শিক্ষার আলো ডেস্ক
নিয়ম না থাকার পরেও প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের আয়কর পরিশোধ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অডিটে আপত্তি দিয়েছে হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের ওই আর্থিক অনিয়মের জন্য এক কোটি ৭০ লাখ তিন হাজার ৭৮১ টাকার অডিট আপত্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব কমিটির বৈঠকে ক্ষতির টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়।এই অডিট আপত্তিসহ আরও ছয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
মোট সাতটি অডিট আপত্তির নথি থেকে দেখা গেছে, এর সঙ্গে সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ সাত কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ টাকা।কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ওই অর্থবছরে এই আয়কর পরিশোধ করায় অডিট দফতর থেকে বলা হয়েছে, ‘বিধিগত সুযোগ না থাকার পরেও এমন আয়কর পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন লঙ্ঘন এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, ‘অডিট আপত্তিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। কমিটি জড়িত অর্থ আদায়ে সময় বেঁধে দিয়েছে এবং কয়েকটি আপত্তি নিষ্পত্তি করতে কমিটি গঠন করতে বলেছে।’
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, আয়কর পরিশোধ বাবদ সরকারি অর্থের ক্ষতি মেটানোর জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে বেতন-ভাতা থেকে টাকা কেটে নিতে বলেছে হিসাব কমিটি।
এদিকে বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের বাসায় বসবাস করা সত্ত্বেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হার অপেক্ষা কমহারে বাসা ভাড়া কর্তন করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, এক কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ টাকা। কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি, গণপূর্তের যুগ্মসচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অর্থবিভাগের যুগ্মসচিব ও অডিট দফতরের একজন পরিচালককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলেছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেবে সরকারি হিসাব কমিটি।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে এক কোটি ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৬ টাকা বিনোদন ভাতা দেয়। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই ভাতা বাতিল করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এ জন্য আর্থিক ক্ষতি ভাতাপ্রাপ্তদে কাছ থেকে আদায় করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
বিভিন্ন স্থাপনার ভাড়া, পরিশোধিত বিল এবকং মুদ্রণ বিলের ওপর ভ্যাট আদায় না করায় এবং আদায় করেও তা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় ৫১ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৩ টাকা আর্থিক ক্ষতির আপত্তি দিয়েছে অটিড দফতর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চার মাসের মধ্যে এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০২৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষককে ঢালাওভাবে ৫০০ ও ৭৫০ টাকা করে প্রতি মাসে গবেষণা ভাতা দেয়। গবেষণা ভাতা নামে জাতীয় বেতনস্কেলে এরকম কোনও খাত না থাকায় এ বিষয়ে আপত্তি দেয় অডিট দফতর। এতে মোট এক কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা জড়িত। এ বিষয়ে অডিট দফতর বলেছে, যারা গবেষণা করছেন, তাদের নীতিমালার মাধ্যমে এই ভাতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই।
সরকারি হিসাব কমিটি এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে বিধিবহির্ভূতভাবে দেওয়া অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে।
এদিকে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের হিসাব পরীক্ষা করে অডিট দফতর পেয়েছে যে, ১৪ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে দেশে ফেরত আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলেও পাওনা টাকা আদায় করেনি। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা। এই টাকা দ্রুত আদায়ের সুপারিশ করেছে কমিটি।
এদিকে ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পেশাগত জ্ঞানের বিপরীতে এবং ঠিকাদারি বিল হতে উৎসে আয়কর না কাটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে বলে অডিট আপত্তি দিয়েছে অডিট দফতর। এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৮০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ টাকা। কমিটি এই টাকা দ্রুত আদায় করার সুপারিশ করেছে।
কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুস শহীদ, আফছারুল আমীন, শহীদুজ্জামান সরকার, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), ওয়াসিকা আয়শা খান এবং জাহিদুর রহমান অংশ নেন।বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post