বেহাল। জীবনমুখী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রণোদনায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আশায় বসতি। বর্তমান যুগ সভ্যতার নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা রুখে দিতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথের আলো আমাদের কান্ডারি হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী উক্তি : ‘আমাদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যেই এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি নিহিত আছে।’
লেখক : কবি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
Discussion about this post