নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবার ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে এসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই নতুন পথে হাঁটছেন বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
তাই এক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছে এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ’র ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী ভর্তি। যদিও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন সেমিস্টারে ভর্তি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘ভর্তি প্রক্রিয়া’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা যথাযথভাবে সম্পন্ন না হলে প্রকৃত মেধাবীরা ভালো বিষয়ে ভর্তি হওয়া থেকে যেমন বঞ্চিত হন, তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ ভর্তি নীতিমালা মানছে না, তাই বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিন্ন নীতিমালা তৈরি এখন সময়ের দাবি হলেও এটি করতে সময় লাগবে। তারপরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। খুব শিগগিরই ইউজিসির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা জানান তিনি।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), বাড্ডায় অবস্থিত ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), তেজগাঁওয়ের আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ধানন্ডির ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই এসএসসি এবং এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ’র ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ব্রাক ইউনিভার্সিটি, ধানমন্ডির ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আফতাব নগরে অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। যদিও এই ভার্চুয়াল মাধ্যমে কতটা যাচাই করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তারা সরকারের গাইডলাইনের অপেক্ষা করছেন।
জানতে চাইলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময়ই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেই। তবে করোনার কারণে এবার ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারছি না। কেননা ক্যাম্পাস খোলার বিধি-নিষেধ রয়েছে। আশা করছি. আগামী সেমিস্টার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারব। ভর্তি আবেদনের সময় শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা আসলে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিজেদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকি। এমনকি করোনা মহামারী চলাকালীনও আমরা পরীক্ষা নিচ্ছি। তবে সেটি অনলাইনে। সেখানে ভর্তিচ্ছুদের মৌখিক প্রশ্ন করা হচ্ছে। যাদের যোগ্য মনে হচ্ছে তাদের আমরা ভর্তি নিচ্ছি।
এদিকে শিক্ষার্থী সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ভর্তি নিচ্ছে। প্রথম ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভর্তি সুযোগ দিচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে মৌখিক পরীক্ষা এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি সংস্থা ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি অভিন্ন নীতিমালা তৈরি হোক সেটি তারাও চান। তবে নানা কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে। ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, জনবল সংকট এর মধ্যে অন্যতম। তবে শিগগিরই শিক্ষার্থী ভর্তির অভিন্ন নীতিমালা তৈরির বিষয়ে ইউজিসি পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ইউজিসির সর্বশেষ (৪৬তম) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৭ টি। তবে এদের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৯৫টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক (পাস) এবং স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে মোট আসন সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৭টি।
Discussion about this post